কণিকের কূটনীতি

কণিকের কূটনীতি


এ গল্পের বিষয়বস্তু রাজ্য-প্রশাসন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু পথ-নির্দেশিকায় সমৃদ্ধ। সেই কবে কোন সুদূর পৌরানিক কালে একজন মহামন্ত্রী পরামর্শ হিসাবে তাঁর সম্রাট বা নৃপতিকে যে কথাগুলি বলেছিলেন; সেগুলির গুরুত্ব এবং তাৎপর্য আজ একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক যুগে সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। যে কোন রাজার মূল কাজটি হলো নিয়ন্ত্রণ। সেই নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে, বিভিন্নভাবে কায়েম করা হয়। শত্রুকে পরাজিত করাও একপ্রকার নিয়ন্ত্রণ যা, বিজয়ীকে দেয় আত্মবিশ্বাস এবং সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীর মনে ধরায় ভয়। এভাবেই একজন রাজা তাঁর সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে সফল হন। আলোচ্য গল্পে কণিক কূটনীতি সংক্রান্ত যে পরামর্শগুলি রাজা ধৃতরাষ্ট্রকে দিয়েছিলেন সেগুলি একইভাবে মূল্যবান পথ নির্দেশিকা হিসাবে প্রশাসনের সকল স্তরের আধিকারিকদের কাছে আজও গ্রহণীয়। অনুসরণযোগ্য।

রাজা দ্রুপদকে পরাজিত করার একবছর পর ধৃতরাষ্ট্র পাণ্ডুনন্দন যুধিষ্ঠিরকে যুবরাজ পদে বসিয়েছেন। যুধিষ্ঠিরের ধৈর্য্য, স্থৈর্য্য, সহনশীলতা, বিনয়, দয়া, সকলকে সমান চোখে দেখা, দ্বেব-দ্বিজে ভক্তি প্রভৃতি গুণে তাঁর প্রশংসা ও জয়গানে সকলে ছিলেন মুখর। তিনি তাঁর সদাচার ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে প্রজাদের মনে এমন ভাবে দাগ কেটেছিলেন যে, প্রজারা তাঁদের অশেষ গুণসম্পন্ন পূর্ব-নৃপতিদেরও তখন ভুলতে বসেছিল।

ওদিকে ভীমসেন শ্রীকৃষ্ণের দাদা বলরামের কাছে খড়্গা, গদা ও রথযুদ্ধ শিক্ষা নিলেন খুব সফলভাবে। তিনি শিক্ষালাভ শেষে বাড়ি ফিরে এলে সকলের মধ্যে একটা তৃপ্তির অনুভূতি তৈরি হলো। তবে মাধ্যম পাণ্ডব অর্জুনের বিশেষ কিছু নিজস্ব দক্ষতা ও অস্ত্র চালনাতে পারদর্শিতা সকলকে এই বিশ্বাস ছিল যে, অর্জুনের সমকক্ষ যোদ্ধা কেউ নেই বা অর্জুন সর্বশ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর। অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য কৌরবদের সভায় অর্জুনকে বললেন- “অর্জুন! আমি মহর্ষি অগস্ত্যের শিষ্য। আমার সকল অঙ্গবিদ্যা তোমাকে দিয়েছি। সেগুলির প্রয়োগ-বিধিও তোমাকে শিখিয়ে দিয়েছি। তুমি এবার

সকল গুরুজন ও তোমার ভাইদের সামনে আমাকে গুরুদক্ষিণা দাও। আমার ইচ্ছা এই যে, যুদ্ধে যদি আমি কখনো তোমার সম্মুখীন হই, তাহলে তুমি লড়াই করতে কখনো

ইতস্তত করবে না।”

অর্জুন তখন গুরুদেবের চরণ স্পর্শ করে বাম দিক দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। তখন চারদিকে রাষ্ট্র হয়ে গেল যে, অর্জুনের সমকক্ষ ধনুর্ধর আর কেউ নেই। ভীম ও অর্জুনের মতো সহদেবও বৃহস্পতির কাছ থেকে নীতিশাস্ত্রের শিক্ষা লাভ করে সকলের মুখ নিপুণ। উজ্জ্বল করেছিলেন। কনিষ্ঠ পাণ্ডব নকুল ছিলেন যুদ্ধকুশলী, বিনয়ী এবং রথচালনায়

ঐ সময় সৌবির দেশের রাজা দত্তমিত্র যিনি গন্ধর্বদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ করেছিলেন; স্বয়ং পাণ্ডুও যাঁকে যুদ্ধে পরাজিত করতে পারেননি, অর্জুন তাঁকে পরাজিত করলেন। অন্যদিকে ভীম ও অর্জুন যৌথভাবে প্রতিবেশী রাজ্যগুলির বেশ কিছু অংশ জয় করে রাজ্যের সীমানা বাড়ালেন। দেশে দেশে তখন শুধুই পাণ্ডুপুত্রদের খ্যাতি যা, কৌরবদের ঈর্ষান্বিত করে তুলল।

এইসব শুনে ধৃতরাষ্ট্র তাঁর শ্রেষ্ঠ রাজনীতি বিষয়ক পরামর্শদাতা কণিককে ডেকে বললেন— “কণিক! পাণ্ডবরা দিনে দিনে বড় হচ্ছে। শক্তিশালী হচ্ছে। এতে আমার মনে এক দুঃসহ জ্বালা তৈরি হয়েছে। তুমি আমায় বলো, আমার এখন ঠিক কি করা উচিত। যুদ্ধ না সন্ধি ? কি করলে পাণ্ডবদের এই অগ্রগমন রোধ করা যাবে ?”

কণিক বললেন— “হে নৃপবর! যদি অভয় দেন তাহলে আমি আমার কথা বলি। রাজাকে দণ্ড দেওয়ার জন্য সব সময় সচেষ্ট থাকতে হয়। তা করার জন্য দৈববল নয়, নিজের ক্ষমতা ও বীরত্বের ওপর ভরসা করতে হয়। রাজার মনে যাই থাকুক না কেন, কোন অবস্থাতেই নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করতে নেই। বরং রাজাকে ধৈর্য্য ধরে অন্যের দুর্বলতা জানতে হয়। শত্রুর অনিষ্ট করার কাজ শুরু করলে তা শেষ না করে বিশ্রাম নিতে নেই। কারণ সামান্য কাঁটার টুকরো থেকে গেলে তা যেমন পরে অনেক কষ্ট দিতে পারে, তেমনি শত্রুকে সামান্য ভেবে শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দিলে সেই শত্রু পরে অনেক বেশি ক্ষতি করতে পারে। বিপদ বা সঙ্কটকালে হয় ঘোর যুদ্ধ করে শত্রু জয়; না হয় পশ্চাদপসরণ- যেটি বেশি সুবিধানজক— তাই করা উচিত।

পরিস্থিতি অনুসারে অনেক সময় শত্রুর অত্যাচারকে মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। তীরধনুক ত্যাগ করে হরিণের ন্যায় সাবধানী হয়ে আত্মরক্ষা করতে হয়। অবশ্য পরে পরিস্থিতি অনুকূল হলে শত্রুকে সমূলে উৎপাটন করাই যুদ্ধের একটি বিশেষ নীতি ।


চালালেন। ভাগীরথীকে মর্ত্যে আনানোর যথাসাধ্য প্রয়াস করলেন। কিন্তু কোনভাবেই সফল হলেন না। এভাবে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে দিলীপের ভগীরথ নামে একটি সন্তান জন্মালো। ভগীরথ ছিলেন সত্যবাদী, সদাচারী ও ধর্মপরায়ণ। দিলীপ তাঁকে রাজ্যে অভিষিক্ত করে অরণ্যে চলে গেলেন। সেখানে দীর্ঘ তপস্যায় সিদ্ধ হয়ে ঈশ্বরের কৃপায় সুরলোক লাভ করলেন।

লোমশ বললেন— “মহারাজ! রাজা ভগীরথ লোকমুখে শুনেছিলেন যে তাঁর পূর্বপুরুষেরা কপিল মুনির অভিশাপে স্বর্গলাভ করতে পারেন নি। এই ঘটনায় তিনি খুবই দুঃখ পেয়েছিলেন। তাই অযথা দেরি না করে তাদের উদ্ধারের আশায় তাঁর মন্ত্রীর হাতে রাজ্যভার তুলে দিয়ে তিনি হিমাচলে চলে যান। সেখানে পাপবিনাশিনী গঙ্গার তপস্যায় মগ্ন হন। হিমাচলের দেবলোকের মত শান্ত, স্নিগ্ধ, মনোরম পরিবেশে তিনি এক হাজার বছর ধরে কঠোর সাধনায় মগ্ন ছিলেন। তাঁর সাধনা এতটাই কঠোর ছিল যে, সাধনাকালে তিনি শুধুমাত্র ফল, মূল এবং জল পান করে জীবন ধারণ করেছিলেন। যাইহোক, দীর্ঘ অপেক্ষার অবসানে দেবী গঙ্গা একদিন ভগীরথের সম্মুখে আবির্ভূতা হয়ে বললেন- “হে নৃপোত্তম। তুমি কি বর প্রার্থনা কর ?”

রাজা ভগীরথ বললেন- “হে বরণে। সগর রাজার ঘাট হাজার পুত্র যজ্ঞের ঘোড়া খুঁজতে গিয়ে কপিল মুনির অভিশাপে ভস্মীভূত হয়েছিলেন। তাঁদের অকাল মৃত্যু হওয়ায় তাঁদের আত্মার সদ্‌গতি হয়নি। হে মহানদী। আপনার করুণাধারা তারা যতদিন না পাচ্ছেন ততদিন তাদের সদ্‌গতি সম্ভব হচ্ছে না। হে দেবী। আমি সেই পূর্ব পিতামহাদের সদ্‌গতি লাভের জন্য ধরণীতে আপনার শুভাগমন প্রার্থনা করছি।”

সকলের প্রণম্য দেবী গঙ্গা ভগীরথের প্রার্থনা শুনে অত্যন্ত খুশি হয়ে বললেন- “হে রাজা! আমি তোমার মনোবাস্থা অবশ্যই পূর্ণ করবো। কিন্তু আমি যখন স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে আছড়ে পড়বো তখন আমার বেগ বা আঘাত অসহনীয় হবে। ত্রিলোকে দেবাদিদেব মহাদেব ছাড়া এমন কেউ নেই যিনি আমার ঐ আঘাত সহ্য করতে পারবেন। তাই তোমাকে আমার পরামর্শ হলো এই যে, তুমি দেব শঙ্করের তপস্যা করে তাকে তুষ্ট করো; যাতে আমার পতন সময়ের আঘাত তিনি তাঁর মাথায় ধারণ করেন। মর্ত্যে আমার অবতরণ সম্ভব করেন। আমি জানি, তুমি এক মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এই কাজে ব্রতী হয়েছ। তাই আমার বিশ্বাস শম্ভুনাথ তোমার প্রতি প্রসন্ন হবেন।”

লোমশ আবার বললেন- “মহারাজ! ভগবান শঙ্কর ভগীরথের বিনম্র প্রার্থনা শুনে তাতে সম্মতি জানালেন এবং বললেন- “হে মহাভাগ: আমি তোমার প্রার্থনা শুনে স্বর্গ থেকে নেমে আসা পতিতপাবনী গঙ্গাকে ধারণ করবো।” –এই বলে ভগবান ভূতপতি হিমাচলে গমন করলেন। তারপর ভগীরথকে বললেন- “হে মহাবাহো! তুমি দেবনদী গঙ্গাকে স্বর্গ থেকে নেমে আসতে বলো, আমি তাকে ধারণ করে নিতে তৈরি।”

দেবাদিদেব মহাদেবের আশ্বাসবাণীতে উৎফুল্ল হয়ে ভগীরথ তখন শ্রদ্ধাবনত চিত্তে দেবী সুরেশ্বরীর ধ্যান করতে শুরু করলেন। কিছু সময় পর পবিত্রতোয়া ভাগীরথী সহসা আকাশ থেকে মাটিতে পড়তে শুরু করলেন। দেবতা, ঋষি, গন্ধর্ব, যক্ষ প্রমুখ সকলে গঙ্গার মর্ত্যে আগমনের সেই ঐশ্বরিক দৃশ্য দেখতে সেখানে উপস্থিত হলেন। বলাবাহুল্য, দেব শুলপাণির মাথায় গঙ্গার পতন দৃশ্যটি তখন দূর থেকে মনে হচ্ছিল যেন একগুচ্ছ স্বচ্ছ মুক্তোর মালা মহাদেব মস্তকে ধারণ করেছেন। ভগবান শংকর দেবীকে মাথায় ধারণ করলে দেবী গঙ্গে ভগীরথকে বললেন- “রাজন! আমি তোমার আহ্বানেই পৃথিবীতে এসেছি। এখন বলো, আমি কোন পথ দিয়ে কোথায় যাবো ?”

দেবীর কথা শুনে ভগীরথ তাঁর পূর্বপুরুষদের শরীর যেখানে ভষ্মীভূত হয়েছিল, সেই দিকে চললেন। পুণ্যতোয়া গঙ্গার পবিত্র জলধারা তার পিছে পিছে এগিয়ে যেতে লাগল। এক সময় সেই জলধারা কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছোল। পূর্ব পুরুষদের প্রয়াশ স্থল স্পর্শ করল। তাঁদের বিদেহী আত্মা গঙ্গার সেই পবিত্র স্পর্শে ধন্য হলো এবং তাঁরা সকলে সুরলোকে গমন করলেন।

ক্রমে ঐ জলধারা শুষ্ক সমুদ্রকে সলিলে পরিপূর্ণ করে তুলল। রাজা ভগীরথ দেবী গঙ্গাকে কন্যা বলে বরণ করে নিলেন। সেখানে তাঁর পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায় শ্রাদ্ধ-তর্পণ সহ পারলৌকিক ক্রিয়াদি নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পন্ন করলেন। এভাবে দেবী গঙ্গা মর্ত্যে এলেন এবং গোটা পৃথিবীর পতিত-পাবনী রূপে তিনি আজও বহমানা রয়েছেন।

অগস্ত্য মুনি কালকের দৈত্যদের বিনষ্ট করার জন্য সকলের অনুরোধে বহুকাল আগে সাগরের জল পান করে সমুদ্রকে শুকিয়ে দিয়েছিলেন। পুণ্যতোয়া দেবী গঙ্গা মর্ত্যে অবতরণ করে অর্ণবকে পুনরায় সলিল পূর্ণ করলেন। বসুন্ধরা পুনরায় তাঁর স্বাভাবিক রূপ ফিরে পেলেন। পৃথিবী শস্য-শ্যামলা রূপে মহিমান্বিত হলো।

সগর পুত্রগণ পুনরায় নতুন করে ঘোড়াটির অনুসন্ধান শুরু করলো। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তারা সমুদ্রের মধ্যে একটি গর্ত দেখতে পেল। তখন তারা কোদাল এবং অন্যান্য অস্ত্রাদির সাহায্যে গর্তটি খনন করতে লাগলো। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ খোঁড়াখুঁড়ি করেও ঘোড়াটিকে তারা দেখতে পেল না । তখন তারা আরও মরিয়া হয়ে ঈশান কোণ বরাবর পাতাল দেশ পর্যন্ত খনন কার্য চালালো এবং দেখলো সেখানে ঘোড়াটি ঘুরছে এবং এক তেজস্বী মহাত্মা নিকটে বসে আছেন। সগরপুত্রগণ ঘোড়াটিকে দেখে তার দখল নেওয়ার জন্য এতটাই উদ্‌গ্রীব হলো যে, তারা সেই মহাত্মা, কপিলমুনিকে সৌজন্য বাক্যটুকু বলারও প্রয়োজন মনে করলো না। মুনিবর তাদের এই আচরণে ভীষণ কুপিত হলেন । তাঁর ক্রোধের অগ্নিময় দৃষ্টিতে ষাটহাজার রাজকুমার সেখানেই ভস্মীভূত হলো।

মহাতপা দেবর্ষি নারদ সেই দৃশ্য দেখে রাজা সগরের কাছে গিয়ে তার বিস্তারিত বিবরণ জানালেন। রাজা সেই মৃত্যু-সংবাদ শুনে খুবই ব্যথিত হলেন এবং কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইলেন। তারপর মহাদেবের আশীর্বাদ বাক্য স্মরণ করে তাঁর অন্য পুত্র অসমজ্ঞার পুত্র অংশুমানকে ডেকে নিয়ে বললেন- “পুত্র! আমার জন্য তোমার ষাট হাজার পিতৃব্য কপিল মুনির কোপে দগ্ধ হয়েছে। আমি ধর্মরক্ষা এবং প্রজাদের মঙ্গলের কথা ভেবে তোমার পিতাকেও ইতিপূর্বে পরিত্যাগ করেছি।”

যুধিষ্ঠির এই কথা শুনে জিজ্ঞাসা করলেন— “হে তপোধন মহর্ষি লোমশ! রাজা সগর কেন নিজের সন্তানকে ত্যাগ করেছিলেন— সে বিষয়ে যদি বলেন ?”

লোমশ বললেন- “হে রাজা! দ্বিতীয় পত্নী শৈব্যার গর্ভে অসমজ্ঞা নামে রাজা সগরের একটি সন্তান জন্মেছিল। অসমজ্ঞা নগরের ছোট ছোট ছেলেদের গলা ধরে নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দিত। এই কারণে নগরবাসীগণ ভীত হয়ে রাজা সগরের কাছে এসে একদিন মিনতি করে বলেন — “মহারাজ! আমরা আপনার পুত্র অসমজ্ঞার আচরণে রীতিমত উদ্ভিন্ন। আপনি আমাদের ভীতি দূর করুন।”

রাজা সগর এই কথা শুনে বিমর্ষ হলেন। এবং সামান্য চিন্তা করে মন্ত্রীকে ডেকে বললেন- “আমার উপকারের জন্য আপনাকে একটি বিশেষ কাজ করতে হবে। এক্ষুণি আমার পুত্র অসমজ্ঞাকে আমার রাজ্য থেকে বাইরে বের করে দিতে হবে। আমার আদেশ পালন করুন।”

এরপর মহাত্মা লোমশ বললেন- “ধর্মাত্মা! এরপর নৃপতি সগর অংশুমানকে কি বলেছিলেন, তা শুনুন।”

মহীপতি সগর বললেন- “বৎস! তোমার পিতাকে আমি নগর ছাড়া করেছি। আমার ষাট হাজার পুত্র তাদের কর্মদোষে ভস্মীভূত হয়েছে। আমার যজ্ঞের ঘোড়াটিকেও পাওয়া যাচ্ছে না। তুমি ঘোড়াটি উদ্ধার করে এনে আমার সংকট দূর করো। যাতে আমি যজ্ঞটি সম্পূর্ণ করতে পারি।”

পিতামহ সগরের কথায় বিষণ্ণ মনে অংশুমান অনেক কষ্ট করে সেইখানে গেলেন, যেখানে ঘোড়াটি রাখা ছিল। দেখলেন মহামুনি কপিল উপবিষ্ট আছেন। মুনিবরকে দেখে অংশুমান যথাযোগ্য সম্মান ও প্রণতি জানিয়ে বললেন- “হে মহাত্মা! আমি যজ্ঞের ঘোড়াটি নিতে এসেছি।”

মহর্ষি কপিল অত্যন্ত সন্তুষ্ট চিত্তে বললেন- “বৎস। আমি তোমার কথায় প্রীত হয়েছি। তুমি কি বর চাও, বলো ?”.

অংশুমান বললেন— “মুনিবর! আমাকে যজ্ঞের ঘোড়াটি ফিরিয়ে দিন। সেইসঙ্গে আমার পিতৃপুরুষদের উদ্ধার করার উপায় বলে দিয়ে পূর্ব-পুরুষদের প্রতি আমার কর্তব্য পালনের সুযোগ করে দিন।”

মুনিশ্রেষ্ঠ কপিল বললেন- “তোমার দুটি বরই আমি পূরণ করবো। তুমি অসাধারণ ধীসম্পন্ন, সত্য, ক্ষমা এবং ধর্মের পূজারী। তোমার দ্বারাই সগর সন্তানেরা স্বর্গলাভ করবে। তোমার পৌত্র তাদের পরিত্রাণের জন্য দেবাদিদেব মহাদেবকে তুষ্ট করে স্বর্গ থেকে দেবী গঙ্গাকে মর্ত্যলোকে আনবে। বৎস! তোমার মঙ্গল হোক। এখন যজ্ঞের ঘোড়াটি নিয়ে তুমি রাজা সগরের কাছে যাও। যজ্ঞ শেষ করো।”

কপিল মুনির নির্দেশ মত ঘোড়াটি নিয়ে অংশুমান এরপর যজ্ঞস্থানে এলেন। এবং রাজাকে সব ঘটনা বললে পুত্রশোক ভুলে রাজা সগর অংশুমানকে সমাদর জানালেন এবং আশীর্বাদ করলেন। তারপর নির্বিঘ্নে বিধিসম্মতভাবে যজ্ঞ সম্পন্ন করলেন। অশ্বমেধ যজ্ঞ করার ফলে সমগ্র দেবগণ দ্বারা তিনি সম্মানিত হলেন। তারপর সমুদ্রকে নিজের পুত্রজ্ঞানে কল্পনা করে দীর্ঘদিন রাজ্য শাসন করতে থাকলেন। এভাবে চলার পর একদিন নাতি অংশুমানের হাতে সমগ্র রাজ্যভার তুলে দিয়ে তিনি স্বর্গারোহণ করলেন।

ধর্মাত্মা অংশুমান পিতামহের পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজ্য পাট সামলানোর পর তিনিও একদিন রাজ্যভার সমর্পণ করলেন তাঁর পুত্র দিলীপকে। এবং তারপর পরলোকে যাত্রা করলেন।

রাজা দিলীপ সিংহাসনে বসেই পিতৃপুরুষদের উদ্ধারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা


Post a Comment

0 Comments