টমাস আলভা এডিসন
সর্বকালের সর্বদেশের প্রযুক্তিগত বিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কারক বলে যে বিজ্ঞানী সম্মান অর্জন করেছেন তিনি হলেন টমাস আলভা এডিসন। এই বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত পেটেন্টের সংখ্যা এক হাজারেরও বেশী। কোনও বিজ্ঞানী কোনও নতুন কিছু আবিষ্কার করলে তিনি সেই আবিষ্কারের জন্য যে স্বীকৃতিপত্র লাভ করেন সেটাই হল পেটেন্ট। মানবকল্যাণের নানান যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের জন্য টমাস আলভা এডিসন অমর হয়ে আছেন।
টমাস আলভা এডিসন ১৮৪৭ সালের ১১ ই ফেব্রুয়ারী আমেরিকার মিলানের ওহিয়ো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ভাবতে আশ্চর্য লাগে যে এই বিজ্ঞানী তার বাল্যকালে তেমনভাবে প্রথাগত প্রচলিত শিক্ষালাভ করেননি। বাল্যকালে এডিসন শারীরিকভাবে খুব দুর্বল ছিলেন এবং মাঝেমধ্যেই নানা রোগে ভুগতেন। এইসব কারণে তার স্কুলও কামাই হত বেশী এবং পড়াশোনাতেও ব্যাঘাত ঘটত। এইসব কারণের জন্য এডিসন যে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল সেখান থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হল। সেজন্য বাধ্য হয়ে বালক এডিসন মায়ের কাছে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে লাগল। এডিসনের মায়ের নাম ছিল ন্যান্সি এবং বাবার নাম ছিল স্যামুয়েল। টমাস আলভা এডিসন আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করলেও তারা আমেরিকার আদি বাসিন্দা ছিলেন না। এডিসনের পূর্বপুরুষরা ইউরোপের হল্যান্ড দেশে বাস করতেন এবং তাঁরা জীবিকার তাগিদে ইউরোপ মহাদেশ ছেড়ে আমেরিকায় বসবাস শুরু করেন। স্যামুয়েল এডিসনের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না—কাঠ ও টালির ব্যবসা ছিল তাঁর। স্যামুয়েল এডিসন সারাক্ষণ নিজের ব্যবসাতেই ব্যস্ত থাকতেন বলে ছেলের লেখাপড়ার ব্যাপারে তিনি খুব একটা সময় দিতে পারতেন না।
ঘটনায় এডিসনের রসায়নচর্চায় সাময়িক ছেদ পড়লেও সে কিন্তু হতোদ্যম হল না। এই ঘটনার পর এডিসনের বাবা-মা এডিসনের জন্য তাদের নিজের বাড়ীতে ল্যাবরেটরী করতে অনুমতি ও উৎসাহ দিল। এডিসনের বাড়ীতেই তৈরি হল রসায়নচর্চার জন্য নতুন ল্যাবরেটরী। এবার সে ওই ল্যাবরেটরীতে পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে লাগল অর্থাৎ রসায়নের পরীক্ষা নিরীক্ষা হাতে কলমে করতে শুরু করল। এর ফলে ব্যবহারিক বিজ্ঞানের প্রতি তার প্রবল আগ্রহর সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয়, কিছুদিনের মধ্যেই এডিসন ‘উইকলি হেরাল্ড” নামে একটি সাপ্তাহিক প্রত্রিকাও প্রকাশ করেন। টমাস আলভা এডিসনের এইসব কর্মময় ঘটনার মধ্যেই এক অভাবনীয় সুযোগের মাধ্যমে টেলিগ্রাফী শেখার সুযোগ হয়। সেই আমলে গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রেলপথের মধ্যে মাউন্ট ক্লীমেন্স নামে একটা ছোট স্টেশন ছিল এবং সেই স্টেশনের স্টেশন মাস্টার ছিলেন ম্যাকেঞ্জি সাহেব। এই ম্যাকেঞ্জি সাহেবের মেয়েকে এডিসন একদিন রেল লাইনের ওপর থেকে সাক্ষাত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন। মেয়ের প্রাণ বাঁচানোর ঘটনায় খুশী হয়ে কৃতজ্ঞ বাবা এডিসনকে টেলিগ্রাফী শেখাতে রাজী হন। কিছুদিনের মধ্যেই এডিসন টেলিগ্রাফী শিক্ষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন এবং অল্প দিনের মধ্যেই ম্যাকেঞ্জি সাহেবের সুপারিশে এডিসন সেই গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রেলপথে একটি চাকরিও পেয়ে গেলেন। চাকরী পাওয়ার ফলে এডিসনের আর্থিক সমস্যা দূর হয়ে গেল। এরপর এডিসনের জীবনে শুরু হল একের পর এক আবিষ্কারের পালা। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি এডিসন টেলিগ্রাফীর দ্বিত্ব পদ্ধতি এবং ‘স্টকটিকার’ নামে যন্ত্র আবিষ্কার করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারগুলি হল—টেলিফোনের কার্বন ট্রানসমিটার আবিস্কার, গ্রামাফোন যন্ত্র আবিষ্কার, ইনক্যানডেসেন্ট ল্যাপ বা ইলেকট্রিক বাল্ব আবিষ্কার-বিভিন্ন রকম বৈদ্যুতিক পাওয়ার কেবল আবিষ্কার, ইলেকট্রিক মিটার আবিষ্কার ইত্যাদি। এছাড়া টমাস আলভা এডিসন তড়িৎ প্রবাহ সম্পর্কিত এক তত্ত্ব আবিষ্কার করেন যা ‘এডিসন এফেক্ট' নামে পরিচিত। বর্তমানের অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন এডিসন -এফেক্ট আবিষ্কারের ফলেই-পরবর্তীকালে ডায়োড ভাল্ব আবিষ্কারের পথ
সুগম হয়েছে।
১৯৩১ খ্রীস্টাব্দে এই বিশ্বকর্মা বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়।
0 Comments