যযাতি ও দেবযানী : প্রেমোপাখ্যান
সঞ্জীবনী বিদ্যা শিখে কচ স্বর্গে পৌঁছালে দেবতাগণ অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। অসুরদের ওপর আক্রমণ তীব্র করার জন্য তাঁর তখন দেবরাজ ইন্দ্রকে প্ররোচিত করতে লাগলেন। সেই অনুসারে দেবরাজ ইন্দ্র অসুরদের উপর আক্রমণ শুরু করলেন। পথের মাঝে একটি উপবন ছিল। তার মধ্যে সেখানে ছিল একটি সরোবর। অনেক নারী ঐ সরোবরে একসঙ্গে স্নান করছিলেন। ইন্দ্র সেই সময় বায়ুরূপে সরোবরে তীরে রাখা তাঁদের পরিধেয় বস্ত্র সকল উড়িয়ে এলোমেলো করে দিলেন। স্নানান্তে অসুররাজ বৃষপর্বার কন্যা শর্মিষ্ঠা ভুল করে দেবযানীর পোশাক পরে ফেললেন। এরপর দেবযানী স্নান সেরে এসে যখন দেখলেন যে, শর্মিষ্ঠা তাঁর বস্ত্রগুলি পরে ফেলেছেন, তা দেখে রেগে গিয়ে তিনি বললেন— “এমনিতে তুমি অসুর কন্যা, তার ওপর আমার শিষ্যা; তুমি কোন সাহসে আমার বস্ত্র পরিধান কর ?”
শর্মিষ্ঠা প্রত্যুত্তরে বললেন— “তোমার বাবা আমার বাবাকে যথেষ্ট মান্য করেন, অথচ তোমার এতো দম্ভ, অহংকার!” –এইভাবে দুজনের মধ্যে কিছুক্ষণ উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলতে থাকে। শর্মিষ্ঠা এক সময় দেবযানীকে ধাক্কা দিয়ে একটি কুয়োয় ফেলে দিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
এই ঘটনার কিছু পরে রাজা যাযাতি শিকার করার জন্য ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন, তিনি তাই কুয়োটিতে জলপান করতে এগিয়ে এলে কুয়োর মধ্যে দেবযানীকে দেখতে পান। তিনি জিজ্ঞাসা করেন— “দেবী! আপনি কে ? কুয়োতে পড়লেন কীভাবে ?
দেবযানী বললেন- “হে রাজন! আমি অসুর গুরু শুক্রাচার্য কন্যা দেবযানী। আপনি আমার হাত ধরে আমাকে কুয়ো থেকে তুলুন।”
রাজা যযাতি যখন জানলেন তিনি ব্রাহ্মণ কন্যা। তখন আর দেরী না করে দেবযানীকে কুয়ো থেকে তুললেন। এবং কন্যার অনুমতি নিয়ে রাজধানীতে ফিরে গেলেন।
দেবযানী কুয়ো থেকে উদ্ধার পেয়ে গৃহে ফিরে গেলেন এবং তাঁর পিতাকে সকল ঘটনার বিবরণ দিলেন। সব কিছু শুনে শুক্রাচার্য কন্যা দেবযানীকে বললেন- “মা! সব মানুষকে তার কর্মফল ভোগ করতে হয় । তুমি নিশ্চয়ই কিছু অনুচিত কাজ করেছো, যার জন্য তোমাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হলো।”
দেবযানী প্রত্যুত্তরে বললেন— “এটা আমার প্রায়শ্চিত্ত, না অন্য কিছু, তা জানি না; কিন্তু হে পিতা! তুমি বলো ঐ বৃষপর্বাহর কন্যার এত সাহস হয় কি করে যে, সে তোমার নিন্দা করে! বলে, তুমি নাকি ভিক্ষা চাও! প্রতিগ্রহ নাও!”
কন্যার কথায় পিতা শুক্রাচার্য বললেন- “পুত্রী! তোমার পিতা কারুর স্তাবকতা করেন না। প্রতিগ্রহও নেন না। নিখাদ ব্রাহ্মণত্ব ও নির্লোভ মনই তার শক্তি। স্বয়ং ব্রহ্মা তাঁকে এই শক্তি দিয়েছেন। এটাই সত্যি।”
এরপর কন্যাকে মার্গ দর্শন বোঝাতে গিয়ে তিনি বললেন— “যে ব্যক্তি নিজের নিন্দা শুনে বিমর্ষ হন না, যিনি জ্বলন্ত ক্ষোভ ও ক্রোধকে বশে রাখতে পারেন। তিনি সত্যিকারের পুরুষ। একজন শত বৎসর ধরে যদি যজ্ঞ করেন, আবার আর একজন কোনো কিছু না করে শুধু ক্রোধকে সংযত রাখতে পারেন; তিনিই শ্রেষ্ঠ।”
দেবযানীর ক্রোধ তাতেও প্রশমিত হলো না। তিনি পুনরায় বললেন— “পিতা! আমার জ্ঞান যতই তুচ্ছ হোক, আমি ধর্ম ও অধর্মের তফাৎ বুঝি। যারা সদাচার ও কৌলিন্যের মর্যাদা জানে না, তারা ক্ষমার অযোগ্য।”
দেবযানীর কথাকে আর উপেক্ষা না করে শুক্রাচার্য এবার বৃষপর্বার সভাস্থলে পৌঁছালেন এবং অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হয়ে বৃষপর্বাকে বললেন- “হে রাজা, কিছুদিন
পূর্বে তোমরা বৃহস্পতি পুত্র কচকে হত্যা করেছিলে। আজ তোমার কন্যা আমার কন্যাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। এই দুটি ঘটনাই অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমি আর তোমাদের দেশে থাকতে পারবো না। আমি অন্যত্র চললাম।”
বৃষপর্বা বললেন- “হে দেব! আমি আপনাকে পরম শ্রদ্ধার চোখে দেখি । আমার চোখে আপনি সত্য ও ন্যায়ের পূজারী। আপনি যদি আমাকে পরিত্যাগ করে চলে যান, তাহলে আমি সমুদ্রে প্রাণ বিসর্জন দেবো।”
শুক্রাচার্য বললেন “ওহে রাজা! আমি কন্যা-অন্তপ্রাণ। তার অপমান আমি সহ্য করতে পারছি না। তুমি তাকে প্রসন্ন করো।”
বৃষপর্বা তখন দেবযানীকে বললেন- “হে দেবী! তুমি প্রসন্ন হও। তুমি যা বলবে বা চাইবে; আমি তা করতে প্রস্তুত।”
দেবযানী প্রত্যুত্তরে বললেন- “আপনার কন্যা শর্মিষ্ঠা আমাকে অপমান করেছে। আমি চাই সে আমার দাসী হয়ে আমাকে সেবা করুক। সে চিরকাল আমার অনুগামিনী হয়ে থাকুক।”
রাজা বৃষপর্বা তখন অন্তঃপুরে খবর পাঠিয়ে দেবযানীর ইচ্ছা— সকল শর্মিষ্ঠাকে জানালেন। শর্মিষ্ঠা সব শুনে বললেন- “আমি আমার বিপদগ্রস্ত জাতির কথা ভেবে দেবযানীর প্রস্তাব মেনে নিচ্ছি। উনারা যেন চলে না যান। আমি উনাদের সঙ্গে যাব। দেবযানীর দাসী হয়ে চিরকাল থাকবো।”
এর কিছুকাল পর দেবযানী শর্মিষ্ঠা সহ অন্যান্য সখীদের নিয়ে একদিন ঐ উপবনে বেড়াচ্ছিলেন। সে সময় নহব-নন্দন রাজা যযাতি সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি খুব ক্লান্ত ছিলেন। কন্যাদের দেখে রাজা তাঁদের পরিচয় জানতে চাইলে দেবযানী বলেন- “আমি দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য সুতা দেবযানী। এ হলো আমার সহচরী, দাসী শর্মিষ্ঠা। আপনি কিছুদিন পূর্বে কুয়ো থেকে তুলে আমাকে রক্ষা করেছিলেন। তাই আমি আপনার পূর্ব পরিচিতা। সেদিন আপনি আমার ডান হাত ধরে কুয়ো থেকে তুলেছিলেন। তাই আমি কি করে অন্য পুরুষের হাত ধরি ? আমি এ জন্য আপনাকে স্বামীরূপে বরণ করছি। দয়া করে আমাকে স্বীকার করুন।”
প্রত্যুত্তরে রাজা বললেন- “হে শুক্রসুতা! তোমার কল্যাণ হোক। তুমি ব্রাহ্মণ তনয়া। আমি ক্ষত্রিয়বংশীয়। তাই এই বিবাহ তোমার পিতার সম্মতি ছাড়া কোন মতে সম্ভব নয়। তিনি যতক্ষণ না তোমাকে আমার হাতে অর্পণ করছেন, ততক্ষণ এ বিবাহ আমি কী করে স্বীকার করি ?”
দেবযানী তখন তাঁর পিতার কাছে এই সংবাদ পাঠালেন। শুক্রাচার্য সমস্ত ঘটনা শুনে সেখানে উপস্থিত হলে যযাতি তাঁকে প্রণাম করে বললেন- “হে পিতা! আমি নহুষ-নন্দন রাজা যযাতি। আমি আপনার কন্যার পাণিপ্রার্থী। দয়া করে আমাকে আপনার কন্যারত্নটি সম্প্রদান করুন।”
শুক্রাচার্য দৈবনিৰ্দ্দিষ্ট বিধান জানতেন। তাই কোন কথা বাড়ালেন না। বরং এই প্রস্তাব স্বীকার করলেন। তবে বললেন- “হে রাজন। আমার প্রাণাধিক কন্যা তোমাকে পতিরূপে চাইছে এবং তুমিও তা স্বীকার করছো। তাই কন্যাদানে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে আমার একটাই শর্ত আমার কন্যাটিকে তোমাকে পাটরানীর মর্যাদা দিতে হবে।”
যযাতি হৃষ্টমনে তখন বললেন- “হে মহর্ষি। আমি ক্ষত্রিয়, কিন্তু ব্রাহ্মণ কন্যাকে বিবাহ করতে চলেছি। তাই বর্ণসংকর দোষ লাগবে। দয়া করে আমাকে এমন আশীর্বাদ করুন যাতে বর্ণসংকর দোষ আমাকে স্পর্শ না করে।”
শুক্রাচার্য পরম সন্তোষ সহকারে বললেন— “পুত্র! তুমি আমার কন্যাকে স্বীকার কর। আমি তোমার সকল পাপ নাশ করে দিচ্ছি। অযথা আর দুঃশ্চিন্তা করো না। আমার কন্যাকে পত্নীরূপে বরণ করে সুখ লাভ করো। মহানন্দে ধর্মপালন করো। তবে হ্যাঁ, আমার কন্যার সঙ্গে শর্মিষ্ঠাও তোমার প্রাসাদে যাবে। তুমি তার সঙ্গে কখনোই অন্তরঙ্গ হবে না।”
এরপর যযাতি ও দেবযানীর শাস্ত্র সম্মতভাবে বিবাহ সম্পন্ন হলে নবদম্পতির সঙ্গে শর্মিষ্ঠাও যযাতির রাজধানীর উদ্দেশে যাত্রা করলেন। যযাতির রাজধানী অমরাবতীর মতো সুদৃশ্য; সেখানে দেবযানী অন্তঃপুরে পাটরানীরূপে অধিষ্ঠিতা হলেও শর্মিষ্ঠার বসবাসের জন্য অশোক বাটিকার কাছে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হলো। সেখানেই তাঁর থাকার ব্যবস্থা করা হলো।
এরপর সময় গড়াতে থাকে। দেবযানীর গর্ভে সন্তান আসে। রাজা যযাতি একদিন হঠাৎ অশোকবাটিকার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন; এমন সময় শর্মিষ্ঠাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়েন। শর্মিষ্ঠা রাজাকে দেখে এগিয়ে এসে করজোড় করে বলেন— “হে রাজর্ষি! আমি আপনার কৃপায় এখানে খুবই সুখে আছি। সুরক্ষিত আছি। কিন্তু আপনি তো আমার পরিচয় সহ সকল বৃত্তান্ত জানেন। আমি এখন তীব্র কামনা অনুভব করছি। দয়া করে আমার মিনতি রক্ষা করুন।” বলা বাহুল্য, কোমল-হৃদয়-সম্পন্ন রাজা যযাতি শর্মিষ্ঠার কামনাকে উপেক্ষা করতে পারলেন না, তার প্রার্থনা মেনে নিয়ে তাকে যথাযোগ্য সঙ্গ দিলেন।
এরপর দীর্ঘ সময় কেটে গেছে। দেখবানীর গর্ভে দুই পুত্র সন্তান জন্ম নিয়েছে, যথাক্রমে যদু ও তুর্বসু। অন্যদিকে, শর্মিষ্ঠার কোল আলো করে ভূমিষ্ঠ হয়েছে তিন পুত্র সন্তান দুহু, অনু এবং পুরু। একদিন দেবযানী স্বামীর সঙ্গে অশোকবাটিকা ভ্রমণ করছিলেন। দেখলেন তিনজন ফুটফুটে সুদর্শন বালক সেখানে খেলা করছে।
দেবযানী অবাক হয়ে স্বামীকে প্রশ্ন করলেন- “এরা কারা ? এদের দেখতে অনেকটা আপনার মতো মনে হচ্ছে ?”
একটু পরে বালকদের উদ্দেশ্য করে বললেন- “কে তোমরা ? তোমাদের পিতা কে ?”
বালকেরা তখন রাজা যযাতির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলো এবং বললো, “শর্মিষ্ঠা আমাদের মাতা'। -তারপর তারা দৌড়ে রাজার কাছে গেল ।
দেবযানীর আর বুঝতে কোন কিছু বাকি রইল না। তিনি তখন কাঁদতে কাঁদতে শর্মিষ্ঠার কাছে গেলেন এবং বললেন— “শর্মিষ্ঠা! তোমার আসুরিভাব এখনো গেলো না। তুমি কেন এমন কাজ করলে ?”
শর্মিষ্ঠা প্রত্যুত্তরে বললেন- “আমি রাজার সঙ্গে সমাগম করেছি তা ধর্ম ও ন্যায় মেনে। তুমি ব্রাহ্মণ কন্যা ঠিকই। কিন্তু রাজাকে আমি স্বামী বলে মেনে নিয়েছি এবং আমি তোমার চেয়ে রাজাকে অধিক ভালোবাসি।”
দেবযানীর ক্রোধ তখন রাজার দিকে গিয়ে পড়লো। তিনি বললেন- “আপনি আমার অপ্রিয় ও অনুচিত কাজ করেছেন। আমি আপনার সঙ্গ ত্যাগ করছি।”
এই বলে ক্ষুদ্ধ হয়ে দেবযানী পিত্রালয়ের পথে চললেন। রাজা এই ঘটনায় খুব ভয় পেলেন এবং দেবযানীকে বোঝাতে বোঝাতে উভয়ে শুক্রাচার্যের কাছে পৌঁছালেন।
পিতাকে দেখে কাঁদতে কাঁদতে দেবযানী বললেন— “বাবা! শর্মিষ্ঠা আজ আমার চেয়ে রাজার চোখে অধিক প্রিয় হয়েছে। এই রাজার কল্যাণে সে লাভ করেছে তিনজন পুত্র সন্তান। রাজা ধার্মিক হয়েও ধর্মচ্যুত হয়েছেন। তুমি এর বিচার করো।”
শুক্রাচার্য কন্যার মুখে সব শুনে বললেন— “রাজন! আমি ভাবতে পারছি না যে, তুমি এমন কাজ করেছো। তুমি তোমার মর্যাদা নষ্ট করেছো। আমি তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি, ‘তুমি এখুনি বৃদ্ধ হয়ে যাবে।”
যযাতির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। তিনি বললেন- “পিতা! যা হয়েছে তা ক্ষণিকের ভুলমাত্র। এমন ভয়ংকর অভিশাপ আপনি দয়া করে প্রত্যাহার করুন। আমি আপনার কন্যা দেবযানীকে অত্যন্ত ভালোবাসি। তার সঙ্গ লাভের সুখ আমার এখনো ফুরায়নি।”
শুক্রাচার্য বললেন- “ব্রহ্মবাক্য কখনও নিষ্ফল হয় না। তবে কথা দিচ্ছি, তোমার বৃদ্ধত্ব যদি অন্য কেউ নিয়ে নেয়, তাহলে তুমি যৌবন ফিরে পাবে।”
রাজা যযাতি বললেন- “বেশ, আপনি বলুন, যদি আমার কোনো পুত্র আমাকে তার যৌবন প্রদান করে, তবে সে ধন-সম্পদ-যশ সহ আমার সবকিছুর অধিকারী হবে।”
গুরুদেব বললেন— “শুদ্ধাপূর্বক হয়ে আমাকে স্মরণ করে তোমার কোনো পুত্র যদি তোমার বার্ধক্য স্বীকার করে নেয়, তাহলে তুমি যৌবন ফিরে পারে। সে যশস্বী এবং দীর্ঘায়ু হবে। তোমার কুল গৌরব রক্ষা করবে।”
এরপর রাজধানীতে ফিরে এলেন রাজা যযাতি। প্রথমে দেবযানীর পুত্র যদুকে ডেকে বললেন— “আমি হঠাৎ বৃদ্ধ হয়ে গেছি। চুল সাদা হয়ে গেছে। গায়ের চামড়া ঝুলে গেছে। তুমি তোমার যৌবন আমাকে দিয়ে আমার বৃদ্ধত্ব স্বীকার কর। ততদিন রাজ্যেশ্বর হয়ে রাজ্য শাসন করো । এক হাজার বছর পর আমার ভোগবাসনা পূর্ণ হলে আমি তোমার যৌবন ফিরিয়ে দেব। আমি আবার বৃদ্ধত্ব স্বীকার করবো।”
যদু বললেন— “বৃদ্ধত্বের হাজার সমস্যা। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ঠিক করে খাওয়া দাওয়া করা যায় না। অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকে। জীবনে কোনো আনন্দ থাকে না। তাই আপনার কথা আমি রাখতে পারছি না। আমাকে ক্ষমা করবেন, পিতা।”
যযাতি তখন বিফল মনোরথ হয়ে একে একে দেবযানীর গর্ভস্থ তুর্বসু এবং শর্মিষ্ঠার পুত্রদ্বয় যথাক্রমে দ্রুহ ও অনুকে বৃদ্ধত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দিলেন। তারা সকলেই যদুর মতো ঐ প্রস্তাব অস্বীকার করলো। রাজা যযাতি তখন হতাশ হয়ে এই পুত্রসন্তানদের অভিশাপ দিলেন এবং সবশেষে শর্মিষ্ঠার কনিষ্ঠ সন্তান পুরুকে ডেকে বললেন— “পুত্র, তুমি আমার খুব আদরের ধন। অন্য ভাইদের চেয়ে তুমি খুব ভালো। আমি অভিশাপ পেয়ে অকালবৃদ্ধ হয়ে গেছি। তুমি আমার বৃদ্ধত্ব নাও। আমার ইচ্ছা আগামী একহাজার বছর আমার ভোগ বাসনা সক্রিয় থাকুক। তারপর আমার সকল পাপ সহ তোমার বৃদ্ধত্ব আমি ফিরিয়ে নেব।”
পিতার এমন ইচ্ছা পুরু হাসি মুখে মেনে নিলেন। যযাতি পুরুকে আশীর্বাদ করে বললেন— “তোমার আচরণ আমাকে মুগ্ধ করেছে। তুমি একজন যশস্বী রাজা হবে।”
এই বলে যযাতি শুক্রাচার্যের ধ্যান করতে শুরু করলেন এবং তাঁর বৃদ্ধত্ব পুত্রকে প্রদান করে পুত্রের যৌবন নিজে গ্রহণ করলেন।
0 Comments