সমুদ্রমন্থন, দেবতাদের অমৃতলাভ এবং রাহুর দেবত্বপ্রাপ্তির গল্প

সমুদ্রমন্থন, দেবতাদের অমৃতলাভ এবং রাহুর দেবত্বপ্রাপ্তির গল্প


সুপ্রাচীনকাল থেকে সমুদ্র এবং সমুদ্রতল অপার বিস্ময় ও রহস্যে ঘেরা। আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান সমুদ্র সম্পদ নিয়ে গবেষণায় প্রভূত উন্নতি ঘটালেও পৃথিবীর জলমণ্ডল; বিশেষ করে সমুদ্রের গভীরে কি সম্পদ লুকিয়ে আছে তার বেশিরভাগই আজও অজানা। মহাভারতের 'আদি পর্বে' সমুদ্রমহন এবং দেবতাদের অমৃতলাভ নিয়ে যে অত্যাশ্চর্য বর্ণনাটি পাওয়া যায় তা সাগরতলের রহস্যকেই প্রমাণ করে। সমুদ্রমন্থনের মূল পরিকল্পনাটি দেবতারা নিয়েছিলেন, কিন্তু কাজটি এতটাই সময়-সাপেক্ষ এবং শ্রমসাধ্য ছিল যে, দেবগান একসময় দানবদের সাহায্য নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। সমুদ্র মন্থন করে পাওয়া গিয়েছিল নানারকম মূল্যবান বস্তু ও অন্যান্য সম্পদসমূহ। তার মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট ছিল, অমৃত, যা পান করে দেবতাকুল অমরত্ব লাভ করেছিলেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্যি যে, দেবতারা অমৃতের ভাগ অসুরদের দেননি। এক্ষেত্রে যুক্তি ছিল এই যে, অসুরগণ অমৃত পান করে আমার হলে তা হবে জগতের পক্ষে অকল্যাণকর। এককথায় অসুস্থ সমাজ অমৃতলাভের যোগ্য নয়। যুক্তি যাইহোক না কেন, দেব সমাজ সেদিন অমৃত থেকে অসুরাদের বঞ্চিত করেছিলেন যা, অনৈতিক এবং অসঙ্গত। এবার দেখে নেওয়া যাক, সস্থানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঠিক কি ঘটেছিল।

প্রাচীনকালে সুসের নামে একটি পর্বত ছিল যার শৃঙ্গগুলি সোনার ন্যায় উজ্জ্বল দেখাতো। তার দীপ্তি সূর্যের প্রভাকেও স্নান করেছিল। সেই প্রকান্ড পর্বতশ্রেণী ছিল দেবতাদের আবাসস্থল। সেখানে সুরম্য দুর্লভ ওষধি, তরুলতা, নদ-নদী ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান অনুপম সৌন্দর্য-সুখনা সৃষ্টি করেছিল। পাখিদের কলকাকলিতে পর্বতটি ছিল অত্যন্ত উপভোগ্য ও প্রাণবন্ত। সেই নয়নাভিরাম পারবো একদিন প্রবল পরাক্রান্ত দেবতাগণ সমবেত হলেন এবং সংকল্প নিলেন করার। কিন্তু এই কাজটি এককথার ছিল অত্যন্ত শ্রমসাধ্য যা, শুধুমাত্র দেবতাদের উদ্যোগে সম্পন্ন করা সম্ভব ছিল না। তাই ভগবান নারায়ণ প্রজাপতি ব্রহ্মাকে বললেন- “দেবতা ও অসুরগণ যৌথভাবে জলধি মন্থন করলে তবেই কার্যসিদ্ধি হবে।”

সমুদ্র মন্থন করতে হলে প্রথমে চাই উপযুক্ত মন্থন দণ্ড। স্থির হলো মদার পর্বত এই কাজে উপযুক্ত দণ্ড হতে পারেন। কিন্তু গগন-স্পর্শী মন্দার পর্বতটি ছিল এগারো যোজন উচ্চ এবং সমপরিমাণে ভূগর্ভে প্রোথিত। দেবগণের সম্মিলিত চেষ্টায় মন্দার পর্বতকে উৎপাটন করা সম্ভব হচ্ছিল না। তখন দেবতারা বাধ্য হয়ে প্রজাপতি ব্রহ্মা ও ভগবান নারায়ণের কাছে গিয়ে সমস্যাটির কথা বললেন এবং পরামর্শ প্রার্থনা করলেন। তখন ভগবান বিষ্ণু ও ব্রহ্মা, নাগরাজ অনন্তদেবকে মন্দার উত্তোলনের জন্য পাঠালেন। যাইহোক, শেষ পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মন্দার পর্বত উত্তোলন করা সম্ভব হলো। এরপর দেবতারা মন্দার পর্বতকে নিয়ে সমুদ্রতীরে উপস্থিত হলেন এবং সমুদ্রকে “হে অর্ণব! আমরা অমৃতলাভের আশায় তোমার জল মন্থন করতে চাই।”

সমুদ্র প্রত্যুত্তরে বললেন- “সমুদ্র মন্থনে আমাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে। তাই আমিও মন্থন থেকে উপযুক্ত ভাগ পেতে চাই।”

দেবতা সহ উপস্থিত অন্যান্য সকলে সমুদ্রের এই প্রস্তাব মেনে নিলেন। শুরু হলো সমুদ্র মন্থনের আয়োজন। কিন্তু এই অতি বিশাল মন্দার পর্বত যা মন্থন নত হিসাবে ব্যবহৃত হবে তাকে ধারণ করবে কে? অনেক চিন্তাভাবনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যে, কুর্মরাজকে আবার পাত্র রূপে কাজ করতে বলা হবে। সেইমতো সকলের অনুরোধে কুর্মরাজ এই ভূমিকা পালনে রাজি হলেন। দেবরাজ ইন্দ্র কর্মরাজের পৃষ্ঠে অধিষ্ঠিত মন্দার পর্বতকে যত্ন সহকারে চালিত করলেন। সেই সঙ্গে এই বিশাল কর্মে মন্থন রজ্জু হিসাবে বাসুকি নাগকে ব্যবহার করা হলো। বাসুকি নাগের লেজের দিকটি ধরলেন দেবগণ এবং মুখের দিকটি ধরলেন অসুরগণ।

শুরু হলো সমুদ্র মন্থন। মন্থনকালে বাসুকি নাগকে একটানা খুব জোরে জোরে টানাটানি করার ফলে তার মুখ থেকে ধোঁয়া এবং অগ্নি-স্ফুলিঙ্গের মতো নিঃশ্বাস নির্গত হতে লাগল। সেই উত্তপ্ত বায়ু আকাশে মেঘের সঞ্চার করলো। শুরু হলো একটানা বৃষ্টি। সেই সঙ্গে গিরিবরের শৃঙ্গ থেকে ঝরে পড়লো আচমকা পুষ্প-বৃষ্টি। আবার সমুদ্রমন্থনের ফলে মরতে থাকলো অসংখ্য জলজপ্রাণী এবং তলদেশের আরও অসংখ্য জালভান্ত। গিরিরাজ মন্দারের প্রবল ঘূর্ণনে পর্বতের ওপরের বড় বড় গাছগুলির ঘর্ষণে শুরু হলো দানানল। দাবানলের ক্রম প্রসারণে বন্ধ হলো বৃক্ষরাজি ও প্রাণীকুল। নিজেকে সেই স্তরে উন্নীত করতে পেরেছেন।

পাপাচারী ব্যক্তি পাপ কাজ থেকে কখনোই নিজেকে মুক্ত করতে পারে না। নিষ্কাম ব্যক্তিই কেবল পূর্ণাকর্মে নিযুক্ত থাকেন। নিষ্পাপ, কৃতজ্ঞ ব্যক্তি, সুখ, ধর্ম, অর্থ ও স্বর্গলাভের অধিকারী হন। অন্যকে কষ্ট না দিয়ে আমাদের জীবিকা নির্বাহ করা উচিত। শাস্ত্রজ্ঞান সম্পন্ন সজ্জন ব্যক্তিরা নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী কর্ম করে থাকেন। ধর্মের পথে থেকেই তারা আনন্দ পান এবং তাঁরা ধর্মকে আশ্রয় করেই জীবনযাপন করেন। আবার ধর্মানুষ্ঠানের দ্বারা সঞ্চিত ধন দ্বারা নানা রকম শুভ কাজ করে থাকেন। এইভাবে যাঁরা জীবনযাপন করেন তাদের ধর্মাত্মা বলা হয়। তাঁর শরীর-মন ও বিশুদ্ধ হয়। ধর্মাচরণের ফল স্বরূপ ইঙ্গিত শব্দ, স্পর্শ, রূপ, গন্ধ ও প্রভুত্ব লাভ করেন। প্রাজ্ঞ ব্যক্তি বিষয়াষক্ত নয় বরং বিষয়-বিমুখ থাকতে ভালবাসেন। হে রাহ্মাণ। এইভাবে ধর্মের অনুসারী মানুষ বৈরাগ্যকে সঙ্গী করে পাপ কাজকে বিসর্জন দিয়ে মোক্ষলাভের দিকে এগিয়ে চলেন।

তপস্যা ও মুক্তিলাভের মূল কারণ হল শান্তি লাভ এবং ইন্দ্রিয় সংযমের মাধ্যমে ব্রহ্মপদ প্রাপ্তি। তপস্যা ও মুক্তির দ্বারাই মানুষ ইঙ্গিত সব কিছুই পেতে পারে।”

তখন ব্রাহ্মণ আবার জানতে চাইলেন- “হে ব্যাধা সত্ত্ব, রজ ও তম। আমি এই তিনটি গুণের স্বরূপ জানতে চাই। এ বিষয়ে বর্ণনা করুন।”

ধর্মব্যাধ বললেন- বিপ্লবর, তিনটি গুণের মধ্যে তমোগুণে মোহ তৈরি হয়। রজোগুণ কর্মপ্রবৃত্তি তৈরি করে, আর সত্ত্বগুণ হলো বিশেষ জ্ঞান প্রকাশক। তাই সত্ত্বগুণ হলো সর্বোৎকৃষ্ট। যে মোহাচ্ছন্ন, দিন রাত ঘুমিয়ে কাটায়, যার ইন্দ্রিয় সংযম নেই, ক্রোধী এবং অবিবেচক সে তমোগুণ সম্পন্ন। আবার যিনি বিচারশীল, অন্যের দোষ দেখেন না। সব সময় কাজে ব্যস্ত থাকেন, যার মধ্যে বিনয়ভাব নিরঙ্কুশ নয়, সামান্য হলেও অহংকারী তিনি রজোগুণ সম্পন্ন।

অন্যদিকে যিনি ধীর, জিতেন্দ্রিয়, ক্রোধহীন, অন্যের মধ্যে দোষ দেখেন না; তাঁকে সাত্ত্বিক পুরুষ বলা হয়।

মানুষের ভোজন-সংযম থাকা উচিত। চিত্ত-শুদ্ধ রাখা উচিত। ঈশ্বর চিন্তায় নিমগ্ন থাকা উচিত। যে ব্যক্তি সবসময় হৃদয়ে আত্ম-সাক্ষাৎকারের অভ্যাস করেন, তিনি মনের মধ্যে নিরাকার আত্মাকে দর্শন করে মুক্ত হয়ে যান। জগতে এই হলো তপস্যা ও বন্ধন থেকে মুক্তিলাভের পথ। এই পথ বাস্তবে খুবই কঠিন পথ। তবে সবার থেকে বড় ধর্ম হলো দয়া। প্রধান বল হল ক্ষমা। উত্তম ব্রত হলো সত্য এবং আত্মজ্ঞান লাভ হলো সর্বোৎকৃষ্ট জ্ঞান।

সত্যকথা বলা সবসময়ই মঙ্গলকর। প্রাণীদের যাতে কল্যাণ হয়, তাকে সত্য যিনি নিষ্কাম কর্মকারণ, যাঁর নিজের বলে কিছু নেই, সব কিছু ঈশ্বরের চরণে সমর্পণ করে দিয়েছেন, তিনি সত্যিকারের বুদ্ধিমান ও ত্যাগী। যিনি সবাইকে সমান চোখে দেখেন, কাউকে শত্রু বলে ভাবেন না, কামনা ও লোভকে চিরকালের মত ত্যাগ করে দিয়েছেন, যিনি যে কোন বিষয়েই সন্তুষ্ট, তিনি যথার্থই আত্মজ্ঞানের সাধক। যিনি নিরাসক্ত, যাঁর কাছে গুণাদিও নির্গুণস্বরূপ, একমাত্র অজ্ঞান ছাড়া তার উপলব্ধি বাধাহীন এবং অজ্ঞান দূর হলেই সঙ্গে সঙ্গে যা প্রকাশিত হয়- তাই হলো ব্রহ্মপদ। তাকেই বলে অসীম আনন্দ। এই ব্রহ্মপদ প্রাপ্তিকেই মোক্ষলাভ বলে।” বরং এটি যেহেতু আমার পূর্ব জন্মের কর্মফল, তাই এর সাহায্যে আমার জীবিকা নির্বাহ করে চলেছি।

হে ব্রাহ্মণ! আমার নিবেদন এই যে, নিজের কর্ম ত্যাগ করলে অধর্ম হয়। যে ব্যক্তি নিজের কাজে আশ্রিত, তাকে ধর্মিক বলা হয়। পূর্ব জন্মের কর্মফল সবাইকে ভোগ করতে হয়। কর্ম নির্ণয় বা নির্বাচনে বিধাতার বিধান এমনই। তবে সেই কর্ম নির্ণয় বিভিন্ন প্রকারের। আমাদের সামনে যদি কোন অশুভ কাজ আসে তা থেকে নিজেকে কি করে রক্ষা করব; এবং কিভাবেই বা ভাল কাজের শরিক হবো, তা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিচার-বিশ্লেষণের দ্বারাই স্থির করতে হবে। হে মহাত্মন! আমি দান-ধ্যান, সত্য বচন, গুরুসেবা এবং দেব-ব্রাহ্মণ পূজা প্রভৃতি মহৎ কাজে লিপ্ত থাকি । আমার কোন অভিমান নেই। কখনো কারুর নিন্দা করাও আমার দ্বারা হয়ে ওঠে না ।

হে ক্ষমাসুন্দর! অনেকে কৃষিকাজকে উৎকৃষ্ট বলে মান্যতা দেন। ঐ কাজ করতে গিয়েও অনেক অপ্রিয় বা হিংসার কাজ করতে হয়। কৃষক লাঙল দিয়ে জমি তৈরির সময় বহু কীট-পতঙ্গ অনুজীবির প্রাণ সংহার করে। আপনার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী ? ধান সহ যে কোন বীজই প্রাণের উৎস। তাই কৃষিকাজ সর্বোকৃষ্ট কর্ম, এ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। লোকে পশুদের আক্রমণ করে বধ করে তারপর তার মাংস খায়। বৃক্ষ, লতাদি, বা গাছপালা সবই আমাদের ভক্ষ্য।

হে ব্ৰাহ্মণ! কি গাছপালা, কি ফলফুল, সব কিছুতেই জীব আছে। অনেক প্রাণী আছে যারা অন্য প্রাণীকে খেয়ে বেঁচে থাকে। এই জগৎ কোটি কোটি জীব ও প্রাণে পরিপূর্ণ । আমরা পায়ে পায়ে পথ চলতে চলতে কত প্রাণ, বা জীবকে মাড়িয়ে ফেলি । শুতে বসতে গিয়ে কত প্রাণ সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে মেরে ফেরি । সমগ্র পৃথিবী ও বায়ুমণ্ডল জীব ও প্রাণে পরিপূর্ণ। এমন কোন স্থান নেই যা প্রাণশূন্য। তাই সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে কে, কাকে, কিভাবে, কোন প্রাণ বিনষ্ট করে চলেছে তার হিসাব আমাদের কারুরই জানা নেই।”

ধর্মব্যাধ এরপর কর্মফল ও সুখ-দুঃখ ভোগ ইত্যাদি নিয়ে তাঁর মতামত দিতে শুরু করলেন। তিনি বললেন— “হে কৌশিক! লোকমুখে শুনে আসছি বেদোক্ত ধর্মই যথার্থ ধর্ম। তার সূক্ষ্ম গতি, বহু শাখায় বিভক্ত এবং ব্যাপ্তি অনন্ত। প্রাণ সঙ্কট বা বিবাহকালে যদি কেউ মিথ্যা কথা বলে তা দোষের হয় না। অর্থাৎ সঙ্কট সময়ে সত্য ও মিথ্যার পারস্পরিক রূপ বদল হয়। তাই সাধারণের পক্ষে যা হিতকর বা মঙ্গলজনক তাই সত্য। ধর্মের গতি এভাবেই সূক্ষ্ম। অনেক সময় ধর্মের বিপরীত গতিও ধর্ম বলে বিবেচিত হয়।

লোকে ভাল কাজ বা মন্দ কাজ যাই করুক না কেন; কোন একটি সময় তার ফল তাকে ভোগ করতেই হয়। অনেক সময় দুর্দশা বা নিদারুণ দুঃখকষ্টে পড়ে মানুষ দেবতাকে গালমন্দ করে থাকে। কিন্তু সেইসব অনভিজ্ঞ ব্যক্তিরা নিজের কর্মদোষ দেখতে পান না। শঠ, ধূর্ত, প্রবঞ্চকদের জীবন সুখ-দুঃখের ওঠা নামায় মোড়া। তাঁরা কারুর উপদেশ, বা আদেশকে তোয়াক্কাই করেন না।

যেকোন প্রচেষ্টা বা উদ্যোগের ফল যদি স্বাধীন হতো, তাহলে সকলেই তার সাধ্যানুসারে ফল লাভ করতে পারতো। সংযমী, বুদ্ধিমান, কর্মদক্ষ, সৎ ব্যক্তিরাও প্রাপ্য কর্মফল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আবার ধূর্ত, কপট, প্রতিহিংসাপরায়ণ ব্যক্তিরা একটানা সুখ-স্বাচ্ছন্দে দিন কাটাচ্ছে— এমন উদাহরণও হাতের কাছে পাওয়া যায়। আবার এমন অনেকে আছেন যাঁরা বিনা পরিশ্রমে হঠাৎ প্রচুর ধন-সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এমন নজিরও প্রচুর আছে।

লোকে পুত্র লাভের আশায় ভক্তি সহকারে দেবার্চনা ও জপ-তপ-ব্রত উদ্‌যাপন করে। মাতৃগর্ভে সেই সন্তান দশ মাস ধরে বড় হয়ে একদিন ভূমিষ্ঠ হয়। তার মধ্যে কেউ বড় হয়ে কুল শিরোমণি, কেউ আবার কুল-কলঙ্ক হয়ে ওঠে। অনেক সন্তান জন্ম থেকে বাবার অফুরন্ত সঞ্চিত ধনের প্রাচুর্যে বড় হয়। কেউ আবার অনাদরে অবহেলায় বাড়তে থাকে। মানুষের নানান রকম যে সব অসুখ বিসুখ হয়, তাও কর্মফলের দ্বারা প্রভাবিত । ব্যাধ যেমন হরিণদের হত্যা করে, বহু প্রাণ বিনষ্ট করে, তেমনি চিকিৎসকরা নিজেদের তৈরি ওষুধ বা চিকিৎসাগুণে বহু বিনষ্টপ্রায় প্রাণ রক্ষা করে। কারুর সামনে আছে প্রচুর খাবার, কিন্তু অজীর্ণ রোগের কারণে তার খাওয়ার কোন উপায় নেই। আবার অনেকে আছে যারা বহু কষ্টে গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করে, তাদের জীবনে প্রাচুর্য বলে কিছু নেই। মানুষ জন্ম, মৃত্যু ও রোগ-ভোগের কারণে দুঃখ কষ্টে দিন

কাটায় এবং নিজের দোষেই ক্রমাগত জন্মস্থান (যোনি সঞ্চারণ) বদলায়। মানুষ নিজ কর্মদোষে তেমন জন্মস্থান লাভ করে যা আবার দুঃখ দুর্দশাময়। সারা জীবন বাঁচার ন্যূনতম উপাদানটুকু সংগ্রহ করতেই তাদের দিন কেটে যায়। আবার এটাও ঠিক যে, সুখী হিসাবে আপাত দৃষ্টিতে আমরা যাদের দেখি, তাদের সেই সুখ আক্ষরিক অর্থে আপেক্ষিক এবং নামমাত্র ৷

মানুষ কর্মফল এবং বিষয় ভোগ মেটানোর আশায় চক্রাকারে সংসার সমুদ্রে পরিভ্রমণ করে চলেছে। কিন্তু হায়! সুখ সে তো ছলনাময়ী। মানুষ যদি সৎকর্ম ও সৎসঙ্গে নিযুক্ত থেকে বীতরাগ ও বিশুদ্ধ হয় তখনই তার তপস্যা ও যোগ সাধনায় আগ্রহ আসে। এমন অনেকে আছেন যাঁরা শুধুমাত্র নিজের কর্মফলকে আশ্রয় করে  বিপ্লবর কৌশিক আবার প্রশ্ন করলেন- “হে নরোত্তম! আমি শিষ্টাচার সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে চাই। তুমি সে বিষয়ে আমাকে আলোকপাত কর।”

ব্যাধ বললেন- “হে দ্বিজোত্তম! যজ্ঞ, দান, তপস্যা, বেদ ও সত্য এই পাঁচটি পবিত্র বিষয় নিয়েই হলো শিষ্টাচার। যাঁরা কাম, ক্রোধ, অহংকার, লোভ ও কপটতাকে জয় করে এই পাঁচটি পবিত্র বিষয়কে আঁকড়ে ধরে ধর্মপালন করেন, তাঁরাই শিষ্টাচারী। তাঁরা কখনোই স্বেচ্ছাচার করেন না । শিষ্ট ব্যক্তি মানে হলো 'সদাচারী'।

আবার গুরুসেবা, সত্যপ্রিয়তা, দানধ্যান এবং ক্রোধ সম্বরণ এই চারটি বিষয়ও শিষ্টাচারের অঙ্গ। বেদের রহস্য সত্য; সত্যের রহস্য দম (ইন্দ্রিয় দমন), দমের রহস্য ত্যাগ, এগুলি শিষ্টাচারের লক্ষ্মণ। তাই ত্যাগ না থাকলে দম থাকে না। দম না থাকলে সত্য থাকে না। আবার সত্যজ্ঞান না হলে বেদ রহস্য জানা যায় না। যাঁরা বেদকে সম্যক উপলব্ধির মাধ্যমে আয়ত্ব করেন, দান পরায়ণ, ধর্মানুসারী এবং সত্যের পূজারী তাঁরাই শিষ্ট। নাস্তিক, ধূর্ত, পাপাচারীদের সঙ্গ ত্যাগ করুন। জ্ঞানের পথের পথিক হোন, ধার্মিকদের সহায়তা করুন। ধৈর্যের পানসিতে ভর করে কাম-ক্রোধ-লোভ ইত্যাদি পঞ্চেন্দ্রিয়রূপ জলে পরিপূর্ণ অতি দুর্গম জন্মনদী অতিক্রম করুন। শুভ্রবসন উজ্জ্বল রং-এ রাঙালে তার যেমন অপূর্ব সৌন্দর্য বিকশিত হয়, তেমনি জ্ঞানযোগ দ্বারা একটু একটু করে সঞ্চিত ধর্ম ও শিষ্টাচার একত্রিত হয়ে এক পরম রমনীয় জ্যোতির্ময় জীবনে সমৃদ্ধ হয়।

অহিংসা ও সত্যবাদিতা সকল প্রাণীর কাছে মঙ্গলজনক ও হিতকর। অহিংসা পরম বা শ্রেষ্ঠ ধর্ম। কারণ তার বীজ সত্যের আধারে সুপ্রোথিত। আমাদের সকল প্রবৃত্তি সত্যের আধারে প্রতিষ্ঠিত। সদাচার যেমন সাধুগণের ধর্ম, তেমনি সাধুগণের লক্ষণও সদাচারের মাধ্যমেই ফুটে ওঠে।

প্রাণীদের প্রবৃত্তি পরম্পরাগতভাবে বিবর্তিত হয়। পাপাচারী ব্যক্তি কাম-ক্রোধ ইত্যাদিকে প্রবৃত্তি রূপে বয়ে বেড়ায়। আবার ধর্মপ্রাণ মানুষ শিষ্টাচারযুক্ত লক্ষণগুলিকে প্রবৃত্তি হিসাবে আত্মস্থ করে। তাঁদের অন্তঃকরণ থেকে হিংসা ইত্যাদি নেতিবাচক গুণগুলি চিরকালের মতো বিলীন হয়ে যায়। তাঁদের অনুসৃত শিষ্টাচার-ধর্ম, যুগে যুগে সম্বর্ধিত হয়। ধর্মের প্রতি আসক্ত, অভিমান শূন্য, দেব-দ্বিজ-সেবাপ্রিয়, শাস্ত্রজ্ঞান সম্পন্ন সদাচারী সেই সব ব্যক্তিরা অমৃতলোকের অধিবাসী হন।

বেদে যাকে পরম ধর্ম বলা হয়েছ, ধর্মশাস্ত্রে যাকে ধর্ম এবং শিষ্টাচার রূপে ব্যাখ্যা করা হয়েছে— এই তিনটি বিষয়ই শিষ্ট ব্যক্তিদের লক্ষণ। তাঁদের নিজ নিজ বিদ্যায়

পারদর্শিতা, তীর্থভ্রমণ, ক্ষমা, সত্য, সরলতা, সদাচারদর্শন, সর্বভূতে দয়া অহিংসা, অপারুযৎ, দ্বিজগণে প্রীতি, ভালমন্দ বিচারবোধ, দান পরায়ণতা, দয়ালু হৃদয় ইত্যাদি ইহলোকের উন্নতি ও পরলোকে অমৃতত্ব লাভের পথকে মসৃণ করে।”

এরপর ধর্মব্যাধ ব্রাহ্মণকে পুনরায় বললেন- “হে দ্বিজবর। আমি যে কাজ করি, তা যে নিতান্তই অপ্রীতিকর এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু বিধাতা পুরুষ হালেন সবচেয়ে শক্তিমান, কারণ পূর্বজন্মের কর্মফল সবাইকে ভোগ করতে হয়। আমার পূর্বজন্মের কর্মদোষেই আমাকে এই জীবিকা বেছে নিতে হয়েছে। এই জীবিকা ত্যাগ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিধির বিধানকে লঙ্ঘন করা যায় না। তাই শত চেষ্টা করেও আমি তাকে বিদায় জানাতে পারছি না। হে ব্রাহ্মণবর। বিধাতা পুরুষই সকল কিছুর নির্ধারক। তিনিই রক্ষক, তিনিই ভক্ষক। আমরা কেবল উপলক্ষ মাত্র।

আমরা যে মাংস বিক্রি করি তা খেলে ধর্ম হয়। কারণ এর দ্বারা দেবতা, অতিথি, চাকর-বাকর এমনকি পিতৃপুরুষদের পূজা হয়ে থাকে। লতা-পাতা, বিভিন্ন পাখি, হরিণ সহ অন্যান্য পশু যে মানুষের ভক্ষ্য তা আমাদের সকলের জানা। উশীনর নন্দন রাজা শিবি নিজের মাংস প্রদান করে স্বর্গলোক প্রাপ্ত হয়েছেন। এক সময় মহারাজা রস্তিদেবের বাড়িতে প্রত্যেক দিন দুহাজার গোবধ করা হতো। তিনি ঐ পশুমাংস দিয়ে প্রত্যহ অতিথি ও অন্যান্যদের মাংস-অন্ন ভোজন করাতেন। এই কারণে সাধারণ জনমানসে তিনি অতুল কীর্তি লাভ করেছিলেন।

হে দ্বিজবর! চারটি মাসে পশু বধের বিধান আছে। শ্রুতি শাস্ত্রে অগ্নিদেবকে মাংসাভিলাষী বা মাংসভুক রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। ব্রাহ্মণগণ যজ্ঞে পশুবলি দিয়ে স্বর্গলাভ করেছেন। তাই আমার বিচার হলো এই যে পূর্বে অগ্নিদেব যদি মাংস প্রিয় না হতেন তাহলে আজ মাংস সাধারণের খাদ্য হয়ে উঠত না। তাই মুনিগণও এই নিয়ে সুন্দর বিধান দিয়ে গেছেন।

যে ব্যক্তি বিধি নির্দিষ্টভাবে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে দেবতা ও পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে মাংস উৎসর্গ করে সেই মাংস প্রসাদ রূপে ভোজন করেন; তাঁর ভোজন দোষ লাগে না। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, শ্রুতিতে তাদের অমাংসাশী বলা হয়েছে। যেমন ব্রহ্মচারী ব্রাহ্মণ ঋতুকালে নিজের স্ত্রীর সঙ্গে একাত্ম হলে যেমন ব্রহ্মচর্যের হানি হয় না, তেমনি বিধি মেনে মাংস ভোজন করলে তা কোন মতে পাপ কাজ বলে বিবেচিত হয় না।

হে বিপ্লবর। যেহেতু মাংস বিক্রি আমার নিজের ধর্ম, তাই আমি এই ধর্ম ত্যাগ

ব্রাহ্মাণ তখন ব্যাধকে বললেন— “তোমার এই মাংস বিক্রি করার পেশাটি মোটেই ভাল নয়। তোমার পক্ষে এটি নিতান্তই বেমানন। তোমাকে এই কাজ করতে দেখে আমার খুব দুঃখ হচ্ছে।”

ব্যাধ বললেন- “হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ! আমি আমার পূর্ব-পুরুষদের আমলের এই কাজটি করে চলেছি। এ নিয়ে আমার মনে কোন ক্ষোভ নেই। আমি সব সময় ধর্মের পথে থেকে কাজ করার চেষ্টা করি। সব সময় সত্য কথা বলি। সাধ্যমত দান ধ্যান করি দেবতা, অতিথি বা ভৃত্যদের উচ্ছিষ্ট ভোজন করি। কারুর কোন রকম নিন্দা করি না। হে দ্বিজন্ডোম। পূর্ব-পুরুষদের জীবিকা বা পেশাকে ভর করে চাষবাস, পশুপালন, ব্যবসা-বাণিজ্য, এমন কি, ভিন্ন ভিন্ন উপজীবিকার মানুষ অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।

গুদ্রের কাজ সেবা-শুশ্রুষা দান, বৈশ্যের কাজ চাষবাস, গোচারণ ইত্যাদি; ক্ষত্রিয় বর্ণের লোকদের কাজ যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রাজ্যশাসন এবং ব্রাহ্মণেরা ব্রহ্মচর্য, জপতপ, যাজন, যাজন প্রভৃতিতে যুক্ত থাকেন। রাজা প্রজাকুলকে ধর্মানুসারে রক্ষা করেন; এবং কর্মহীনদের নিজ নিজ যোগ্যতা অনুসারে কর্মে নিযুক্ত করেন। প্রজারা যাতে সব সময় ধর্মের পথে থাকে, বিচ্যুত না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখেন।

হে ব্রাহ্মণ, এই জনক রাজ্যে একজনও ব্যক্তি নেই যিনি অধার্মিক, এই রাজ্যের সকলেই নিজেদের নির্দিষ্ট পেশা বা জীবিকাতেই নিয়োজিত। রাজা জনক এতখানি নীতিপরায়ণ যে, তাঁর পুত্রও যদি কোন অপরাধ করেন, তিনি তাঁকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে পিছপা হন না। তিনি কখনো কোন ধার্মিক ব্যক্তিকে অসম্মান করেন না। তিনি রাজ্যের উন্নতি ও সুশাসনের সকল কাজই ধর্মানুসারে পরিচালনা করেন।

হে বিপ্লাবর। আমি নিজে কখনো পশু হত্যা করি না। অন্যের দ্বারা হত্যা করা হরিণ, শুয়োর, ও মহিষের মাংস বিক্রি করে থাকি। আমি মাংস বিক্রি করলেও নিজে মাংস খাই না। শাস্ত্রের নিয়ম মেনে আমি সংযত সহবাস করি। সারাদিন উপবাসী থেকে শুধুমাত্র রাত্রে খাওয়া-দাওয়া করি। আমার বিশ্বাস এইভাবে অনুশাসন মেনে জীবন যাপন করলে যে কোন উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিও ধীরে ধীরে ধর্মনিষ্ঠ ও সদাচারী হয়ে উঠবে।

অত্যাচারী রাজাদের দোরে অধর্ম সৃষ্টি হয়। এক সময় তার প্রভাব প্রজাদের ওপর গিয়ে পড়ে। প্রজারা তার কলে সংকর দোষে দূষিত হয়। দেশে বামন, খোঁড়া, অন্ধ, বধির, জীব ইত্যাদি নানা ধরনের মানুষের জন্ম হয়। তাই রাজার অধর্মই বিনাশের মূল। অবশ্য আমাদের পরম শ্রদের রাজা জনক অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে প্রজা পালন করেন। তাই তাঁর রাজ্যও সব দিক থেকে সুরক্ষিত, বিপদমুক্ত।

যাঁরা ব্যক্তিগত ভাবে আমার নিন্দা করে এবং যাঁরা আমার প্রশানো করে আমি বিনীতভাবে আমার পরিসেবা দিয়ে তাঁদের সবাইকে পরিস্ফুট করি। আনা

উচিত সাধ্যমত অন্নদান করা। ধর্মের বিধান মেনে অপরের প্রতি সমব্যাথী হার যথাসাধ্য সম্মাননা জানানো। ত্যাগ হলো মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ ধর্ম। মিথ্যা কথা বলার অভ্যাস ন থেকে চিরতরে মুছে ফেলা উচিত। অবাচিত ভাবে যদি আলোর কোনো উপকার করতে পারি, তাও করা উচিত। কান, ক্রোধ বা বিশ্লেষকে চিরকালের জন্য বর্জন করতে হয়। কোন কিছু প্রিয় ঘটনা ঘটলে তাতে খুব বেশি উচ্ছাস দেখানো উচিত নয়। তেমনি অপ্রিয় কিছু ঘটলে তার জন্য ভেঙে পড়াও ঠিক নয়। যত কঠিন অর্থকষ্ট আসুক, তার জন্য অধর্মকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। যে কাজ করে মনে আনন্দ পাওয়া যায়, তাতেই নিযুক্ত থাকা ভালো। পাপীর পাপ কর্মকে ঘৃণা করা দরকার। কিন্তু পাপীর প্রতি চিরকাল সদ্ব্যবহার করতে হয়। মনে রাখবেন, অসৎ কাজে লিপ্ত হওয়া বিনাশের মূল কারণ। আর যারা ধর্ম নেই বলে সাধু ব্যক্তিদের বা ধর্মকে অবজ্ঞা করে তারা একদিন বিনষ্ট হবেই।

অহংকারী ব্যক্তির মনে কখনোই সচ্চিন্তা আসে না। মূর্খ ব্যক্তি শুধুমাত্র আত্ম কারণে অন্য সকলের কাছে সমাদর পান না। অপরের নিন্দা এবং নিজের গুণগান করেন না এমন মানুষ জগতে দুর্লভ। খারাপ কাজ করে মনে যদি অনুতাপ আসে, যে, ভবিষ্যতে আর এমন ভুল করবো না, তা মানুষকে আত্মোন্নতির দিকে এগিয়ে নেয়। ধার্মিক ব্যক্তি যদি না জেনে বুঝে কোন ভুল করে বসেন, তাতে তাঁর কোন পাপ হয় না। তাঁর অর্জিত সুকর্মের ফল থেকে তা বিনষ্ট হয়। পাপ কাজ করে পরে অস্বীকার করলে তা অন্তরাত্মা এবং দেবগণ দেখতে পান। যিনি টাকা পয়সা ইত্যাদি দান করে সাধুদের অভাব দূর করেন, তিনি মোক্ষলাভের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যান। পাপী যদি পাপ কাজ থেকে সরে গিয়ে কোন মঙ্গলজনক কাজে আত্মনিয়োগ করে তাহলে সেই ব্যক্তি উজ্জ্বল চন্দ্রমার মতো সব পাপ থেকে মুক্ত হন। সূর্য যেমন উদিত হয়ে জগতকে আলোকজ্জ্বল করে, তেমনি কল্যাণপ্রদ কর্ম সকল পাপকে বিনষ্ট করে।

হে দ্বিজোত্তম! লোভই সকল পাপ কর্মের মূল বা আধার। লোভী, অজ্ঞান, অনুরদর্শী ব্যক্তিই পাপ কাজে লিপ্ত হয়। অধার্মিক ব্যক্তি ঘাসে ঢাকা কূপের মতো মেকী ধর্মের আচরণে মোড়া থাকে। খোলা চোখে দেখলে মনে হবে তারা সদাচারী, ধার্মিক এবং পবিত্র, আসলে তাদের জীবন নিষ্ঠা-বর্জিত, নিষ্ফল এবং লক্ষ্যহীন।”


Post a Comment

0 Comments