1 মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে আলোচনা
আজকালের প্রতিবেদন
মাঠে নেমে কাজ করে যে সমস্ত মহিলা সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়নের দিশা দেখিয়েছেন, মহিলাদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন, তাঁদের কথা শুনল কলকাতা। মহিলাদের ওপর সামাজিক হিংসা বন্ধ করতে রবিবার সচেতনতা কর্মসূচি পালন করল বেঙ্গল অবস্টেট্রিক অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি (বিওজিএস)। এদিন কলকাতার টাউন হলে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ডাঃ বাসব মুখার্জি, বিওজিএস-এর আলোচনা সভা। ডাঃ অমিত বসু এবং স্বয়ম সংস্থার ডিরেক্টর অমৃতা দাশগুপ্ত। এখানে দুটি প্যানেল ডিসকাশনের আয়োজন করা হয়েছিল। বিষয় ছিল, লিঙ্গভিত্তিক হিংসা। ছিল পোস্টার প্রতিযোগিতাও। এদিনের আলোচনা সভায় মহিলাদের ওপর কর্মক্ষেত্রে হিংসা এবং অন্যান্য বিষয়ে বিশিষ্টরা বক্তব্য পেশ করেন। উপস্থিত ছিলেন আফলাতুস ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট অনামিকা চৌধুরি, ডাঃ কিরণ দেভিনেনি। ৮৮ বছরের পুরনো বিওজিএস প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ২১ জন চিকিৎসক যুক্ত রয়েছেন মাহ লাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার জন্য। শিক্ষা ও অন্যান্য বিষয় নিয়েও এঁরা কাজ করে থাকেন।
2। আকাশের গায়ে ফুটে ওঠা মহাজাগতিক বিস্ময়ের ছবি
সব্যসাচী সরকার
আকাশের গায়ে বিভিন্ন সময়ে নানা দৃশ্য আমরা দেখে থাকি। কিন্তু অনেকেই ছবি তুলে রাখি না। শীতের আকাশ, গ্রীষ্মের আকাশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে অনেক কিছুই ঘটে চলে আকাশের গায়ে। আসলে সে সবই মহাজাগতিক দৃশ্যাবলি। সেই সব দৃশ্যের তোলা ছবির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে এমপি বিড়লা তারামণ্ডলে। দিনের বা রাতের আকাশের নানা ধরনের ছবি নিয়েই এই প্রদর্শনী। সহয়তা করছে নিকন। গত তিন বছর ধরে এই অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফি সাড়া জাগিয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে। চার বাঙালি মিলে খুলেছিলেন তাঁদের সংস্থা শব্দরঙ্গ ৯৮৮২ ‘অ্যাস্ট্রোনোমাডস বাংলা'। এঁরা হলেন বাসুদেব চক্রবর্তী, গৌতম দে, সুমিত সাহা এবং সৌম্যদীপ মুখার্জি। গোটা দেশে এই অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ার অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফি এঁদের হাত ধরেই বিভিন্ন মানুষকে উৎসাহিত করছে ছবি তুলতে। আকাশ দেখুন, ছবি তুলুন – এই কাজ চার বাঙালির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে নাসা এবং ন্যাশনাল জিওগ্রাফি। এই দুই সংস্থার প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে চার বাঙালির কাজর্মের খবর। আগামী ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি 'লাইটস অফ কসমস' শীর্ষক প্রদর্শনীতে থাকছে ১০০টিরও বেশি ছবি। এসবই সাধারণ প্রতিযোগিতায় জায়গা নিয়েছিল। প্রথম দিন ১০ জন খ্যাতনামা অ্যাস্ট্রোফটেগ্রাফার এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসবেন বেশ কয়েকজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী। বিড়লা তারামণ্ডলে প্রতিদিন দুপুর ২টো থেকে সন্ধে ৭টা পর্যন্ত প্রদর্শনী চলবে। অ্যাস্টোনোমাডস বাংলা সংস্থা এ দেশে একমাত্র বার্ষিক অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফির আয়োজন করে থাকে। এবং সংস্থার উদ্যোগেই আকাশের ছবি তোলার প্রতিযোগিতাও হয়, যা গোটা বিশ্বে মানুষের তোলা। এবারের বিশেষত্ব হল, ৩০টি বাছাই করা ছবি, যা ইন্ডিয়ান ৩০টি বাছাই করা ছবি, যা ইন্ডিয়ান দ্বিতীয় বৃহত্তম ফটো প্রতিযোগিতা।
3: সম্ভল থেকে আজমেঢ়, আক্রান্ত সমন্বয়ী সংস্কৃতি
গৌতম রায়
থমে উত্তরপ্রদেশের সম্ভল। তারপর মধ্যকালীন ভারতের সমন্বয়ী সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান ঋত্বিক, সুফি সম্ভ খাজা মঈনুদ্দিন চিস্তির দরগা আজমেঢ় শরিফ ঘিরে হিন্দুত্ববাদীদের আস্ফালন। এমন ঘটনাক্রম আবার একটা ভয়ঙ্কর প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে উঠে আসতে শুরু করেছে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। একাধিক উপাসনাস্থল, মাজার, দরগা ঘিরে হিন্দুত্ববাদীরা দীর্ঘদিন ধরেই আগ্রাসী মানসিকতা নিয়ে চলছে। তাদের মনগড়া অভিযোগ, হিন্দু উপাসনালয় ধ্বংস করেই নাকি সংখ্যালঘুদের ওইসব উপাসনাস্থল তৈরি করা হয়েছে।
এই মনগড়া অভিযোগের সপক্ষে কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও ইতিহাস- সম্মত, বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ আরএসএস-বিজেপি বা তাদের সহযোগী শক্তিগুলি দেখাতে পারেনি। হিন্দুত্ববাদীদের উদগ্র ইচ্ছা, এই সমস্ত উপাসনাস্থল, দরগা, মাজার ধ্বংস করে সেই সব জায়গায় মন্দির নির্মাণ করা হবে। তাদের আগ্রাসী দৃষ্টিতে এমনকী পাকিস্তানেরও কয়েকটি উপাসনাস্থল আছে। একটা সময় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদে সমীক্ষার নামে কী হয়েছিল, সেটা সকলেরই জানা। ঠিক সেই পরিস্থিতিটাই আবার হিন্দুত্ববাদীরা গোটা ভারত জুড়ে তৈরি করতে চাইছে। তাদের সেই পরিকল্পনার অঙ্গই হল উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে সমীক্ষা। আজমেঢ় শরিফে সমীক্ষার দাবি। তবে এটা অত্যন্ত স্বস্তির যে, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট স্থানীয় আদালতগুলির সমীক্ষার নির্দেশ ঘিরে সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরি হওয়ার যে প্রবণতা, তাকে আটকানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই সমীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় আবেদনের শুনানি হাইকোর্টে হবে, সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পর সত্যিই একটা স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হবে। তবুও সাধারণ মানুষের মনে, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের মধ্যে এ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। আরএসএস চায়নি, চায় না। ভবিষ্যতেও চাইবে না। দশ বছর কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় থাকার ফলশ্রুতিতে ভারতের সাধারণ মানুষের রুটি-রুজির সমস্যা আজ এমন একটা জায়গায় চলে গেছে যে, দেশের প্রায় সর্বত্রই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে একটা প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা কাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতাকে মোকাবিলা করার উদ্দেশ্য নিয়ে উগ্র সম্প্রদায়িকতার ঢাকে কাঠি দিতে শুরু করেছে গোটা হিন্দুত্ববাদী শক্তি। মোদি সরকারের সার্বিক ব্যর্থতার জেরে বেকারি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ভয়াবহ দুর্নীতি – এই সমস্ত কিছুর ফলশ্রুতিতে সাধারণ মানুষ এখন বিজেপির ধর্মের নামে রাজনীতিকে ব্যবহারের এই কৌশল আর কিছুতেই গ্রহণ করছেন না।
ঠিক সেই কারণেই সাধারণ মানুষের ভাবাবেগকে ব্যবহার করে একেবারে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পূর্ববর্তী সময়কালের মতো বিভাজনের রাজনীতিকে উগ্র থেকে উগ্রতর করে তুলে, মানুষের মন থেকে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার সমস্ত দিকগুলিকে মুছে দিতে চাইছে আরএসএস-বিজেপি। ঠিক সেই কারণেই একের পর এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনাস্থল ঘিরে এভাবে নিত্যনতুন বিতর্কের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। সমীক্ষার নাম করে এমন একটা আবহ তৈরি করা হচ্ছে, মানুষ যাতে কোনও অবস্থাতেই নিজের একটা সময় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ সমীক্ষার নামে যা হয়েছিল, ঠিক সেই পরিস্থিতিই এখন হিন্দুত্ববাদীরা ভারত জুড়ে তৈরি করতে চাইছে। সেই পরিকল্পনার অঙ্গই হল সম্ভলে সমীক্ষা, আজমেঢ় শরিফে সমীক্ষার দাবি।
বিগত লোকসভা নির্বাচনে আরএসএসের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি এককভাবে গরিষ্ঠতা পায়নি। এনডিএ নামক নীতিবিহীন, সুবিধাবাদী জোটকে সঙ্গে নিয়ে তাদের সরকার পরিচালনা করতে হচ্ছে। তারই মধ্যে ২০২৫ সালে আরএসএসের শতবর্ষ পূর্তিকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের পরিকল্পনা ছকে রাখা হয়েছে। সেই পরিকল্পনার অন্যতম বিষয় হল, ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে ধ্বংস করা। সামগ্রিকভাবে ভারতীয় সংবিধানের যে মূল স্তম্ভ, সেই ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্রকে পদদলিত করে, সংবিধানের মূল পরিকাঠামোকেই বদলে দেওয়া। হিন্দু রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে ভারতকে স্থিত করার জন্য হিন্দুত্ববাদীদের এই পরিকল্পনা নতুন নয়। বিগত দশ বছর কেন্দ্রে বিজেপির নেতৃত্বে একক গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার পরিচালিত হওয়ার সূত্রে আরএসএস কার্যত ধরেই নিয়েছিল, ২০২৪-এর নির্বাচনে তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি একক গরিষ্ঠতা নিয়েই ক্ষমতায় ফিরে আমলে। কোনও কোনও পক্ষ থেকে বলা হয়, বিগত লোকসভা ভোটের আগে আর এস এসের সঙ্গে বিজেপির খানিকটা দূরত্ব তৈরি হওয়ায়, বিজেপিকে সর্বাঙ্গীণভাবে সহযোগিতা করেনি সঙ্ঘ। বাস্তব রাজনীতিতে এটা ঠিক নয়।
গোটা হিন্দুত্ববাদীদের যে রাজনৈতিক কর্মপদ্ধতি, তার বিশ্লেষণ থেকে এটা পরিষ্কার যে, সঙ্ঘ-বিজেপির মধ্যে প্রকাশ্যে যতই দ্বন্দ্ব আমরা দেখতে পাই না কেন, সেটা কিন্তু সবটাই লোকদেখানো। বিজেপি সমস্যায় পড়ে, সংসদীয় রাজনীতিতে তারা কমজোরি হয়ে পড়ে – এমনটা কোনওদিনই অধিকার সম্বন্ধে সচেতন হতে না পারে। ভয়াবহ বেকারত্ব নিয়ে মুখ খুলতে না পারে। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়ে সোচ্চার না হতে পারে। ঠিক সেই কারণেই আজ সাধারণ মানুষকে ধর্মের বটিকা সেবন করিয়ে, তাকে আবার বিভাজনের রাজনীতির ময়দানে এনে দাঁড় করানোর রাজনৈতিক খেলায় নেমেছে আরএসএস ও তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি।
ভারতের প্রবাহমান বৈচিত্রময় সমন্বয়ী সংস্কৃতিতে হিন্দুত্ববাদীরা বিশ্বাস করে না। ভারতীয় সংস্কৃতিকে তারা দেখে রাজনৈতিক হিন্দুত্ব-সংস্কৃতির সমার্থক হিসেবে। তাই তারা হিন্দু-মুসলমানের যুক্ত সাধনার ধারাকে কখনও স্বীকার করে না। ভারতীয় সংস্কৃতিতে হিন্দু-মুসলমানের যুক্ত সংস্কৃতির যে ধারা রয়েছে, সেটি ভারতীয় উপমহাদেশে যেমন হিন্দু সম্প্রদায়িক মৌলবাদী শিবির কোনওভাবে মেনে নিতে পারে না, ঠিক তেমনভাবেই ইসলামি মৌলবাদী শিবিরও তা মেনে নিতে পারে না। সম্ভল থেকে আজমেঢ় শরিফ, মধ্যকালীন ভারতের সমন্বয়ী সংস্কৃতির প্রতীক, খাজা মঈনুদ্দিন চিস্তির দরগা — এগুলিকে আরএসএস-বিজেপি টার্গেট করছে। সেটা তারা করেছে কেবলমাত্র বিভাজনের রাজনীতিকে উসকে দিতেই নয়। এ দেশে অনেকেই আছেন যাঁরা জন্মসূত্রে হিন্দু, কিন্তু রাজনৈতিক হিন্দুত্ববাদী নন। এমন মানুষ আছেন যাঁরা হিন্দু-মুসলমানের সহাবস্থানে বিশ্বাস করেন, যাঁরা সমন্বয়ী চেতনাকে নিজেদের যাপনচিত্রের অন্যতম প্রধান অঙ্গ বলে মনে করেন। সেই ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী মানুষদের ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনার আব্বাস এস ও বিজেপির অন্যতম উদ্দেশ্য। তারা কেবলমাত্র ভারতকে পাজনৈতিক হিন্দুত্ববাদী/ দেশে পরিণত করতে চায় তা নয়। ভারতের প্রবহমান আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ধারায় যে সমন্বয়ী সংস্কৃতির বোধ রয়েছে, সেই ভাবধারার মূলে কুঠারাঘাত করাই হল বিজেপি-আরএসএসের একমাত্র লক্ষ্য। হিন্দি বলয়েও রাজনৈতিক হিন্দুত্বের ঘেরাটোপের বাইরে প্রবহমান সমন্বয়ী ভারতীয় সংস্কৃতির একটা ধারা আছে। সেই সংস্কৃতিকে আক্রমণ করার উদ্দেশ্য নিয়েই আজ সম্ভল থেকে আজমেঢ় শরিফ নিয়ে বিতর্ককে জোরদার করা হচ্ছে।
4: নারী-প্রগতির আলোকশিখা
দুই বাংলাতেই ৯ ডিসেম্বর দিনটি বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুদিন হিসেবে পালিত হয়। তাঁর মৃত্যু হয়েছিল ১৯৩২ সালে ৯ ডিসেম্বর। কিন্তু জন্মদিন নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে ১৮৮০ সালের ৯ ডিসম্বর তারিখটিকে তাঁর জন্মদিন বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। যাই হোক, বাংলাদেশে ৯ ডিসেম্বর দিনটি 'রোকেয়া দিবস' হিসেবে পালিত হয়। রোকেয়া নারী প্রগতির পথে একটি আলোকবর্তিকা। তাঁর পরিবার শিক্ষিত এবং অভিজাত হলেও, বাড়ির মেয়েদের শিক্ষালাভের কোনও অধিকার ছিল না। উল্টে তাদের রক্ষণশীলতার শিকলে কীভাবে বেঁধে রাখা হত তা রোকেয়া নিজেই জানিয়ে গেছেন। বাড়িতে বাইরের মহিলা অতিথি-অভ্যাগতরা এলেও পাঁচ বছরের রোকেয়াকে চিলেকোঠায় লুকিয়ে থাকতে হত। তিনি লিখেছেন, 'আমার খাওয়ার খোজ খবরও কেহ নিয়মমতো লইত না। ... প্রায় সমস্ত দিন সেই খানে অনাহারে কাটাইতাম।'
শৈশব থেকে এই বঞ্চনা ও বন্দিদশা হয়তো রোকেয়াকে মুক্তির পথ খুঁজতে উদ্যোগী করেছিল। আর সেই পথ ধরেই অচলায়তনের বেড়া ভেঙে তাঁর উত্তরসূরিরা মুক্তির স্বপ্ন দেখার সাহস পেয়েছিলেন। এদের দেখানো পথেই আজ বহু মহিলা সমস্ত বাধা- বিঘ্ন অতিক্রম করে এগিয়ে চলেছেন। তাঁরা আজ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ও নিজের অধিকার বুঝে নিতে পথে নামতেও পিছুপা হচ্ছেন না। রোকেয়ার বিয়ে হয় ১৮৯৮ সালে ডেপুটি মাজিস্টেট সইদ সাখাওয়াৎ হোসেনের সঙ্গে। সইদ হোসেন ছিলেন বিহারের বাসিন্দা। লেখা একমাত্র উপন্যাস। এর রচনা কাল ১৯০২ সাল হলেও এটি প্রকাশিত হয়েছিল ২২ বছর পরে ১৯২৪ সালে। এই গ্রন্থটির প্রুফ দেখে দিয়েছিলেন অধ্যাপক বিনয়ভূষণ সরকার। ১৯০৯ সালে ৩ মার্চ দীর্ঘদিন রোগ ভোগের পর সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের মৃত্যু হয়। এই বছরই ডিসেম্বর মাসে তিনি প্রয়াত স্বামীর নামে ভাগলপুরে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু স্বামীর প্রথম পক্ষের মেয়ে ও জামাইয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সবকিছু ছেড়ে কলকাতায় চলে আসতে বাধ্য হন। এখানে ১৩ নম্বর ওয়ালিউল্লাহ লেনে গুটিকয়েক মেয়েকে নিয়ে আবার একটি স্কুল চালু করেন। রোকেয়া আজ থেকে শতবর্ষ পূর্বে 'পদ্মরাগ' উপন্যাসের এক নারী চরিত্রকে দিয়ে বলিয়েছেন, ‘আমিও দেখাইতে চাহি যে, দেখ, তোমাদের ঘর করা ছাড়া আমাদের আরও পথ আছে। স্বামীর ঘর-করাই নারী জীবনের সার বেগম রোকেয়া নহে। মানবজীবন খোদাতালার অতি মূল্যবান দান- তাহা শুধু রাঁধা-উনুনে ফুঁ পাড়াও- আর কাঁদার জন্য অপব্যয় করিবার জিনিস নহে।' ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত তাঁর সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলটিকে ১৯৩০ সালে বেগম রোকেয়া বহু সাধনা, বহু পরিশ্রমে ইংরেজি মাধ্যম গার্লস স্কুলে রূপান্তরিত করেন। এটা তাঁর জীবনের সব থেকে বড় সাফল্য। স্কুলের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রমে তাঁর শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছিল। তবুও তিনি থেমে যাননি। তিনি স্কুলে শরীর চর্চা, গান-বাজনা শেখানোরও ব্যবস্থা করেন। তাঁর সম্পত্তি ও সমস্ত সঞ্চিত টাকা এই স্কুলে ব্যয় করেছিলেন। আজও সেই সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলটি ১৭, লর্ড সিনহা রোডে আপন মহিমায় ভাস্কর। শুধু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেই রোকেয়া থেমে থাকেননি। মেয়েদের শিক্ষা, স্বনির্ভরতা ইত্যাদির লক্ষ্যে বিয়ের পর রোকেয়া স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি (৯ ডিসেম্বর ১৮৮০–৯ ডিসেম্বর ১৯৩২) তিনি 'আঞ্জুমান-ই-খাওয়াতেন-ই-ইসলাম' ভাগলপুর চলে যান। বাপের বাড়িতে দাদা ইব্রাহিম রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে রকেয়াকে অক্ষর চিনিয়ে ছিলেন। তিনিই রোকেয়ার প্রথম শিক্ষাগুরু। বিয়ের পর ডেপুটি ম্যাজিস্টেট স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের উৎসাহে তিনি লেখালিখি শুরু করেন। রোকেয়া ছিলেন একাধারে গল্পকার, নিবন্ধকার, উপন্যাসিক ও সমাজ-সংস্কারক। এই সমস্ত লেখার মধ্যে তিনি ধর্মের নামে নারীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া বৈষম্যমূলক রীতি-রেওয়াজের বিরোধিতা করেছেন। সেই সঙ্গে নারীশিক্ষা, নারীর অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা ইত্যাদির স্বপক্ষে অকাট্য যুক্তি তুলে ধরেছেন। “স্ত্রী জাতির অবনতি” প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, “আমরা সমাজেরই অর্থ অঙ্গ। আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কিরূপো কোনও ব্যক্তির এক পা বাঁধিয়া রাখিলে খোঁড়াইয়া খোঁড়াইয়া সে কতদূর চলিবে?” “পদ্মরাগ' তাঁর নামে একটি মহিলা সমিতিও গড়ে তুলেছিলেন। রোকেয়া সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল স্কুলের দোতলায় একপাশে দুটি ঘরে বোন হোমায়রা চৌধুরি ও খুড়তুতো বোন মরিয়ম রসীদকে নিয়ে থাকতেন। তাঁর শরীর ১৯৩২ সালের শুরু থেকেই ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। রোকেয়ার মৃত্যুর সময় হোমায়রা ও মরিয়ম তাঁর পাশে ছিলেন। এই বছরই ৯ ডিসেম্বর ভোর রাতে ফজরের নামাজের জন্য যখন উজু করার সময় তিনি পড়ে যান। তাঁর ডাক শুনে দুই বোন ছুটে আসেন। বুকে অসম্ভব রাখা। ডাক্তার ডাকার সময়টুকু না-দিয়েই তাঁর নাড়ির স্পন্দন থেমে যায়। কলকাতায় তাঁর সমাধির জন্য এক টুকরো জমি কেউ দেয়নি। তাই সোদপুরে তাঁকে সমাহিত করা হয়েছিল। দুঃখের বিষয় আজও এই বাংলায় তাঁর কর্মময় জীবনের কোনও মূল্যায়ন হয়নি।
5: তান্ত্রিকের কথায় যুবকের মুণ্ডচ্ছেদ
সংবাদ সংস্থা
গাজিয়াবাদ, ৮ ডিসেম্বর
কোনও মানুষের মাথার খুলি জোগাড় করে এনে দিতে পারলে কোটিপতি হওয়া সম্ভব। ইউটিউব-তান্ত্রিকের এমন পরামর্শেই এক যুবকের মুন্ডু কেটে নিল আরও যুবক। ঘটনা যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের। নেমে জানা যায়, দেহটি বিহারের মোতিহারি জেলার রাজু কুমারের। পুলিশ জানিয়েছে, নরেন্দ্র নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ডিসেম্ব পবন ও পঙ্কজ নামে দুই তান্ত্রিকের পরিচয় হয় বিকাশের। দুই হর্নবিল তান্ত্রিক জানায়, তারা তন্ত্রসাধনা, কালো জাদু জানে। শুধু একটা বর্ণাঢ্য উ মানুষের মাথার খুলি জোগাড় করে দিলেই তারা বিকাশকে বিদেশে কোটিপতি বানিয়ে দেবে। ৫০ থেকে ৬০ কি সামা পরিচিত এক যুবককে বাড়িতে ডেকে এনে দুই সঙ্গীর সাহায্যে খুন করে বিকাশ। তার পরে সেই কাটা মাথা নিয়ে যায় তান্ত্রিকের কাছে। বিকাশ ও তার দুই সঙ্গী এবং সেই তান্ত্রিক বাবাজিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়াও একটি পশুর খুলি, ধারালো অস্ত্র এবং অপরাধে ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে। গাজিয়াবাদের টিলা মোড় এলাকা থেকে একটি মুণ্ডুকাটা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তে কোটি টাকা পাবে বিকাশ। এর পর একদিন উৎসব রাজুকে নিজের বাড়িতে ডেকে আনে বিকাশ। রিওর উ ধনঞ্জয় ও নরেন্দ্র নামে দুই সঙ্গীর সাহায্যে রাজুকে খুন করে। (গ্রামপ্রধ রাজুর মুন্ডু কেটে দুই তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর, তার অনুষ্ঠানে দেহ টিলা মোড় এলাকায় একটি ফাঁকা জায়গায় পুঁতে দেয়। মঙ্গলবার দুই তান্ত্রিক ছাড়াও বিকাশ এবং তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তার এবারের করেছে পুলিশ। ধনঞ্জয় তদন্তকারীদের জানিয়েছে যে, তারা অধিকত ‘পরমাত্মার নির্দেশেই রাজুকে খুন করেছে।
6: এইচআইভি-পজিটিভে এখন শীর্ষে দক্ষিণ, বিজেপি-শাসিত নানা রাজ্য
আজকালের প্রতিবেদন
দিল্লি, ৮ ডিসেম্বর
সারা ভারতে এইচআইভি-পজিটিভ রোগীর সংখ্যার নিরিখে একেবারে ওপরের সারিতে রয়েছে মহারাষ্ট্র। তৃণমূল সাংসদ মালা রায়ের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অনুপ্রিয়া প্যাটেল। বিগত পাঁচ বছরে সারা দেশে রাজ্যভিত্তিক এইচআইভি-পজিটিভ পুরুষ ও মহিলার তথ্য চেয়েছিলেন মালা রায়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর জবাবে দেখা গিয়েছে, বিজেপি-শাসিত বিভিন্ন রাজ্য এবং দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে এইচআইভি-পজিটিভ পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা অনেক বেশি। তুলনামূলক ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম বাংলায়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ সালে এইচআইভি-পজিটিভ রোগীদের তালিকার শীর্ষে রয়েছে বিজেপি-শাসিত রাজ্য মহারাষ্ট্র। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এবং ডাবল ইঞ্জিন-শাসিত রাজ্যটিতে রোগীর সংখ্যা ২ লক্ষ ৩৯ হাজার ৭৯৭। তার মধ্যে আক্রান্ত পুরুষ ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৭৮৪ এবং মহিলা ১ লক্ষ ২৩ হাজার ২৯৪। এছাড়া মহারাষ্ট্রের ৭১৯ জন রূপান্তরকামী এইচআইভি-পজিটিভ বলে জানানো হয়েছে পরিসংখ্যানে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অন্ধ্রপ্রদেশে ২০২৩-২৪ সালে
7: সন্তান সাইবার বুলির শিকার? উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন এখনই
এই সময়: ক্লাস ইলেভেন শ্রীতমার (নাম পরিবর্তিত) হাসি খুশি ছবি ও ভিডিয়ো ছিল তারই দিদির ইনস্টা রিলস্-এ। সেখান থেকে তার ছবি চুরি করে সেই ছবি বিকৃত করা হয়েছিল। তারপর তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মোটা টাকা চেয়ে ব্ল্যাকমেল করে মেসেজ আসে দিদির ফেসবুক মেসেঞ্জারে। এক জনপ্রিয় গায়কের অন্ধ ভক্ত হওয়ায় ক্লাস সেভেনের সুমনকে (নাম পরিবর্তিত) সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে লাগাতার বুলি করতে থাকে তারই কয়েকজন সহপাঠী। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে সুমন। একটি জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাবের সমর্থক হওয়ায় ঋষভকে (নাম পরিবর্তিত) কয়েক সপ্তাহ ধরে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল দিচ্ছিল পাশের পাড়ার প্রতিদ্বন্দ্বী ফুটবল ক্লাবের সমর্থক কয়েক জন যুবক। এ সবের জেরে ওই পড়ুয়ারা কেউ অতিষ্ঠ হয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ছেড়েছে, কেউ বা সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ জানিয়েছে। কেউ মনমরা হয়ে গিয়েছে। ওরা সবাই স্কুলে পড়ে। দেখা গিয়েছে, এদের অভিভাবকরা কিন্তু কেউই জানেন না এ সব ঘটনা। অথবা জানলেও অনেকে গুরুত্ব দেননি। সেটা যে কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তা ভেবেই শিহরিত হচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, ভারতে কত জন নাগরিকের সাইবার অপরাধ নিয়ে সচেতন থাকার সদিচ্ছা রয়েছে, তা যথেষ্ট সন্দেহের রাজর্ষি রায় চৌধুরী, সাইবার বিশেষজ্ঞ দেশে সাইবার অপরাধের মাত্রা যতটা জোরালো এবং অপরাধের ধরন যতটা কুৎসিত, আইন ততটা কঠোর এবং ফুলপ্রুফ নয়। ফলে শাস্তির বিধান লঘু হওয়ায় সাইবার অপরাধীদের তেমন ভয় ডর নেই। এই সুযোগেই স্কুল পড়ুয়া কিশোর, কিশোরী, কলেজ পড়ুয়া তরুণ তরুণীদের সফট টার্গেট হিসেবে বেছে নেয় সাইবার অপরাধীরা। অশ্লীল চ্যাট, মেসেজ, আক্রমণাত্মক মন্তব্য, সাইবার হেনস্থা দিয়ে বুলিং শুরু হয়। তারপর 'শিকার বুঝে' চলতে থাকে সেক্সটরশন, ব্ল্যাকমেলিং, গ্রেট। কিন্তু আপনার সন্তানকে সুরক্ষিত রাখতে কী কী ব্যবস্থা নেবেন? সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ রাজর্ষি রায়চৌধুরী চারটি পদক্ষেপের কথা জানাচ্ছেন। প্রথমত, সাইবার অপরাধ ও সাইবার আইন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নিময়িত ভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি বা অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রামের আয়োজন করতে হবে স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে। প্রতিটি ক্লাসের পড়ুয়াদের নিয়ে প্রতি মাসে একবার করে এই কর্মসূচি পালন করতে হবে। এতে অভিভাবক, পড়ুয়া এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, যখনই ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত আক্রমণের মুখে পড়বে কেউ, তখনই মা-বাবা বা এই সময়: প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোয় ইতিহাস বিষয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। একমাত্র ইতিহাসে ভয় নয়, সরকারি অভিভাবকদের সঙ্গে সঙ্গে জানাবে তারা। সে যদি নিজের ব্যক্তিগত অনুভূতি, দুর্বলতা, ছবি বা তথ্য কারও সঙ্গে শেয়ার করে থাকে এবং সে জন্য তাকে যদি কেউ বুলি করে, ব্ল্যাকমেল করে তাহলে লজ্জা বা ভয় না পেয়ে অবশ্যই অভিভাবকদের জানাতে হবে।
তৃতীয়ত, অভিভাবকরাও কেবল অভিভাবকত্ব না করে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বন্ধুতা তৈরি করুন। সন্তানের সঙ্গে ভাবগম্ভীর দূরত্ব রাখলে চলবে না। সে যাতে অভিভাবকদের কাছে সহজ হয়ে সব কিছু সমস্যা শেয়ার করে, তার জন্য তার সঙ্গে বন্ধুর মতে মিশতে হবে। সন্তানের আস্থাভাজন হতে হবে যাতে সন্তান সহজভাবে সব কিছু শেয়ার করতে পারে। চতুর্থত, খেলাধুলো, বাগান চর্চা, পোষাকে সময় দেওয়া, নাটক অভিনয় চচায় যথেষ্ট উৎসাহ দিয়ে সন্তানের স্ক্রিন টাইম কমাতে হবে। কারণ, মাথায় রাখতে হবে, চিকিৎসার থেকে আগাম রোগ প্রতিরোধ করা অনেক বেশি কার্যকরী।
ভোটার তালিকা সংশোধন জেলাশাসকদের সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী
আজকালের প্রতিবেদন
ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় রাজ্যের বহু এলাকায় ইচ্ছাকৃত ভাবে মৃত ব্যক্তির নাম রেখে দেওয়া হয়েছে। এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন এমন ব্যক্তির নামও রাখা হয়েছে তালিকায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এই বিষয়ে সব জেলাশাসককে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিলেন। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, এ বিষয়ে জেলাশাসকরা নিজেদের দায়বদ্ধতা অস্বীকার করতে পারেন না। সোমবার বিধানসভায় পানীয় জলের প্রকল্প নিয়ে বৈঠকের সময় মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁর কাছে এই ধরনের অভিযোগ এসেছে। তিনি এ ব্যাপারে বুথ লেভেল,
অফিসার (বিএলও)-দের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি জানান, অনেক বুথ স্তরের আধিকারিক কাজে গাফিলতি করেছেন। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি।
নতুন নাম সংযোজনের জন্য কেউ এলে বিএলও-দের তাঁর পরিচয় খতিয়ে দেখা উচিত। তা করেননি তাঁরা। বিধানসভায় এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। কাজে গাফিলতি করেছেন এমন বিএলও- দের চিহ্নিত করে দ্রুত তাঁদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট জমা দিতে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে মুখ্যসচিবের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'ভোটার তালিকা সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের বিশেষ শিবিরেও
অনেক বিএলও নিজের দায়িত্ব পালন করেননি। কারা কারা ছিলেন না, কেন ছিলেন না এই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য আমার চাই। দ্রুত তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিন।' কাদের স্বার্থে এই ধরনের দিচ্ছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এই আধিকারিকরা তালিকায় ভূয়ো নাম রেখে বিষয়ে জেলাশাসকদেরও যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বাড়ি বাড়ি ভোটার তালিকা সংশোধনের ছিলেন না বলেও অভিযোগ এসেছে শেষ দিনে অনেক বিএলও ডিউটিতে মমতা ব্যানার্জির কাছে। এদিন সেই সব অভিযোগের ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
ইওরোপ, আমেরিকা যেতে এখনও গতি অন্য মেট্রো সিটি
মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়
*য়েক দিন আগে একটি দৈনিক সংবাদপত্রের একটা খবরে চোখ আটকে গেল। খবরের শিরোনাম, ‘কলকাতা থেকে বিমান উড়ে যাক বিমান আমেরিকা, ইওরোপ'। আরে বাবা, আগে জাহাজে চেপে গেলেও বর্তমানে বিমানেই তো পাড়ি দেওয়া হয় বিদেশে। তাহলে নতুন কী ঘটল? আগ্রহী হয়ে প্রতিবেদনটি পড়লাম। সেখানে বলা হয়েছে, কোনও রকম স্টপওভার ছাড়া নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বিদেশের বিমান চালু করা হোক। এই মর্মে এ মাসের ৫ তারিখেই রাজ্য বিধানসভায় সর্বসম্মত ভাবে একটা প্রস্তাব পাশ হয়েছে। তাতে বিরোধী দলের সদস্যরাও সমর্থন জানিয়েছেন। একসঙ্গে এই দাবিতে তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যেতেও রাজি।
তখনই কিছু কিছু ভাবনা মাথায় এল।
বর্তমানে ছেলেমেয়েরা কিছুটা ভাল রেজাল্ট ও সচ্ছল আর্থিক অবস্থার জোরে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য বিমানে পাড়ি দিচ্ছে ইওরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া। কেউ কেউ এখানে পড়াশোনা সম্পূর্ণ করে বিদেশে যাচ্ছে চাকরি করতে। তবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাঁরা সরাসরি বিদেশে পাড়ি দিতে পারছেন না। সেজন্য তাঁদের স্টপওভার নিতে হচ্ছে। যেতে হচ্ছে দিল্লি, মুম্বই, দুবাই, সিঙ্গাপুর অথবা দোহা হয়ে। এতে সমস্যা আছে বইকি। লাগেজের সমস্যা, ‘ফ্লাইট ডিলে' হলে নির্দিষ্ট সময়ে কানেক্টিং ফ্লাইট ধরতে না পারার টেনশন, সর্বোপরি বেশ কিছুটা সময় নষ্ট। সরাসরি কলকাতা থেকে বিমান পরিষেবা শুরু হলে এই সব সমস্যা থেকে সহজেই পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে। আগে কলকাতা থেকে সরাসরি ‘লুৎফানসা’, ‘কেএলএম’, ‘ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ'-এর বিমান ছাড়ত। নানান কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে অনেক দিন আগেই । বর্তমানে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সবরকম সুবিধে থাকা সত্ত্বেও কেন বিদেশ যাত্রার জন্য সরাসরি উড়ান চালু করা যাচ্ছে না? বিষয়টা কি ভাবায় না?
আগ্রায় তাজমহল দেখতে গেলে বহু বিদেশি পর্যটকের দেখা মেলে। দিল্লি থেকে ঘণ্টাখানেকের বিমানযাত্রায় সহজেই আগ্রা পৌঁছোনো যায়। সেদিক থেকে দেখলে কলকাতা থেকে সরাসরি বিমান পরিষেবা চালু হলে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন শিল্প যথেষ্ট উন্নত হয়ে উঠবে। পশ্চিমবঙ্গও কোনও দিক থেকে পিছিয়ে নেই। ইউনেস্কো দুর্গাপুজোকে সম্মান জানিয়েছে।
সেই দুর্গাপুজো হতে পারে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করলে দেখা যাবে, এখানে ঘটেছে পর্বত আর সমুদ্রের মেলবন্ধন। উত্তরে সোনালি কাঞ্চনজঙ্ঘার অতুলনীয় সৌন্দর্য। সঙ্গে দার্জিলিঙের ম্যালের অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ। অস্বীকার করা যায় না বক্সা-জয়ন্তী, জলদাপাড়া, গরুমারা, সুনতালেখোলা-সহ ডুয়ার্সের জঙ্গলের হাতছানি। সঙ্গে জঙ্গল সাফারি খুবই আনন্দদায়ক। হরিণ, ময়ূর থেকে শুরু করে গন্ডার, হাতির দেখা মেলে। ঠিক তেমনই এড়ানো যায় না বসন্তে পলাশে সেজে ওঠা পুরুলিয়া অথবা বাংলার ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ মেদিনীপুরের গনগনিকে। উপেক্ষা করা অসম্ভব ম্যানগ্রোভ-বেষ্টিত সুন্দরবনের হাতছানি। একদিকে নিঝুম খাঁড়িতে লুকিয়ে-থাকা কুমির, অন্যদিকে ঘন জঙ্গলে মিশে থাকা দ্য রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, যেমন সুন্দর তেমনই ভয়ঙ্কর। পর্যটন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে শান্তিনিকেতনের কথা না বললে। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির ধারক ও বাহক আপামর বাঙালির প্রাণের সম্পদ শান্তিনিকেতন। যিনি বিশ্বের দরবারে প্রথম আমাদের পরিচয় করিয়েছিলেন, তিনি এক এবং একমাত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি একাধিকবার জাহাজে করে ‘বিলাত’ যাত্রা করেছিলেন। দীর্ঘ সময় লেগেছিল সেই যাত্রায়। অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ‘সি সিকনেস'-এর জন্য। প্রথম যাত্রা তাঁর সতেরো বছর বয়সে। উচ্চশিক্ষার জন্য। পরে আরও বেশ কয়েক বার। জাহাজের দীর্ঘ যাত্রাপথের পুঙ্খানুপুঙ্খ ঘটনা উঠে এসেছে তাঁর রচনায়। ‘য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র' ও ‘য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়েরি'তে। দ্বিতীয় বারের যাত্রাপথে লিখেছিলেন ‘ভগ্নহৃদয়’-এর বেশ কিছু কবিতা। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন যে কাব্যগ্রন্থের জন্য সেই ‘গীতাঞ্জলি’র বেশ কিছু কবিতা জাহাজে লেখা।
এখন যা বলার, তা হল, তখন তাঁকে জাহাজে বিলাত-যাত্রা করতে হয়েছিল তৎকালীন বোম্বাই (অধুনা মুম্বই) থেকে। আমরা পেরিয়ে এসেছি একটা শতাব্দী। এখন জাহাজের পরিবর্তে হাওয়াই জাহাজ পরিষেবা চালু থাকলেও ইওরোপ, আমেরিকা যাওয়ার জন্য কলকাতার পরিবর্তে দেশের অন্য মেট্রো সিটি বা অন্য জায়গার ওপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে। এটা কাঙ্ক্ষিত নয়। এগিয়ে চলার জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা সবসময় কাম্য। আশা রাখি, খুব তাড়াতাড়ি কলকাতা থেকে ইওরোপ, আমেরিকা যাওয়ার বিমান চালু হবে। তাতে এই রাজ্যের সঙ্গী করে উন্নততর হয়ে উঠবে। ছেলেমেয়েদের যেমন সুবিধে হবে, তেমন এই রাজ্যও উন্নত পর্যটনকে
ওবিসি শংসাপত্র মামলায় মিলল না স্থগিতাদেশ
আজকালের প্রতিবেদন দিল্লি, ৯ ডিসেম্বর
ওবিসি শংসাপত্র বাতিল মামলায় মিলল না স্থগিতাদেশ। আপাতত বহাল থাকছে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ই। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিআর গাভাই ও বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চে ওবিসি মামলার সংক্ষিপ্ত শুনানি হয়। আদালতে রাজ্যের তরফে হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশের জন্য আইনজীবী কপিল সিবাল সওয়াল করেন। অন্যদিকে, মূল মামলাকারীদের তরফে সওয়াল করেন আইনজীবী পিএস পাটোয়ালি। রাজ্যের আবেদনের বিরোধিতা করেন তিনি। এদিন সিবাল দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৮ শতাংশ সংখ্যালঘু রয়েছে। যার মধ্যে ২৭ শতাংশ মুসলিম । রঙ্গনাথ কমিশন মুসলিমদের সংরক্ষণের সুপারিশ করেছিল। কলকাতা হাইকোর্ট অন্ধ্রপ্রদেশের একটি রায়কে সামনে রেখে মামলায় নির্দেশ দিয়েছে। অথচ ওই রায়ে স্থগিত রয়েছে। রাজ্যের দায়ের করা মামলায় বিচারপতি বিআর গাভাইয়ের বেঞ্চ মন্তব্য করে, 'শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ করা উচিত নয়।' সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, আগামী ৭
জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
এদিনের শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবী আদালতে জানান, পিছিয়ে পড়া অংশকে সংরক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। তার মধ্যে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ছাড়াও অন্য সম্প্রদায়ও রয়েছে। এর পরেই বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথন মন্তব্য করেন, কমিশন না করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে সংরক্ষণের তালিকা তৈরি করতে পারে? জবাবে রাজ্যের আইনজীবী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় করেনি। বিশ্ববিদ্যালয় শ্রেণিবিন্যাস করেছে। অন্যদিকে, আইনজীবী পিএস পাটোয়ালি দাবি করেন, সংরক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও তথ্যের ধার ধারেনি রাজ্য এবং কোনও সমীক্ষাও করা হয়নি। কমিশনের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই ৭৭টি সম্প্রদায়কে সংরক্ষণের আওতায় আনা হয়েছিল। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২২ মে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ ২০১০ সালের পর থেকে তৈরি রাজ্যের সব ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করে দেয়। হাইকোর্টের নির্দেশে প্রায় ১২ লক্ষ শংসাপত্র অকেজো হয়ে যায়। উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য।
অভিন্ন নির্বাচন বিল আসতে পারে এই অধিবেশনেই
আজকালের প্রতিবেদন দিল্লি, ১ ডিসেম্বর
'এক দেশ এক নির্বাচন' বিলটি চলতি অধিবেশনেই আনতে পারে মোদি সরকার। একান্তই এই অধিবেশনে না পারলে, আগামী বাজেট অধিবেশনে বিলটি পেশ করা হবে। সূত্রের খবর, বিলটি সংসদে পেশ করার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই, বিলের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এই বিলে লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে করার কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখতে এবং তার বিভিন্ন দিক বিবেচনা করতে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ শ কোবিন্দের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই কমিটির পরিবর্তন আনতে হবে। বিরোধীদের সমর্থন ছাড়া তা যে সম্ভব নয়, মোদি- শাহরা তা ভালভাবেই জানেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিলটির নানা দিক নিয়ে আলোচনা করে মতামত গ্রহণ করবে যৌথ সংসদীয় কমিটি। তবে তার বাইরেও বিস্তারিত আলোচনা চায় কেন্দ্রীয় সরকার। সংসদীয় কমিটিতে সমস্ত রাজ্য বিধানসভার স্পিকারদের ডাকা হবে। তাঁদের মতামত গ্রহণ করা হবে। এছাড়া বুদ্ধিজীবী, বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজের সদস্য-সহ সমাজের আরও নানা স্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করবে কমিটি। আলোচনা প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করে তোলার জন্য জনসাধারণেরও মতামত গ্রহণ করা হবে বলে সূত্রের দাবি। বিলের মূল ধারা, অভিন্ন নির্বাচন হলে তার জন্য আয়োজন থেকে শুরু করে আরও নানা রিপোর্ট এবং সুপারিশের ভিত্তিতেই দিক নিয়ে ভালভাবে আলোচনা করতে বিলের খসড়ায় মন্ত্রিসভা অনুমোদন হ দিয়েছে বলে সূত্রের দাবি। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, সংসদে পেশ করার পর বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠাবে কেন্দ্রীয় সরকার। সেখানে বিলটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। সমস্ত পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিলটি নিয়ে ঐকমতো পৌঁছোনো মোদি সরকারের পক্ষেই প্রয়োজন। কারণ, এই বিল আনতে গেলে সংবিধানেও কিছু চায় সরকার। সরকারের যুক্তি, বার বার নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারের ওপর চাপ পড়ছে। তার সমাধানের জন্য অভিন্ন নির্বাচনই একমাত্র পথ বলে মনে করছে কেন্দ্র। তবে বিলটিতে সাংবিধানিক নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করছে বিরোধীরা। এই বিলের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত আসতে পারে বলে দাবি বিরোধী শিবিরের।
স্কুলছাত্রী অঙ্কিতা বাঁচাল বিরল ময়ূরী কাছিম
সব্যসাচী সরকার
স্কুলছাত্রী অঙ্কিতা না থাকলে হয়ত বড় বিপদ হত। স্কুলছাত্রীর তৎপরতায় রক্ষা পেল ২টি ময়ূরী কাছিম। আপাতত একটি জলাশয়ে কাছিমটি বাসস্থান খুঁজে পেয়েছে। জীববৈচিত্র ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে লাগাতার প্রচারের ফলে পড়ুয়াদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। এই ঘটনায় তার প্রমাণ। বাগনানের বৈদ্যনাথপুর গ্রামের ছাত্রী অঙ্কিতা পাঁজা ব্যাগ গুছিয়ে স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমন সময় জানালা দিয়ে সে দেখে, একটি বিশালাকায় কচ্ছপ পাশের ডোবা থেকে উঠে রাস্তা পার হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গেই অঙ্কিতা তার মা রিনা পাঁজাকে ডেকে নিয়ে কচ্ছপটিকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে আসে। পাশাপাশি আমতা থেকেও পরিবেশকর্মীদের তৎপরতায় আরও একটি ময়ূরী কাছিম উদ্ধার হয়েছে। এই খবর পেয়ে বৈদ্যনাথপুর গ্রামের সমাজসেবী সোনাই সামন্ত হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর পরিবেশকর্মী চিত্রক প্রামাণিক, ঝিন্দন প্রধান ও সুপ্রকার আদক পৌঁছোন। চলে আসেন অন্য পরিবেশকর্মী সুমন্ত দাস ও রঘুনাথ মান্না।
ময়ূরী কাছিম বা পিকক সফটশেল টার্টল মূলত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে দেখতে পাওয়া যায়। ৫ থেকে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। জল এবং শুকনো ডাঙা দু’জায়গাতেই চলে-ফিরে বেড়ায়। তবে এরা পছন্দ করে জলাভূমি। গড়পড়তা ২০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত এরা বেঁচে থাকে। চিংড়ি মাছ থেকে শুরু করে ছোটখাটো মাছ, ব্যাঙাচি, জলাভূমিতে থাকা নরম উদ্ভিদ এদের খাদ্য। এদের পিঠের রং ঘন সবুজ। হালকা সোনালি ডোরাও থাকে। যে দুটি ময়ূরী কাছিম উদ্ধার হয়েছে, সেগুলির একটি ওজন ৯ কেজি, অন্যটি ৪ কেজি। জলাভূমি কমে আসার কারণে এই ধরনের কচ্ছপের প্রজাতি লুপ্তপ্রায় হতে বসেছে। একসময় গঙ্গার ধারে এদের চলাফেরা করতে দেখা যেত, দক্ষিণবঙ্গের কয়েটি জেলায়। কিন্তু পরিবেশবিদরা বলছেন জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলযানের ব্যবহার বাড়তে থাকা এবং দূষণের জন্য এরা বসতি ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে।
এই দুই ময়ূরী কাছিমকে উদ্ধার করে বন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁরা বৈদ্যনাথপুর গ্রামের মানুষদের বলেন, প্রাণী ও প্রকৃতি রক্ষা করার বিষয়ে। ৪ কেজির ময়ূরী কাছিমটি উদ্ধার করেছেন আমতা গাজিপুর গ্রামের প্রয়াস নামে সামাজিক সংগঠনের কর্মীরা। পরিবেশকর্মী ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণকারী চিত্রক প্রামাণিক বলেন, ২০২২ সালে ভারতীয় বণ্যপ্রাণ সংরক্ষণ পরিমার্জিত আইন অনুযায়ী ময়ূরী কাছিম সর্বোচ্চ সংরক্ষণের আওতায়, তফসিলি ১ অন্তর্ভুক্ত। এই ধরনের কচ্ছপ শিকার বা বাড়িতে আটকে রাখলে জরিমানা-সহ কয়েক বছরের জেল হবে, এমনই শাস্তির বিধান রয়েছে।
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সময় নষ্টের অভিযোগ তুলল রাজ্য
এই সময় : ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অহেতুক সময় নষ্টের অভিযোগ তুললেন রাজ্য সরকারের আইনজীবী অভিষের মনু সিংভি। ঘটনাচক্রে দীর্ঘদিন পর এ দিনই রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়। বিকাশ ভবন সূত্রের খবর আজ, মঙ্গলবার দক্ষিণ দিনাজপুর, কন্যাশ্রী, • মহাত্মা গান্ধী, হিন্দি এবং মুর্শিদাবাদ
উপাচার্য নিয়োগ
বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের রাজভবনে ডেকে পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি উদয় উমেশ ললিতের নেতৃত্বাধীন কমিটি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, সম্ভাব্য উপাচার্যদের নামের তালিকা পেলে দু'সপ্তাহের মধ্যেই আচার্যকে ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু তিনি মাত্র ছ'টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করেছেন।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি সব দিক খতিয়ে দেখে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাব্য
রাজভবনে আনন্দ বোসের সঙ্গে সাক্ষাৎ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উপাচার্য পদে তিনটি করে নামের তালিকা পাঠিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। মুখ্যমন্ত্রী সেই তালিকা থেকেই একজন করে উপাচার্যর নাম বাছাই করে পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল তথা আচার্যর কাছে। তার পরেও কেন এই ভাবে সময় নষ্ট করছেন রাজ্যপাল তথা আচার্য, সুপ্রিম কোর্টে সেই প্রশ্নই : তোলেন অভিষেক মনু সিংভি। তাঁর দাবি, উপাচার্য নিয়োগের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হোক নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হোক আচার্যকে। তাঁর সওয়াল শুনে স্মিত হেসে বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, কারও কারও কাজ করার ধরন এমন হয়ে থাকে।' সুপ্রিম-শুনানিতে রাজ্যপাল তথা আচার্যর আইনজীবী, অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরামানি জানান, ছ'টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছে। দু'-একদিনের মধ্যে আরও পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যর নামও চূড়ান্ত করে জানানো হবে রাজ্য সরকারকে। আদালতের কাছে তিন সপ্তাহ অতিরিক্ত সময় চান অ্যাটর্নি জেনারেল। তাঁর অনুরোধ, এই সময় পেলে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ল উপাচার্য নিয়োগের কাজ সম্পন্ন করে ফেলবেন আচার্য। শীর্ষ আদালত তাতে সম্মতি দিয়েছে। আগামী ৮ জানুয়ারি গ পরবর্তী শুনানি। এই পরিস্থিতিতে বেে কলকাতা, যাদবপুর, উত্তরবঙ্গ, শংস বিদ্যাসাগরের মতো ঐতিহ্যশালী ঐতিহ্যশালী শুনা ও প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দৌড়ে যাঁরা আছেন, তাঁদের বিষয়ে যুক্তি রাজভবনের সঙ্গে নতুন করে রাজ্যের কোনও টানাপড়েন চলছে কি সংখ না, তা নিয়ে অবশ্য সরকারি আধিকারিকরা সন্দিহান।
এ দিনের শুনানিতে বিচারপতি কল সূর্যকান্তর এজলাসে সওয়াল করতে সাটি গিয়ে জনৈক আইনজীবী উপাচার্য তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে ফের প্রশ্ন বাতি তোলেন। তাঁর সওয়াল খারিজ করে বিচারপতি সূর্যকান্ত কটাক্ষ করে গড়েে বলেন, ভগবানকেও যদি নিয়োগ | সিবাল প্রক্রিয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়, আপনারা তাতেও আপত্তি জানাবেন।
‘এপিকে ফাইল' প্রতারণা, তদন্তে পুলিশ
এই সময়, ঝাড়গ্রাম: পিএম কিষাণ যোজনা নামে একটি এপিকে ফাইল হোয়াটসঅ্যাপে এসেছিল। পরিচিত ব্যক্তির মোবাইল নম্বর দেখে সেই ফাইলটি ডাউনলোড করেছিলেন এক ব্যক্তি। এরপর তাঁর নম্বর ক্লোন করে দেওঘরে একই নম্বরের সিমকার্ড চালু করে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় হতভম্ব হয়ে যান ওই ব্যক্তি। বিষয়টি গত ৭ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রাম সাইবার ক্রাইম থানায় জানান তিনি। আর তাতে উঠে আসে 'এপিকে ফাইল' স্ক্যামের কথা। করে নিচ্ছে। যার ফলে প্রতারিত ব্যক্তির মোবাইল নম্বর দিয়ে অন্যত্র সিমকার্ড চালু হয়ে যাচ্ছে। এমনকী, ওই ব্যক্তির পরিচিতদের মোবাইল নম্বরেও ফাইলটি পাঠানো হচ্ছে। যাদের ফাইলটি পাঠানো হচ্ছে তাঁরাও পরিচিতের পাঠানো ভেবে এপিকে ফাইলটি ডাউনলোড করতে গিয়ে সাইবার প্রতারণার জালে জড়িয়ে পড়ছেন। এভাবে পরিচিত সার্কেলে একজনের মাধ্যমে অন্যজনকে প্রতারণা করা হচ্ছে। যার ফলে পরিচিত ব্যক্তি জানতেও পারছেন ঝাড়গ্রাম না তিনি কার দ্বারা প্রতারণার শিকার প্রতারিত ব্যক্তি নতুন করে কোন ঝাড়গ্রাম সাইবার ক্রাইম সেল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতারকরা প্রথমে পিএম কিষাণ যোজনা বা পিএম আবাস যোজনার নামে একটি এপিকে ফাইল মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাচ্ছে। বিষয়টি না বুঝে অনেকে ওই ফাইলটিকে ডাউনলোড করে ফেলছেন। আর তাতেই ঘটছে বিপত্তি। এপিকে প্রতারিত ব্যক্তি বায়োমেট্রিক আনলক অভিযোগও করেছেন। ফাইলের সঙ্গে সাইবার প্রতারকরা প্রতারিতের মোবাইল নম্বরটি ক্লোন হচ্ছেন। একই সঙ্গে প্রতারিত ব্যক্তির কার্ডের বায়োমেট্রিকও আধার লক করে দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে করতে গেলে প্রতারকের কাছেই ওই নম্বরে ওটিপি চলে যাচ্ছে।
সিমকার্ডও তুলতে পারছেন না। গত চার-পাঁচ দিন ধরে বিষয়টি সামনে এসেছে। ইতিমধ্যে এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন ঝাড়গ্রাম জেলার বেশ কয়েকজন। এদের মধ্যে একজন সাইবার ক্রাইম থানায় লিখিত সাইবার ক্রাইম থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এক্ষেত্রে প্রথম কাজই হল অপরিচিত নম্বর বা কোনও গ্রুপ থেকে .apk ফাইল এলে তাতে ক্লিক করা যাবে না। ক্লিক করলেই তা ডাউনলোড হয়ে ওই মোবাইলের পুরো নিয়ন্ত্রণঅন্যের হাতে চলে যাবে।
নিয়েছে সাইবার প্রতারকরা? জানা গিয়েছে, বেনামি সিমকার্ড দিয়ে আগে সাইবার ক্রাইম করত প্রতারকরা। ইদানিং ওই সিমকার্ডের ব্যবহার কমে এসেছে। এমনকী সাইবার ক্রাইম থানা থেকে এ ধরনের সিমকার্ড বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে সিমকার্ড ক্লোন করে নতুন প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে।
ঝাড়গ্রাম জেলার ডিএসপি(সাইবার ক্রাইম) সব্যসাচী ঘোষ বলেন, 'অপরিচিত নম্বর বা কোন গ্রুপ মোবাইল ব্যবহারকারীদের থেকে .apk ফাইল এলে তাতে ক্লিক সতর্ক থাকা উচিত সব্যসাচী ঘোষ, ডিএসপি যাঁরা মোবাইল ব্যবহার করছেন তাঁদের সতর্ক থাকা। হোয়াটসঅ্যাপে যদি কোনও এপিকে ফাইল আসে, তা ডিলিট করে দেওয়া। করা যাবে না। ক্লিক করলেই তা ডাউনলোড হয়ে ওই মোবাইলের পুরো নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে চলে যাবে। সবচেয়ে জরুরি মোবাইল ব্যবহারকারীদের সতর্ক থাকা। আর যদি কারও সঙ্গে এই ঘটনা ঘটে, তাহলে নিকটবর্তী থানা বা সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে দ্রুত যোগাযোগ করলে কেন এরকম প্রতারণার ছক প্রতারণা আটকানো যাবে।'
ইভিএম না কি নির্বাচন কমিশন
ইভিএম নিয়ে অনেক আপত্তিই যুক্তিগ্রাহ্য নয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে পারলে আর এই বিতর্ক দানা বাঁধত না।
লিখছেন সুমন সেনগুপ্ত
মহারাষ্ট্রে পাঁচ মাস আগে যখন লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল, তখন দেখা গিয়েছিল বিরোধী জোট ৩০টি আসন পেয়েছে। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে যে বিধানসভা নির্বাচন হল, সেখানে দেখা গেল, বিজেপি জোট অস্বাভাবিক ভালো ফল করেছে। সেই ফলের পিছনে আরএসএস-এর প্রভাব এবং পরিশ্রম ছিল, তা সবাই স্বীকার করেছে কিন্তু তা বলে এই রকম ফল। মহারাষ্ট্রে বিভিন্ন জায়গায়, ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিরোধী দলেরা একযোগে বলেছিল, এই নির্বাচনের বাছাই। ভিভিপ্যাট গণনা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দোলাচল সন্দেহ বাড়িয়েছে ফলাফল সন্দেহজনক। মাত্র পাঁচ মাস আগে, যে রাজ্যের বেশির ভাগ ভোটার বিজেপি-র বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল, এত তাড়াতাড়ি তাঁদের মত বদল অসম্ভব।
২০০৯ সালে, বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি, এক লেখায় প্রশ্ন তুলেছিলেন, এই যান্ত্রিক ভোটিং ব্যবস্থাতে কি ভরসা রাখা যায়? মনে রাখা দরকার, ওই বছরেই বিজেপি লোকসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিল। তার পর গঙ্গা দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে, আর আজকে ১৫ বছর পরে, বিরোধীরা আবারও একই অভিযোগ করছে। সেই সময়ে শাসক কংগ্রেস জোট, এই বিষয়ে কী বলেছিল, জানা না থাকলেও, এ বার কিন্তু প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে, নির্বাচন কমিশন এমনকী দেশের সর্বোচ্চ আদালত একই সুরে বিরোধীদের আক্রমণ করেছে। বলেছে, ইভিএম-কে দোষ দেওয়া আসলে হেরে যাওয়া দলের কুযুক্তি। তাঁরা আরও বলেছেন, জিতলে ইভিএম ঠিক আছে, আর হেরে গেলে ইভিএম-কে দোষ দেওয়া কোনও ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এই সংক্রান্ত একটি মামলা তৎক্ষণাৎ খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
প্রখনে আসা যাক, বিরোধীরা যে অভিযোগগুলো করেছে, সেই দিকে। বিরোধীরা বলেছে, লোকসভায় বিজেপি জোটের ওই ফলের সঙ্গে সাম্প্রতিক বিধানসভার ফল একেবারেই সাযুজ্যপূর্ণ নয়। কিন্তু এই রকম ফল কি আগে এ দেশে দেখা যায়নি? দিল্লিতে লোকসভায় সাতটি আসনের সব ক'টা জেতার পরেও কিন্তু আম আদমি পার্টির কাছে ২০১৫ এবং ২০২০ সালে বিধানসভায় বিজেপি-কে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল। সুতরাং এই ঘটনা যে ঘটে না বা আগে এই রকম উদাহরণ যে দেখা যায়নি, তেমনটা নয়। দ্বিতীয়ত, বিরোধীরা বলেছে, ভোটের শেষে নির্বাচন কমিশন বলেছিল, মহারাষ্ট্রে ৫৮ শতাংশ ভোট পড়েছে, কিন্তু তার পরে তারা সেই তথ্যকে সংশোধন করে জানায় যে, ভোট পড়েছে ৬৬ শতাংশ। এই বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, বহু মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছিল বিকেল ৫টার পরে, যেহেতু নির্বাচন কমিশন কাউকে বলতে পারে না যে, সময় শেষ, আর ভোট দেওয়া সম্ভব নয়, তাই সবাইকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। মনে রাখা দরকার, মহারাষ্ট্রের ভোট শেষ হয় সন্ধে ৬টায়। সেই জন্যেই এই বৃদ্ধি। কিন্তু এটা তো এ বারে প্রথম হল এমনটা নয়, গত লোকসভা নির্বাচনেও এই রকম ভোট বৃদ্ধির তথ্য সামনে এসেছিল। তখনও নির্বাচন কমিশন পরিষ্কার করে উত্তর দিতে পারেনি, আর এ বারও পারছে না বলেই বিতর্ক বাড়ছে। বেশ কিছু বুথে দেখা গিয়েছে, গোনা ভোট এবং প্রদত্ত ভোট কিন্তু মেলেনি, নির্বাচন কমিশনও তথ্য-সহকারে এই অভিযোগ নাকচ করতে পারেনি। সুতরাং প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এ ছাড়াও আরও কিছু প্রশ্নের উত্তর চাইতে হবে নির্বাচন কমিশনের কাছে। তার দায়িত্বও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর। এ বারের মহারাষ্ট্র নির্বাচনের আগের দিন, মহারাষ্ট্রের এক বিজেপি নেতা বিনোদ তাওড়েকে দেখা গিয়েছিল টাকা বিলোতে। প্রচুর শোরগোল হয়েছিল, বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছিল, ওই টাকা ভোটাদাতাদের মধ্যে বিলোনোর জন্যেই আনা হয়েছিল। সামাজিক মাধ্যম ও কিছু গণমাধ্যমে সেই সংক্রান্ত ছবি এবং ভিডিয়ো দেখাও গিয়েছিল। শাসক দলের তরফ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছিল এবং নির্বাচন কমিশন সেই সময়ে ওই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বটে, কিন্তু সমাধান করতে পারেনি। গত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া সীমা ছাপিয়ে বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা বিপুল খরচ করছে। এমনিতেই সমস্ত রাজনৈতিক দলের নির্বাচনের জন্য যে টাকার ঊর্ধ্বসীমা বাঁধা আছে, তাতেই অসামঞ্জস্য আছে। সবাই সমান পরিমাণ টাকা তুলতেও পারে না এবং সেই অনুযায়ী খরচও করতে পারে না। ফলে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে অনেকটা এগিয়ে থেকে। গত বেশ কিছু নির্বাচনে, এই বিষয়ে বিরোধীরা নানান অভিযোগ করা সত্ত্বেও, কমিশন দেখেও না দেখার ভান করেছে। যে পরিমাণ হিসেব-বহির্ভূত টাকা উদ্ধার হওয়ার কথা, তার অত্যন্ত কম অংশ উদ্ধার হয়েছে, সেটা, কমিশন নিজেও স্বীকার করেছে। এর পাশাপাশি, বিজেপি এবং শাসক দলের পক্ষ থেকে যত বার সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি করার চেষ্টা হয়েছে, তার বেশির ভাগ প্রত্যাবর্তন? ১৯৫২ সালের সাধারণ নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট বক্স করতে চাই
যে, তাদের গ্রাসে সব wxxx foafer-ce cet frox et en সিদ্ধান্ত নেন, তারা নিজেরা আবার ব্যাপ ফেটি করাবে। তাদের সিদ্ধান্ত কিন্তু ভারতী গণতন্ত্রে একটা যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত হয়ে পারবে। কিন্তু বললেই কি এ বলা যায়? নির্বাচন কমিশন রাজি নয় এই ভে হতে দিতে। যে দিন ভোট হওয়ার কথা ি আর তা হলে কি সত্যিই কারচুপি হয়েছে মারা center on fo fexx co refine sa হয়েছে মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে, এই সব শোলাপুরের এই উদ অন্যান্য বেশ কিছু বিধানসভা কেন্দ্রে করতে পারে, তা হলে সেটাই একটা পড়াইয়ের সুত্রপাত করতে পারে। বিরোধীরা কি রাজি কাজটা করতে? নাকি তারা সামাজিক মাধ বক্তব্য রাখার মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখবে? সমস্যাটা এখানেই। বিজেি ন্যারেটিভ, বিজেপি এবং সংগঠন যথেষ্ট শক্তিশালী, তার বিপরীতে বাদান একটি প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ বিয়ের দেখাচ্ছে, তখন বিরোধীরা সে দিকে আইস্টক দেওয়ার বদলে অন্যান্য বিষয় নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যস্ত। শুধু ইভিএম হঠাৎ' বা 'ব্যালট ভোট চাই' বলে সামাজিক মাধ্যমে লিখতে হবে না, কঠিন বাস্তবের মাটিতে তা অভিযোগকে তারা আমল দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যত বার নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে যত বার নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছে বিরোধীরা, সেগুলোকে গ্রাহ্য করেনি কমিশন।
আসলে সমস্যাটা নির্বাচন কমিশন নিয়ে। শুধু ইভিএম নিয়ে নয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে দাঁড়িয়ে নির্বাচন কমিশন বলেছে, এই বন্ধুটি কোনও ভাবেই বাইরে থেকে প্রভাবিত করা সম্ভব নয়। কিন্তু তার সপক্ষে তারাও যেমন খুব বেশি যুক্তি দিতে পারেনি, তেমনই যারা উল্টো অভিযোগ করেছে, তাদেরও কোনও শক্তপোক্ত যুক্তি নেই। ফলে এই যন্ত্রটি প্রশ্নাতীত ভাবে সঠিক, সেটা জোর গলায় বলা হলেও, মানুষকে বিশ্বাস করানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে, মানুষের মনে নির্বাচন কমিশন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। গত লোকসভা নির্বাচনেও কথা উঠেছিল ১০০ শতাংশ ভিভিপ্যাট স্লিপ গণনার, কিন্তু তাতেও তারা রাজি হয়নি। দেশের সর্বোচ্চ আদালত কিন্তু রায় দিয়েছিল, যদি বিরোধী প্রার্থীরা ভিভিপ্যাট গণনার দাবি জানায়, তা হলে অন্তত ৫ শতাংশ কেন্দ্রে তা করাতে পারে নির্বাচন কমিশন। অবশ্যই তার খরচ বহন করতে হবে নির্দিষ্ট প্রার্থীকে। এ বারের মহারাষ্ট্র নির্বাচনের পরে বিরোধীরা যখন এই দাবি করে যে, ভিভিপ্যাট- এর স্লিপ গুনতে হবে, তখন কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাতে সায় দেয়নি। এখানেই তৈরি হয় আরও সন্দেহ। যদি নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছই হয়ে থাকে, যদি ইভিএম-এ কোনও রকম গোলমাল না থাকে, তা হলে নির্বাচন কমিশন এই প্রক্রিয়াতে রাজি হচ্ছে না কেন, বিরোধীরা এই প্রশ্নই তুলেছে। ইভিএম নিয়ে যত সন্দেহের অবসান তো এই প্রক্রিয়া এক বার করলেই হত। আজ পর্যন্ত ইভিএম নিয়ে যত প্রশ্ন আছে, সব কিছুর উত্তর তো একবারেই দেওয়া যেত।
নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে গেলে, তাদেরও নিরপেক্ষতা गान করতে হবে, যা গত কয়েক বছরে জন হয়েছে। তার জন্য এক দিকে যেমন প্রয়োজন অন্তত একবার হলেও যে কোনও নির্বাচনে সমস্ত ইভিএম-এর ১০০ শতাংশ ভিভিপ্যাট শুনে, তা ইভিএম-এ প্রাপ্ত ভোটের সঙ্গ মিলিয়ে দেখা, তেমনই প্রয়োজন বিরোধীদের অভিযোগ মেনে নগদ টাকার ব্যবহার করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টাকে রোখা। তাদের নিরপেক্ষতা সে দিনই প্রমাণিত হবে, যে দিন প্রধানমন্ত্রী কিংবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠালে, তাদেরও শাস্তি দিতে কমিশন ভয় পাবে না।
যে কোনও গণতন্ত্রে বিরোধীদের দায়িত্বও অনেক। যদি ইভিএম নিয়ে অভিযোগ থাকে, তার বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে না বলে, যদি আন্দোলন করতে হয়, তা হলে তারা সেটাই করুক, কিন্তু ইভিএম নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করবে, আর ও দিকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে যাওয়ার পরে বলবে, ইভিএম-এর দোষ, দুটো তো একসঙ্গে চলতে পারে না। যদি শোলাপুরের উদাহরণকে সামনে রেখে, তারা বিভিন্ন কেন্দ্রে ব্যালটে বিকল্প ভোটের ব্যবস্থা করে দেখিয়ে দিতে পারে যে, তাদের পারি সঠিক, তা হলে সেটাও তো একটা আন্দোলন হতে পারে। সারা দেশে এই আন্দোলন কিন্তু একটা দিশা হতে পারে, কিন্তু বিরোধীরা কি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই ঝুঁকি নিতে পারবে? বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচনের পরে বিরোধী জোটের মধ্যে যে পরিমাণ অনৈক্য দেখা যাচ্ছে, বিরোধীদের সদিচ্ছা নিয়েই তো প্রশ্ন উঠে আসছে।
ফুলের মেলার লিখিত অনুমোদনের আর্জি
নিজস্ব সংবাদদাতা
পাঁশকুড়া
শীতে জেলার ফুলের উপত্যাকা দোকান্ডায় পর্যটকদের ভিড় বাড়ে। এই সময় ফুলের মেলার আয়োজন করেন চাষি আর এলাকাবাসী। এই ফুলের মেলার রাশ কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে একাধিকবার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে গত বছর পাঁশকুড়া ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন ফুল চাষিরা। তাঁদের প্রশ্ন ছিল, রেলের জায়গায় ফুলের মেলার রাশ ব্লক প্রশাসনের হাতে থাকবে কেন? এবার মেলার রাশ নিজেদের হাতে রাখতে রেলের কাছে আবেদন করছেন চাষিরা।
প্রায় তিন মাস ধরে দোকান্ডায় ফুলের মেলা চলে। কংসাবতী নদীর চরে রেল সেতুর নীচে সেটি হয়। আয়োজকরা মেলা আয়োজনের জন্য রেলের কাছে কোনও অনুমতি নিতেন না। বর্তমানে মেলা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন দোকান্ডার ফুল চাষিরা। মেলা কমিটির সদস্য সংখ্যা ৪০। গাড়ি পার্কিং,স্টল ইত্যাদির দরুণ দোকান্ডায় ভাল টাকা আয় হয় কমিটির। সেই টাকায় কমিটির উদ্যোগে মেলা চত্বরে শৌচাগার নির্মাণ, পানীয় জলের ব্যবস্থা ইত্যাদি করা হয়েছে। গত পাঁশকুড়া ব্লক
প্রশাসন মেলার রাশ নিজেদের হাতে রাখতে চেয়ে ফুলচাষিদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে চরম বিশৃঙ্খলা হয়। এবারও রেশ ফেরার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
চাষিদের একাংশ জানাচ্ছেন, ফুলের মেলা থেকে বিপুল আয় হয়। তাই বিভিন্ন সময় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মেলার রাশ নিজেদের হাতে রাখার চেষ্টা চালান। চাষিদের মতে মেলার জন্য রেলের তরফে লিখিত অনুমোদন পেয়ে গেলে প্রভাবশালীদের হাত থেকে মেলাকে রক্ষা করা যাবে। ইতিমধ্যে দোকান্ডায় পর্যটক সমাগম শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই এখনই ফুলচাষিরা চাইছেন মেলার জন্য রেলের অনুমোদন আদায় করতে। এই লক্ষ্যে সমস্ত নথিপত্র নিয়ে রেলের কাছে আবেদন জানিয়েছে দোকান্ডা ফুলের মেলা কমিটি।
কমিটির অন্যতম সদস্য অমিত সামন্ত বলেন, "রেলের জায়গায় ফুল চাষ ও ফুলের মেলা হয়, তাই রেলের তরফে লিখিত অনুমোদন থাকা জরুরি বলে আমরা মনে করি। রেলের অনুমোদন থাকলে মেলার সময় কোনও অঘটন ঘটলে ফুলচাষিদের কোনও রকম ঝক্কি পোয়াতে হবে না। তাই আমরা রেলের কাছে লিখিত অনুমতির জন্য আবেদন করেছি।"
এব্যাপারে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এক আধিকারিক বলেন, "দোকান্ডার ফুলচাষিরা ফুলের মেলার জন্য লিখিত অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন। এ ব্যাপারে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।"
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিয়ে তাত্ত্বিক গবেষণা ভারতে শুরু হয়েছে গত সহস্রাব্দেই, খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজও হচ্ছে কিন্তু, ফলিত বিজ্ঞানের
শুভময় মৈত্র
গবেষণায় প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। ২০২০ সালের বাজেটে প্রথম বার কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এর গবেষণার জন্য বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ হল – পাঁচ বছরের জন্য ৮,০০০ কোটি টাকা। তার পর কোভিড এল। পরবর্তী তিন বছর আর এ প্রসঙ্গে উচ্চবাচ্য শোনা গেল না। ২০২৩-এর এপ্রিলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা নতুন করে ধার্য করল ৬,০০০ কোটি টাকার কিছু বেশি। দেশ জুড়ে শুরু হল ন্যাশনাল কোয়ান্টাম মিশন, বা সংক্ষেপে এনকিউএম। আপাতত দেশের বেশ কয়েকটি অগ্রগণ্য প্রযুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুরু হতে চলেছে সেই কাজ। পরিকল্পনা আগামী আট বছরে দেশকে এই বিষয়ে প্রস্তুত করে তোলা।
গোমূত্রে সোনার খোঁজ অথবা বৈদিক বিজ্ঞান চর্চার চেয়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এর গবেষণায় অর্থবরাদ্দ করা ভাল, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু, ক্লাসিক্যাল কম্পিউটার বানানোর ক্ষেত্রে ভারতের যে সীমাবদ্ধতা আছে, এ প্রসঙ্গে সে কথা আসবে। অন্য দেশে বানানো যন্ত্রাংশ জুড়ে আমরা কম্পিউটার তৈরি করতে পারি, কিন্তু যে সেমিকন্ডাকটর চিপ দিয়ে কম্পিউটার বানানো হয়, এখনও ভারতে তা তৈরি হয় না। কেন, তার অনেকগুলো কারণ আছে। মোট কথা হল, ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের চিপ বানানোর প্রস্তুতি না থাকা সত্ত্বেও এক লাফে খোলাবাজারে বিক্রি করার মতো কোয়ান্টাম কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ বানিয়ে ফেলার খোয়াবটি নিতান্তই অবাস্তব। তার পিছনে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করার পর হাতে পেনসিল পড়ে থাকলে নেতাদের ধৈর্যচ্যুতি হবে না তো?
তার চেয়ে, গবেষণার যে ক্ষেত্রে ভারতীয়দের পক্ষে সহজে বিশ্ববাজারের দখল নেওয়া সম্ভব, সে দিকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যেমন, কোয়ান্টাম কম্পিউটার যদি সত্যিই জনপ্রিয় হয়, সে ক্ষেত্রে তার উপরে প্রোগ্রাম লিখতেই হবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে গত কয়েক বছর ধরেই সেই সব যন্ত্রে প্রাথমিক প্রোগ্রাম লেখার সুযোগ আছে যথেষ্ট। এই জায়গায় অবশ্যই ভারতীয় প্রযুক্তিবিদদের দুর্দান্ত কাজ করার মতো অভিজ্ঞতা এবং সুযোগ আছে।
সুরক্ষাবিষয়ক যে সমস্ত হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার, তার ভিতরে সত্যিকারের কী হচ্ছে, সেটা বুঝতে পারা আমাদের দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জরুরি। বিদেশ থেকে কেনা যন্ত্র যে আমাদের দেশের গোপন তথ্য পাচার করে দেবে না, তা নিশ্চিত করতে হবে। কোয়ান্টাম কমিউনিকেশনে তথ্য হাতানোর সম্ভাবনা ক্লাসিক্যাল কমিউনিকেশনের কারণ এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট বলে একটি চেয়ে বেশি- বিষয়, যা বহু দূরের দু'টি কণার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ ঘটাতে পারে। অন্য একটা সুবিধা অবশ্য আছে। ক্লাসিক্যালে যখন তখন যে কোনও তথ্য টুকে ফেলা যায় (সে তথ্য বোঝা গেল কি না সে পরের কথা), কোয়ান্টামে সেই বিষয়টি অজানা কণার ক্ষেত্রে অসম্ভব। ফলে তারের মধ্যে দিয়ে ক্লাসিক্যাল বিট-এর বদলে কোয়ান্টামের কিউবিট গেলে সুবিধা বেশি। সমস্যা হল, ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের বিভিন্ন চিপের মতোই কোয়ান্টামের দুনিয়াতেও বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হবে ভারতকে। সেই যন্ত্রাংশের ভিতরে কী হচ্ছে, তা বুঝতে হবে। এই জায়গায় জাতীয় কোয়ান্টাম মিশনে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তা পরিষ্কার নয়।
সর্বোচ্চ গুণমানের কোয়ান্টাম কম্পিউটার উৎপাদনের ক্ষমতা ভারতের এই মুহূর্তে নেই। আগামী এক দশকে তৈরি হবে, সে সম্ভাবনাও ক্ষীণ। কাজেই, এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী গবেষণার পিছনে টাকা খরচ করার সময় মনে রাখতে হবে যে, বিদেশে কী হচ্ছে তা জানা, এবং দেশের গবেষণাগারে সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের ব্যবস্থা করা। তার জন্য প্রভূত অর্থবরাদ্দ করা এবং, সহযোগী দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা প্রয়োজন। আমেরিকার সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক শোনা যায় খুবই ভাল— সেই সুবাদে জাতীয় কোয়ান্টাম মিশনের জন্য আমেরিকান সহযোগিতা পাওয়ার কথা ভারত ভাবতেই পারে।
সব শেষে কাজের কথাটা বলি। ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারে যে সুরক্ষাসংক্রান্ত হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার চলে, তার কিছু মূলগত পরিবর্তন করলেই কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটারের আক্রমণ রুখে দেওয়া সম্ভব। অর্থাৎ, খুব তাড়াতাড়ি উৎপাদকে বিশ্লেষণ করে যেমন বর্তমানের সুরক্ষাব্যবস্থা ভেঙে দিতে পারে কোয়ান্টাম কম্পিউটার, আবার তেমনই বিশ্ব জুড়ে ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারেই অন্য ধরনের গাণিতিক গবেষণার মাধ্যমে সেই ব্যবস্থা সুরক্ষিত রাখার উপায় প্রস্তুত। আধুনিক এই প্রযুক্তিকে বলে পোস্ট-কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি। অর্থাৎ, কারও হাতে যদি কোয়ান্টাম কম্পিউটার এসেও যায়, তখন শুধুমাত্র ক্লাসিক্যাল কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে এবং বর্তমানে হাতের কাছে থাকা পরিকাঠামো ব্যবহার করে ডিজিটাল দুনিয়া কী ভাবে সুরক্ষিত থাকবে, সেই পথ আজকের দিনে নির্ধারিত, এবং আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত। অগস্ট মাসে তার নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ডও ঠিক হয়ে গেছে।
এর রূপায়ণে খরচ আদৌ বেশি নয়। এ বিষয়ে ভারতেও অল্প কিছু গবেষক এবং প্রযুক্তিবিদ কাজ করছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। তার পরীক্ষামূলক রূপায়ণের জন্যে খরচ হতে পারে বড় জোর পাঁচশো কোটি টাকা। তার পর গোটা দেশ নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারে সেই প্রযুক্তি। এর জন্য দু'এক বছরের বেশি সময়ও লাগার কথা নয়। ৮,০০০ কোটি টাকা খরচ করে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের 'মেক ইন ইন্ডিয়া' মহাযজ্ঞ চলতেই পারে। কিন্তু ক্লাসিক্যাল কম্পিউটিং-এর পরিকাঠামোতেই আন্তর্জাতিক স্তরের সুরক্ষা যখন হাতের কাছেই প্রস্তুত, সেটাকে অবজ্ঞা করাও ঠিক হবে না।
জানুয়ারিতেই সর্বত্র স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ, আশ্বাস
নিজস্ব সংবাদদাতা নয়াদিল্লি, ৯ ডিসেম্বর: জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ হয়ে যাবে— আজ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য সি ভি আনন্দ বোসের তরফে সুপ্রিম কোর্টে এই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে রাজ্যপাল ছ'জন উপাচার্যের নামে সায় দিয়েছিলেন। আজ রাজ্যপালের তরফে কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরমনি জানিয়েছেন, দু'একদিনের মধ্যে আরও পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নাম চূড়ান্ত হয়ে যাবে। তিন সপ্তাহ সময় পেলে ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলিতেই স্থায়ী উপাচার্যের নাম ঠিক হয়ে যাবে। বিচারপতি সূর্য কাস্তের বেঞ্চ জানিয়েছে, ৮ জানুয়ারি এই মামলার ফের শুনানি হবে।
উচ্চ শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, আজ, মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটির তালিকায় দক্ষিণ দিনাজপুর, কন্যাশ্রী, মহাত্মা গান্ধী, মুর্শিদাবাদ এবং হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য পদে মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের প্রার্থীদের রাজভবনে ডেকে পাঠানো হয়েছে। উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও রাজ্যপালের বিবাদের গেরে সুপ্রিম কোর্ট প্রान প্রধান বিচারপতি উদয় উমেশ ললিতের নেতৃত্বে কমিটি তৈরি করে দিয়েছিল। শীর্ষ আদলতের নির্দেশ ছিল, কমিটি প্রাথমিক বাছাই তালিকা মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠাবেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজের পছন্দের ক্রম অনুযায়ী নামের তালিকা রাজ্যপালকে পাঠাবেন।
রাজ্য সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি সুপ্রিম কোর্টে আজ বলেন, “আচার্যকে এর আগে দু'সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাত্র ছ'জন উপাচার্যের নামে তিনি সায় দিয়েছেন। কেন এত দেরি হচ্ছে? সময় বেঁধে দেওয়া দরকার।” অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আর তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া হোক। সিঙ্ঘভি প্রশ্ন তোলেন, এত সময় কেন প্রয়োজন? সুপ্রিম কোর্টের কমিটি নাম ঠিক করে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তার মধ্যে বাছাই করে নাম পাঠাচ্ছেন। রাজ্যপালকে শুধু চূড়ান্ত সায় দিতে হবে। বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, “সকলের কাজের ধরন এক রকম নয়। অন্তত ১১ জন উপাচার্যের নাম ঠিক হয়েছে, এটাই ভাল।”
এক জন আইনজীবী এই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুললেও তা শুনতে নারাজ বিচারপতি সূর্য কাস্ত বলেন, স্বয়ং ভগবান এই কাজ করলেও আপত্তি উঠত।
0 Comments