কার্ল ফ্রেডরিক গাউস

কার্ল ফ্রেডরিক গাউস





গণিতশাস্ত্রকে ‘বিজ্ঞানের রাণী' নামে অভিহিত করা হয় ৷ পদার্থ বিজ্ঞান রসায়ন বিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণা করতে গেলে প্রতি পদে পদে গণিত দরকার। বিশেষ করে পদার্থ বিজ্ঞান চর্চার প্রতি পদক্ষেপেই গণিত বিষয়টিকে দরকার। পৃথিবীর সর্বকালের সেরা গণিতত্ত্বদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কার্ল ফ্রেডরিক গাউস। অনেকের মতে গাউস ছিলেন আর্কিমিডিসের মতন সমান প্রতিভাবান। কার্ল ফ্রেডরিক গাউস ১৭৭৭ খ্রীস্টাব্দের ৩০শে এপ্রিল জার্মানীর ব্রানসউইকে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন রাজমিস্ত্রী এবং ব্রানসউইকের এক বণিকের সহকারী। ছোটবেলা থেকেই গাউসের অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। মাত্র তিন বছর বয়সের মধ্যেই গাউস নিজে নিজেই পড়তে ও গণনা করতে শেখেন। ওই অল্প বয়সেই তিনি মনে মনে পাটিগণিতের নানা গণনা করতে পারতেন এবং সেই ছোট্ট বালক গাউস একবার ওই বয়সেই বাবার বেতন বিষয়ক হিসেবের একটা ভুল ধরেন। প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময়েই বালক গাউসের অঙ্কের সব শাখাতেই পারদর্শিতা লক্ষ করা যায়। পাটিগণিতের শ্রেণী ও যোগফল বিষয়ক সব গণনাই সে অতি অল্প সময়েই করে দিত। ১৭৮৭ খ্রীস্টাব্দে বালক গাউসের বয়স যখন মাত্র দশ বছর বয়স, তখন স্কুলের এক পরিদর্শক একবার ক্লাসের সমস্ত ছেলেকে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সমস্ত সংখ্যাগুলোর যোগফল নির্ণয় করে দিয়েছিলেন। গণনাটি কিন্তু সহজ ছিল না। গাউস কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই মনে মনে ওই গণনাটি করে ফেললেন এবং উত্তরটি বলে দিলেন। এই দেখে উপস্থিত সবাই বিস্মিত হয়ে যান। ওই প্রশ্নের উত্তরটি ছিল ৫০৫০। সেদিনকার সেই ছোট্ট ঘটনাতেই বোঝা গিয়েছিল যে ভবিষ্যতে কার্ল ফ্রেডরিক গাউস একজন বিখ্যাত গণিতবিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করবেন।

প্রায় ৩০০ খ্রীস্ট পূর্বাব্দে গ্রীক গণিতবিদ জ্যামিতি বিষয়ক অনেক উপপাদ্য আবিষ্কার করেন। ইউক্লিড এ বিষয়ে একটি গ্রন্থও রচনা করেন গ্রন্থটির নাম—“এলিমেন্টস অফ জিওমেট্রি”। গাউস বারো বছর বয়সেই ইউক্লিডের জ্যামিতির অনেক বিষয় পাঠ করেন এবং কিছু কিছু ব্যাপারে ইউক্লিডীয় জ্যামিতির সমালোচনাও করেন। সেই সময়েই ইউক্লিডীয় জ্যামিতির বাইরে অন্য জ্যামিতি থাকার সম্ভাবনার ব্যাপারেও গাউস ভাবনাচিন্তা শুরু করেন এবং সেগুলি তিনি তার গণিত শিক্ষককে জানান। ছাত্র গাউসের গণিত প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে ব্রানসউইকের ডিউক মুগ্ধ গাউসকে এক বৃত্তি প্রদান করেন। গাউস মাত্র পনের বছর বয়সে গণিতের অন্যতম কঠিন বিষয় দ্বিপদ উপপাদ্য প্রমাণ করেন। আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য না থাকায় গাউসের বাবা চাননি যে গাউস কলেজে উচ্চশিক্ষার জন্য পড়াশোনা চালিয়ে যাক—তিনি চাইছিলেন যে গাউস কলেজে ভর্তি না হয়ে শ্রমিক হয়ে অর্থ উপার্জন করুক এবং পরিবারকে সাহায্য করুক। কিন্তু গাউসের মা গাউসকে সবসময়ই লেখাপড়ার ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন।

ছাত্র অবস্থাতেই তিনি একটি সুষম সপ্তদশভুজ অঙ্কন করেন। তিনি এই অঙ্কনের কথা তাঁর এক গণিত শিক্ষককে বললে তিনি তা বিশ্বাস করতে চাননি। কিন্তু ছাত্র গাউস সেই শিক্ষকের সামনে পুনরায় ওই অঙ্কনটি করেন। পরবর্তীকালে তিনি নানান ধরণের সুষম বহুভুজ নির্মাণের জ্যামিতিক পদ্ধতিও আবিষ্কার করেন। গণিতের বিভিন্ন শাখার বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আবিষ্কার করে তিনি অমর হয়ে আছেন। বীজগণিতের বিভিন্ন শ্রেণী, সংখ্যা বিষয়ক নানান তত্ত্বও সমীকরণ, “থিয়োরী অফ এররস”, সম্ভাবনা ও পরিসংখ্যান বিষয়েও গবেষণা করেন। বিজ্ঞানের তড়িৎ ও চুম্বক শাখাতেও তিনি নানান আবিষ্কার করেন—এই তল “গাউসিয়ান তল” নামে পরিচিত।

১৭৯৮ খ্রীস্টাব্দে তিনি গোটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট হন এবং পরবর্তীকালে ডক্টরেট ডিগ্রীও লাভ করেন। তিনি শুধু একজন বিখ্যাত গণিতবিদই ছিলেন না, তিনি নানান ভাষাও জানতেন। ১৮৩৩ খ্রীস্টাব্দে তিনি মাঝে বালক লুইকে কোনও সুদৃশ্য বাগানে বা নদীর ধারে নিয়ে যেতেন ছবি _আঁকানোর জন্য। ছেলেবেলায় লুই পাস্তুরের আঁকা বিভিন্ন ছবি আজও সযত্নে রাখা আছে প্যারিসের ‘পাস্তুর ইনস্টিটিউটে'। বালক লুইয়ের আঁকা সেইসব ছবি দেখে অনেক বিখ্যাত শিল্পীই মনে করেন যে লুই পাস্তুর যদি বিজ্ঞানী না হয়ে শিল্পকলারই চর্চা করতেন তাহলে তিনি হয়তো বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী হতেন। এইসব কারণে লুই পাস্তুরের প্রথমদিকে বিজ্ঞান পাঠের প্রতি আগ্রহ ছিল না। তবে লুই পাস্তুরের বয়স যখন মাত্র ন বছর তখন এক ছোট্ট ঘটনা তার জীবনে দারুণ প্রভাব বিস্তার করেছিল। অ্যারবোরিশ শহরের একজন গরীব লোককে একদিন এক পাগলা কুকুরে কামড়ে দিলে কয়েকজন মিলে সেই রোগীকে নিয়ে হাজির হয় এক কামারশালায়। রোগীর ওই ক্ষতস্থানের জীবাণু ধ্বংস করার জন্য তারা কামারশালার এক উত্তপ্ত লোহাকে ওই রোগীর ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেন। এই উত্তপ্ত লোহার ছোঁয়া পেতেই চীৎকার করে উঠে সেই রোগী। সেইসময় বালক লুই পাস্তুর কোনও কারণে উপস্থিত ছিল ওই কামারশালায়। এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে কামারশালা থেকে ভয়ে পালিয়ে এলেন লুই। সেই সময় সমগ্র ফ্রান্সে এইভাবে কুকুরে কামড়ানোর চিকিৎসা পদ্ধতি চালু ছিল। পাগলা কুকুর, শেয়াল বা নেকড়ে বাঘে কামড়ালে জলাতঙ্ক রোগ হত এবং এই জলাতঙ্ক রোগে প্রতি বছর সমগ্র পৃথিবীতে বহু লোক মারাও যেত। এই মৃত্যুকে লোকে ভগবানের অভিশাপ বলে মেনে নিত আবার ফ্রান্স দেশের কিছু কিছু লোক কুকুরে কামড়ে দিলে সেই ক্ষতস্থানে কামারশালার উত্তপ্ত লোহা দিয়ে ছ্যাঁকা দিয়ে দিত—তাঁদের বিশ্বাস ছিল এতে বুঝি কুকুর কামড়ানোর ভয়াবহ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটত না। সেদিনকার সেই ভয়াবহ দৃশ্য বালক লুই পস্তুরের মনে গভীর রেখাপাত করেছিল। 



Post a Comment

0 Comments