বিশ্বমহামানব হজরত মহম্মদ(স:) পর্ব :03
✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍
আব্দুল মুসরেফ খাঁন// পাশকুড়া
🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎
আবু তালিবের মৃত্যুতে অত্যাচারের পথ পরিষ্কার হল। সিজদাহরত রসুল করিম স.-এর গলায় ফাঁস লাগানো, ঘাড়ে দুর্গন্ধ যুক্ত উটের নাড়িভুঁড়ি নিক্ষেপ করা, যাতায়াতের পথে কাঁটা বিছানো, এ সব অত্যাচার থেকে যথা সম্ভব উদ্ধার করার চেষ্টা ক'রে গেলেন কন্যা ফাতিমা রা. এবং সাথী আবু বকর রা.।
মক্কায় অবস্থান দুঃসহ হয়ে উঠল। এ অবস্থায় পুত্রবং জায়িদকে নিয়ে তায়িফ যাত্রা করলেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে সাকিফ গোত্রদের ইসলামে আহ্বান করলেন। উত্তরে পেলেন উপহাস আর তিরস্কার। অপরদিকে ক্রীতদাস, অজ্ঞ বালক, দুষ্কৃতকারীদের লেলিয়ে দেওয়া হল তাঁর প্রতি অত্যাচার করার জন্য। পথিমধ্যে প্রস্তরাঘাতে মুহাম্মদ স.-কে রক্তাক্ত করা হল। টানা দশ দিন তায়িফের মাঠে-ঘাটে প্রচার চালালেন কিন্তু এক জনও সুপথে এল না। অবশেষে হজরত স. রক্তক্ষরণ জনিত দুর্বলতায় চলে পড়লেন। ক্ষত-বিক্ষত মুহাম্মদ স.-কে জায়িদ কোনও রকমে বহন করে নগরের বাইরে এক উদ্যানে নিয়ে এলেন। জায়িদের সেবা যত্বে সামান্য সুস্থ হয়ে ওজু করে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু'রাকায়াত নামাজ পড়ে প্রভুর কাছে ফরিয়াদ করলেন—যাতে অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ছিল না। তাতে ছিল নিজ অক্ষমতার জন্য ক্ষমা চাওয়া আর আল্লাহর প্রতি অগাধ অনড় বিশ্বাস। ভক্তি, প্রেম, ভালবাসার সঙ্গে অসীম ধৈর্যের স্বাক্ষর বহনকারী এই ফরিয়াদ ইতিহাসের পাতায় চির অম্লান হয়ে থাকবে। তায়িফবাসীদের উপর অভিশাপ বর্ষণের প্রস্তাব বর্জন করে অম্লান বদনে বলেন, এরা না হয় ইমান আনল না, এদের বংশধররা ইমান আনতে পারে। পবিত্র বুখারি শরিফে তায়িফের দিনগুলোকে ওহদ যুদ্ধের দিনগুলো অপেক্ষা ভয়াবহ ব'লে উল্লেখ করেছেন।
তায়িফ থেকে ফেরার পর ৬২১ খ্রিস্টাব্দে সপ্ত আকাশ ভ্রমণ করেন--যাকে মিরাজ বলে। মিরাজ অর্থ সিঁড়ি, আরোহণ বা উর্দ্ধগমন—মদিনায় হিজরতের ১৬/১৭ মাস পূর্বে এটা সংঘটিত হয়। অপর একটি মতে ১৮ মাস পূর্বে। মাস ও তারিখ সম্বন্ধে ভিন্ন মত বর্তমান। এই রাতে রসুল মুহাম্মদ স. উম্মে হানির গৃহে ঘুমিয়ে ছিলেন। জিবরাঈল আ. সহ তিন জন ফিরিস্তা এসে প্রথমে কা'বা প্রাঙ্গনে নিয়ে যান তাঁকে। সেখান থেকে বুরাকে (ডানাওয়ালা ঘোড়াকৃতির স্বর্গীয় যান, যা অতি দ্রুতগতি সম্পন্ন) চেপে মসজিদুল আক্সা (জেরুজালেম)। সেখান থেকে এক এক করে ষষ্ঠ আসমান পার হয়ে সপ্ত আসমানে স্রষ্টার (আল্লাহর) মুখোমুখী হন। দু'জনের মধ্যে দূরত্ব ছিল মাত্র এক ধনুকের জ্যা-এর সমান। তারপর তিনি দোজখ বেহেসত দেখে ফিরে আসেন। সময় লেগেছিল, অনেকের মতে, ওজুর পানি গড়িয়ে যেতে যে সময়টুকু লাগে তার মধ্যেই এই মিরাজ সংঘটিত হয়। পবিত্র মিরাজ রসুল মুহাম্মদ স.-এর মনোবল বাড়িয়ে দিল। সেই সঙ্গে পবিত্র কুরআনের বেশ কয়েকটি আয়াত তাঁকে আগামী কার্যাবলীর ইঙ্গিত দিল।
মুহাজির রূপে আবিসিনিয়ায় অবস্থান কালে সাফরান রা. এর মৃত্যু হলে তাঁর পৌঢ়া বিধবা নিঃসহায় সম্প্রদা রা. খাদিজা রা.-এর ইন্তেকালের (৬২০ খ্রি.) কিছুকাল পর মুহাম্মদ স.-এর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। হজরত মুহাম্মদ স. আশ্রয় দানের উদ্দেশ্যে তাকে বিয়ে করেন। মুহাম্মদ স.-এর সেবা ও পরলোকে হজরতের পত্নীরূপে উত্থিত হওয়াই ছিল সওদা রা. এর প্রধান কাম্য।
গিরিসংকটে আবদ্ধ থাকাকালীন মুহাম্মদ স. যেমন বহিরাগতদের মধ্যে ইসলাম প্রচার করেছিলেন, তেমনই তারিফ থেকে ফিরে আপন জন্মস্থানে মুতইম ইবন আদির নিরাপত্তার ছায়ায় থেকে পূর্ণোদ্যমে বহিরাগতদের মধ্যে প্রচার চালাতে লাগলেন। বিশেষ করে হজ উপলক্ষে দূর-দূরান্ত থেকে যারা মক্কায় সমবেত হতেন, কিম্বা মক্কা, ওকাজ, মাজান্না ইত্যাদি স্থানের মেলা উপলক্ষে সমবেত হন তাদের মধ্যে। দুষ্টু আবু লাহাবের অপপ্রচার ও দৈহিক নির্যাতন চলতেই থাকে। এতে আপাত দৃষ্টিতে হজরত মুহাম্মদ স.-এর প্রচার ব্যর্থ হল বটে কিন্তু এক জন সৎ মানুষের ন্যায় সঠিক কথা, ত্যাগ, নিষ্ঠা বহিরাগতদের মধ্যে হজরত মুহাম্মদ স.-এর অনুকূলে শুভ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হজরত মুহাম্মদ স.-কে প্রত্যক্ষভাবে তাঁর প্রচারের সত্যতা জিজ্ঞাসা করতে লাগল। যদিও প্রত্যক্ষ ভাবে ইসলামের ছায়া তলে এল না। তবুও হজে ও মেলায় প্রচারের শুভ প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। আরবের দূর-দূরান্তের মানুষের মুখে মুখে আল্লাহ ও মুহাম্মদ স.-এর কথা আলোচনা হতে লাগল। এর ফলে কয়েক জন মানুষ মক্কায় এসে ইসলাম গ্রহণ করল।
সে বছরের হজ মরসুমে মিনার কাছে আকাবা নামক উপত্যকায় মদিনার খাজরাজ গোত্রের ছ'জন যাত্রী হজরত মুহাম্মদ স.-এর হাতে বায়াত হলেন (আনুগত্যের শপথ নিলেন)। তাঁরা বলাবলি করতে লাগলেন—মদিনার ইহুদিরা যে নবীর কথা আমাদের বলে, ইনি হলেন সেই নবী। এঁকে সামনে রেখে আমরা একতাবদ্ধ হতে পারব আর মুহাম্মদ স. সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী হবেন। নিজ দেশে প্রচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁরা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করলেন। এঁদের দ্বারা ইসলামের কথা মদিনায় ছড়িয়ে পড়ল। পর বৎসর ১১/১২ জন মদিনাবাসী এসে রাতের অন্ধকারে হজরত মুহাম্মদ স.-এর কাছে শপথ করেন যে, তাঁরা শিরিক, চুরি, ব্যভিচার, সন্তান-হত্যা করবেন না, পাপচার থেকে দূরে থাকবেন, মুহাম্মদ স.-এর ন্যায়সঙ্গত আদেশ মেনে চলবেন। একে ইতিহাসে আকাবার প্রথম শপথ ব'লে উল্লেখ করা হয়েছে। মদিনায় প্রচার ও কুরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য মুহাম্মদ স. মুসাব ইবন উমায়িরকে পাঠান। ইনি মদিনায় নামাজ পরিচালনা করতেন।
পরবর্তী হজ মরসুমে মুসাব ৭২/৭৩ জন মদিনাবাসীকে নিয়ে (এর মধ্যে দুই জন মহিলা) আকাবা নামক স্থানে মুহাম্মদ স.-এর সঙ্গে মিলিত হলেন। মুহাম্মদ স. চাচা আব্বাস রা.-কে নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলাপে জানলেন, তিনি যদি আত্মীয়-পরিজন নিয়ে মদিনাবাসীর আহ্বানে মদিনায় যান, মদিনাবাসী তাঁদেরকে নিজ পুত্র-কন্যার মতো রক্ষা করবেন। তখন পৌত্তলিক আব্বাস রা. তাঁদের বলেন, মুহাম্মদ স.-কে আশ্রয় দিলে আরবের সমস্ত মুসরিক গোত্র-গুলোর সঙ্গে যুদ্ধের ঝুঁকি আছে। বীরত্বব্যঞ্জক ভাবে তাঁরা বললেন, সমস্ত ঝুঁকি নিতে তাঁরা প্রস্তুত। এবার (৬২২ খ্রি.) হজরত মুহাম্মদ স. মুসলিমদের মদিনায় হিজরত করার আদেশ দিলেন। মক্কাবাসীরা নানা বাধা সৃষ্টি করল। অনেকে নিজ আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে স্ত্রী-পুত্রদের ফেলে মদিনায় যেতে বাধ্য হলেন। হজরত মুহাম্মদ স. আবু বকর রা., আলি রা.-কে নিয়ে আল্লাহর হুকুমের প্রতীক্ষায় থাকলেন। মুহাম্মদ স. মদিনায় ঘাঁটি তৈরি করেছেন, তাদের আওতার বাইরে গিয়ে শক্তি সঞ্চয় করলে তার ফল কী হবে এই চিন্তায় মক্কাবাসীরা প্রমাদ গুনল। দার-এ নাদোয়াতে তারা মিলিত হয়ে ঠিক করল—প্রত্যেক গোত্রের এক জন ক'রে বীর যুবক তরবারির আঘাত করে মুহাম্মদ স. কে হত্যা করবে। তা হলে বনি হাসিম গোত্র এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে সাহসী হবে না। মুহাম্মদ স. হিজরতের হুকুম পেলেন, সেই সঙ্গে পেলেন শত্রুদের পরিকল্পনার পূর্বাভাষ। শত্রুরা তাঁর বাড়ি ঘেরাও করল। তিনি দেশবাসীর বিশ্বাসের প্রতীক হিসাবে তাঁর কাছে জমা রাখা গচ্ছিত ধনের জন্য আলি রা.-কে ঠিক করে, নিজ বিছানার একটা চাদরমুড়ি দিয়ে আলি রা.-কে রেখে, রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে যাত্রা করলেন। তাঁর মুখে তখন আল্লাহ্র কালাম। তরবারি হস্তে যুবকরা দেখতে পেল না কেমন ভাবে, কখন মুহাম্মদ স. গৃহত্যাগ করেছেন। এখান থেকে মুহাম্মদ স. আবু বকর রা.-এর বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হলেন। সেখান থেকে 'আল কাসওয়া” নামের এক উষ্ট্রী চেপে আবু বকর রা.-কে সাথী করে মদিনার উদ্দেশে যাত্রা করেন। যাত্রা শুরুর পূর্বে পিছন ফিরে মক্কার দিকে তাকিয়ে হজরত স. বলেন, কত চমৎকার শহর তুমি, হে মক্কা! আমি তোমায় কত ভালবাসি! আমার স্বজাতি আমাকে নির্বাসন না-দিলে আমি তোমাকে ছেড়ে অন্য কোথাও বাসের সংকল্প করতাম না কুরায়িসরা রাতের শেষে মুহাম্মদ স.-এর বিছানায় মুহাম্মদ স.-কে দেখতে না- পেয়ে চারদিকে লোক পাঠিয়ে দিল। হজরত মুহাম্মদ স. পথিমধ্যে সত্তর গুহায় আত্মগোপন করলেন। পূর্ব ব্যবস্থানুযায়ী আবু বকর-পুত্র আবদুল্লাহ রা. রাতের অন্ধকারে এসে শত্রুদের তৎপরতার সংবাদ জানাতেন। আবু বকর রা.-এর এক ভৃত্য ছাগলের দুধ জোগান দিত আর কন্যা আসমা কিছু কিছু খাদ্য দিয়ে যেতেন। একদল ঘোড়সওয়ার গুহার অতি নিকটবর্তী হলেও তাঁদের সন্ধান পায়নি। এই সত্তর গুহায় তিন দিন অবস্থানের পর হজরত মুহাম্মদ স. পুনরায় মদিনার পথে পা বাড়ালেন। কুরারিসরা ঘোষণা করল জীবিত-মৃত যে কোনও অবস্থায় মুহাম্মদ স.-কে আনতে পারলে ১০০ উট দিয়ে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। ঘোড়া নিয়ে সুরাকা বিন মালিক ছুটি দিল। সুরাকা প্রায় মুহাম্মদ স.-এর সন্নিকটবর্তী হয়ে পড়েছিল কিন্তু ঘোড়ার পা একাধিকবার হোঁচট খেয়ে ছিটকে গেল। তখন সুরাকা বলতে বাধ্য হল মুহাম্মদ স.-এর কাছে আসমানি মদত বর্তমান। সুরাকা অঙ্গীকার ভিক্ষারূপে নিয়ে ওই স্থান থেকে প্রস্থান করল।
অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে ৮ রবিয়ল আউয়াল বৃহস্পতিবার নবুয়তের ত্রয়োদশ বৎসর, ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২০ সেপ্টেম্বর, হজরত মুহাম্মদ স. মদিনা থেকে তিন মাইল দূরে কুবা নামক পল্লিতে উপস্থিত হন। পূর্বে মক্কা থেকে আসা মুসলিমরা এই কুবা পল্লিতে অবস্থান করছিলেন। এই সময় আগতদের মুহাজির (উদ্বাস্তু) ও মদিনাবাসী আশ্রয় দাতাদের আনসার (সাহায্যকারী) বলা শুরু হয়। আনসাররা তুমুল আওয়াজ তুলে আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে মুহাম্মদ স.-দের বরণ করেন। এই সময় মুহাম্মদ স. সহ ছিলেন মোট তিন জন (মুহাম্মদ স., আবু বকর রা. ও পথ প্রদর্শক) । কুবায় কুলসুম ইবন আল হাদম রা. নামের গোত্রপতির গৃহে আতিথ্য গ্রহণ করেন। তিন দিন পর আলি রা. মক্কা থেকে এসে এঁদের সঙ্গে যোগ দেন।
বুখারি র. মতে হজরত মুহাম্মদ স. কুবায় ১৪ দিন (অন্যান্যের মতে চার দিন) অবস্থান করেন। কুলসুম রা.-এর দেওয়া এক খণ্ড জমিতে (কুবায়) মসজিদ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হয়। হজরত মুহাম্মদ স. স্বহস্তে এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। শ্রমসাধ্য সকল প্রকার কাজে সাহাবিদের সনির্বন্ধ অনুরোধেও বিরত হননি। পবিত্র কুরআন শরিফে এই মসজিদের নাম উল্লেখ করা না-হলেও একে তাকওয়ার ভিত্তিতে স্থাপিত মসজিদ ব'লে উল্লেখ করা হয়েছে (কুরআন ৯ : ১০৮-৯)। এটাই হজরত স.-এর স্মৃতিতে স্থাপিত প্রথম মসজিদ।
১৪ দিন কুবা পল্লিতে অবস্থান ক'রে সদলবলে মদিনার অভিমুখে যাত্রা করেন। বনি সালিম গোত্রের মহল্লায় সালাতে জুমআ আদায় করেন এবং প্রথম বারের মতো নামাজে খুৎবা প্রদান করেন। সমস্ত গোত্রের আনসাররা দলে দলে ও মাতুল গোত্রের বনু আল নাজ্জার-রা অস্ত্র সজ্জিত হয়ে এসে সারা পথে হজরত মুহাম্মদ স.-কে বিপুল সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করেন এবং প্রত্যেক গোত্র তাঁকে আতিথ্য গ্রহণের অনুরোধ করেন।
হজরত মুহাম্মদ স.-এর মাতুল গোষ্ঠীর আবু আইউবের বাড়ির সামনে রসুল স.-এর উট আল কাসওয়া থেমে গেলে তিনি তাঁর বাড়ির আতিথ্য গ্রহণ করেন। আবু আইউব রা. নিজ দ্বিতল বাড়ির উপর তল দিতে চাইলেও হজরত মুহাম্মদ স. লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সুবিধার্থে নিচের তল গ্রহণ করেন। এখানে প্রত্যহ আইউব রা. খাদ্য দিলেও অন্যান্য সাহাবিরা প্রায় প্রত্যহই নানা ধরনের খাদ্যাদি পাঠাতেন। তিনি এখানে একটানা সাত মাস অতিবাহিত করেন। এই সাত মাসের মধ্যে মদিনার মসজিদ ও তৎসংলগ্ন মুহাম্মদ স. এর চারটি ঘর তৈরি করা হয়। মুহাম্মদ স. এই ঘরে উঠে যান। মদিনা থেকে জায়িদ ও রাফি রা.-কে মক্কায় পাঠানো স্-এর স্ত্রী সওদা ও কন্যা ফাতিমা রা. ও উম্মে কুলসুম রা.-
কে মদিনায় নিয়ে আসেন। জায়িশা রা. এলেন তাঁর ভাই আবদুল্লাহ্র সঙ্গে। মদিনা শহরে এসে (পূর্ব নাম ইয়াসরিব বা ইয়াথরিব) মুহাম্মদ স. আল্লাহ্র যার তৈরিতে মনোনিবেশ করেন। মসজিদ তৈরির জন্য বনি নাজ্জার গোত্রের দুই এতিম বালকের (সোহেল ও সোহায়েল) এক খণ্ড জমি বিনামূল্যে পাওয়া গেলেও তা গ্রহণ না-করে ১০ দিনারে (এক দিনার সমান ২৭৫০ টাকা, ২০০২ খ্রিস্টাব্দ) কিনে নিলেন। এই টাকা হজরত আবু বকর রা. প্রদান করেন। কাঁচা ইটের দেওয়াল, খেজুর কাঠের খুঁটির উপর খেজুর গাছের ডালপালার চাল, মেঝেতে কাঁকর বালু। এটাই ছিল তাকওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় মসজিদ। যে মসজিদ তৈরিতে রসূল স. স্বয়ং কাজে করে খেজুর ডাল, মাথায় করে পাথর বহন করেছেন। মসজিদের পাশে তৈরি হল হুজুর স.-এর আবাস। উম্মাহাতুল মু'মিনিনদের হুজরা বা বাস গৃহ। মসজিদের একপাশে একটা চত্বর, যা পরিবার বিহীন নিঃস্ব মুহাজিরদের আশ্রয়স্থল। এই মুহাজিরদের 'আহল-উল সুফফা' বলা হত। এঁদের সংখ্যা প্রায় ৭০০ ছিল বলে কথিত। মাতৃভূমিত্যাগী সহায় সম্বলহীন মুহাজিরদের পুনর্বাসনের জন্য হজরত মুহাম্মদ এক অনুপম পদ্ধতি গ্রহণ করেন। ভ্রাতৃবন্ধনের সামাজিক মর্যাদানুসারে এবং চারিত্রিক বৈশিষ্টে এক একজন মুহাজিরের সঙ্গে এক একজন আনসারের প্রাতৃবন্ধন করে দেন। আনসার ভাই তাঁর বাড়ি, আসবাবপত্র, আবাদী আমি ইত্যাদির অর্থাত মুহাজির ভাইকে অর্পণ করেন। সম্পত্তির উত্তরাধিকারীও এঁরা হয়েছিলেন। পরে অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ ব্যবস্থা রহিত হয়। মুহাম্মদ ২. জামাতের উপর খুব গুরুত্ব দিতেন। মদিনার মসজিদে নামাজের মনে প্রায় হাঁক দিয়ে নামাজিদের আহ্বান করা হত। হজরত আবু বকর রা. যে হারদি, ক্রীতদাসকে ক্রয় ক'রে মুক্তি দেন, মহান সুউচ্চ কণ্ঠের অধিকারী বিলাল রা. হন (৬২৪ খ্রিস্টাব্দে) ইসলামের তথা মসজিদুন নবীর প্রথম মদিনার প্রধান দুই যুযুধান গোত্র আওস ও খাজরাজ হজরত মুহাম্মদ স.-এর জোয়ার, আত্মভাবে একত্রিত হল। মদিনায় ব্যবসাদার সুদখোর ইহুদিরা যেমন প্রচুর ২-সম্পদের মালিক ছিল, তেমনই তিনটি দুর্গের মালিক হয়ে আওস ও খাজরাজ গোত্রের উপর ছড়ি যেত।
দূরদর্শী হজরত মুস, ইদ ও মদিনার মুসরিকদের নিয়ে মদিনাকে একটা রাষ্ট্রীয় রূপ দেওয়ার চেষ্টা নেন। এই তিন পক্ষের সম্মেলনে একটা সনদ তৈরি করেন, যা মদিনার সনদ নামে খ্যাত। এটাই পৃথিবীর বুকে প্রথম লিখিত সংবিধান। যে সংবিধান কর্তৃক মুহাম্মদ স. হন রাষ্ট্রপতি ও প্রতিষ্ঠিত হয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা।
ইহুদি সম্প্রদায় ও মুনাফিকদের বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্রের দরুন হজরত মুহাম্মদ স.-এর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আসে বাধা এবং মদিনার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়। ইহুদিদের ক্ষোভের প্রধান প্রধান কারণ ছিল—প্রতীক্ষিত নবী ইসরাঈল বংশে না হয়ে ইসমাঈল বংশে হল কেন? মুসলিমরা নবী ঈসা আ.-কে নিষ্কলঙ্ক বলে কী ভাবে? ঈসা আ.-কে নবী বলা যায় কি? আমরা আমাদের কিতাব বিকৃত করেছি এই অপবাদ সঙ্গত নয়। রসূল স. এর মদিনায় আসার ফলে ইহুদিদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে এবং সুদের কারবারে হাত পড়বে।
অপরদিকে আওস ও খাজরাজ গোত্র আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে তাদের নেতা নির্বাচনের ঠিক করে। কিন্তু মুহাম্মদ স.-এর আগমনে তাতে বাধা সৃষ্টি হয়। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইসলাম গ্রহণ করল কিন্তু ইহুদিদের সঙ্গে ইসলাম বিরোধীতায় জোটবদ্ধ হতে লাগল। ভিতর ভিতর ইহুদিরা কুরায়িসদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হল। একত্রিত হল ইহুদি, মদিনার মুনাফিক ও মক্কার কুরায়িস। এদের ষড়যন্ত্র মদিনার নিরাপত্ত বিঘ্নিত করল। সাদ ইবনে উবাই মক্কার কাবায় গিয়ে কা'বা তওয়াফ করতে যান। সে সময় আবু জেহেল তাকে বলে—তোমরা আমাদের ধর্মত্যাগী লোকদের দিয়েছ, আবার কা'বায় তওয়াফ করতে এসেছ, এটা অসহ্য। সাদ রা. বললেন, তুমি যদি আমাকে কা'বায় তওয়াফে বাধা দাও, আমি মদিনায় ফিরে গিয়ে সিরিয়ায় যাওয়ার বাণিজ্যের পথ বন্ধ করে দেব।
কুরায়িসরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিল। মুহাম্মদ স.-এর কানে এ কথা পৌঁছাবার পর তিনি মদিনার বিভিন্ন স্থানে পাহারা শুরু করলেন। তিনি এবং সাহাবারা অস্ত্র নিয়ে শয়ন এবং গাত্রোত্থান করতে লাগলেন। নবী স.-এর জন্য পাহারার ব্যবস্থা হল। এই সময় জিহাদের (৬২৪ খ্রিস্টাব্দ) অনুমতি মূলক আয়াত নাজিল হল। তবে তা ছিল আত্মরক্ষামূলক। দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান, ১৭ মার্চ ৬২০ খ্রিস্টাব্দ, কুরায়িসদের সঙ্গে মুহাম্মদ স.-এর নেতৃত্বে প্রথম সম্মুখ সমর হয় বদর প্রান্তরে। মুসলিম পক্ষে 300 00 জন সৈন্য। অপরদিকে ১০০০ সুসজ্জিত কুরায়িস সৈনা। বুদ্ধে আবু জেহেল নিহত হল। মুসলিম পক্ষে ১২/১৪ জন শহিদ হলেন। কুরাসিদের ৭০ জন নিহত ও ৭০ জন বন্দি হন।
বন্দিদের বিচারের ভার সাধারণ মুসলমানের উপর দেওয়া হল। আবু বকর রা. বললেন, মুক্তিপণ নিয়ে বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হোক, পক্ষান্তরে এরা ইসলাম গ্রহণ করতে পারে। উমর রা. বলেন, ওরা ইসলামের শত্রু, ওদের মৃত্যুদণ্ড হবে এবং নিজ নিজ আত্মীয়কে ওরা হত্যা করুক। প্রথম মত গ্রহণ ক'রে মুহাম্মদ স. মুক্তিপণ ধার্য করলেন ৪০০ দিরহাম ক'রে। অনেক ঐতিহাসিকের মতে ১০০০ থেকে ৪০০০ দিরহাম। চাচা আব্বাস প্রমুখ ধনীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত আদায় করা হল। নিঃস্বদের বিনাপণে মুক্তি দেওয়া হল। যারা লেখাপড়া জানত তারা নিরক্ষর ১০ জন মুসলিমকে অক্ষর-জ্ঞান দান ক'রে মুক্তি পেল। উল্লেখ্য, জায়িদ ইবনে সাবিত এই বন্দিদের কাছে লিখন পদ্ধতি শিখে পরবর্তীতে অহি-লেখক রূপে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। বদর যুদ্ধের পর হজরত মুহাম্মদ স.-এর কন্যা ফাতিমা রা.-এর সঙ্গে হজরত আলি রা.-এর শুভ পরিণয় হয়। বিবাহে ১২৫ দিরহাম দেনমোহর হয়।
🖕🖕🖕🖕🖕🖕🖕🖕🖕
N:B:- লিঙ্কে স্পর্শ করে লেখাগুলো পড়ুন। যারা পড়তে ভালোবাসেন আমার প্রোফাইল লাইক শেয়ার করুন। আমার পরিশ্রম সার্থক হবে।।লেখায় কমেন্ট -লাইক শেয়ার করে পরিশ্রমে উৎসাহী করুন 🚶🚶🏃🏃
✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍
আব্দুল মুসরেফ খাঁন// পাঁশকুড়া
🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎
পর্ব-01 পড়ুন👉✍
https://www.facebook.com/share/p/1ZmvN6RSva/
পর্ব-02 পড়ুন👉✍
https://www.facebook.com/share/p/1CkXLWWJKm/
পর্ব-04 পড়ুন👉✍
https://www.facebook.com/share/p/XyG8w5JCf8sxdJKR/
পর্ব-05 পড়ুন👉✍
https://www.facebook.com/share/p/BTyfwTh7vq5uLy69/
পর্ব-06 পড়ুন👉✍
https://www.facebook.com/share/p/SDS5WTVCWMvhGTXv/
পর্ব-07 পড়ুন👉✍
https://www.facebook.com/share/p/CV1uzrpEouykxr2j/
ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যা হজরত মহম্মদ (স:) কেন্দ্রীক : পড়ুন👉👉👉👉✍
https://www.facebook.com/share/p/NpkYrgpzzX6PdZpB/
বিশ্বমহামানব হজরত মহম্মদ(স:) সমাপ্ত পর্ব👉👉✍
https://www.facebook.com/share/p/18GrPPDpyz/
#ইসলাম #হজরতমহম্মদ #trend #color #cherry #اكسبلور #فلو #اصدقاء #أصدقاء #فيديوهات #ريلاكس #تصوير #ريلز #كومنت #explore #photoofthed
0 Comments