বিশ্বমহামানব হজরত মহম্মদ(স:) সমাপ্ত পর্ব :লেখায় কমেন্ট -লাইক শেয়ার করে পরিশ্রমে উৎসাহী করুন 🚶🚶🏃🏃
✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍
আব্দুল মুসরেফ খাঁন// পাঁশকুড়া
🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎
হজরত মুহাম্মদ সা. ছিলেন আমাদের মতোই শারীরিক বৈশিষ্ট সম্পন্ন এবং মানবীর গর্ভজাত—মানবের ঔরসজাত এক মানুষ। কিন্তু তিনি কী রকম মানুষ ছিলেন, সে কথা বলতে গিয়ে কবি গোলাম মোস্তাফা সাহেব তাঁর বিখ্যাত “বিশ্বনবী' গ্রন্থে বলেন, তিনি আমাদের মতো মানুষ ছিলেন, এটাও যেমন ভুল ধারণা, তিনি একজন আলৌকিক ব্যক্তি বা অতি মানুষ ছিলেন, এটাও তেমনই ভুল ধারণা। মানুষ * অতি মানুষের তিনি ছিলেন সমন্বয়। এটাই তাঁর বৈশিষ্ট। আরও বলেন, তিনি ছিলেন এমন মানুষ, যাঁর উপর অহি নাজিল হত, আকাশ পৃথিবী জুড়ে যাঁর কর্মক্ষেত্র প্রসারিত ছিল, গ্রহ-নক্ষত্র যাঁর ভৃত্য ছিল। সর্বোপরি, যিনি ছিলেন আল্লাহর প্রতিনিধি বা খলিফা, এই ব্যাপক গণ্ডির মধ্যে বিচরণশীল একজন মানুষের রূপই ছিল হজরত পবিত্র কুরআনে মুহাম্মদ স. সম্বন্ধে বলা হয়েছে— 'হে মুহাম্মদ, নিশ্চয়ই তুমি অনুপম চরিত্রের অধিকারী।
মুহাম্মদ সেই ব্যক্তি যাঁর জীবনের ক্ষুদ্র-বৃহৎ সমস্ত ঘটনা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ। তিনি ছিলেন এতিম হিসাবে সকলের স্নেহের পাত্র, স্বামী হিসাবে প্রেমময়, পিতা হিসাবে স্নেহশীল, বন্ধু হিসাবে অতি বিশ্বস্ত, আমানতদার হিসাবে আদর্শ-স্থানীয়। একাধারে তিনি ছিলেন সফল ব্যবসায়ী, দূরদর্শী সংস্কারক, বীর যোদ্ধা, নিপুণ সেনানায়ক, নিরপেক্ষ বিচারক, মহৎ রাজনীতিবিদ, মানব জাতির সর্বোত্তম আদর্শ। কর্মক্ষেত্রে তাঁকে দেখেছি সর্বত্র সততা, ব্যক্তিত্ব ও সাফল্যের অপূর্ব সমন্বয়-সাধক। কোমলতা ও কঠোরতার মিশ্রণ ছিল জীবনের প্রতি পদক্ষেপে। একাধারে পাপড়ির মতো কোমল-অপরদিকে বজ্রের মতো কঠোর। মানুষের অশ্রু সজল আদি, দুঃখ, বেদনা, রক্তপাত, হানহানি, উৎপীড়িতের ক্রন্দন ধ্বনি তাকে বিহ্বল করে খুলত। মানুষের গ্রহণে তিনি অশ্রুপাত করেছেন। সত্য প্রতিষ্ঠার কোমল হৃদয়কে কঠোর করে তরবারি করেছেন অবলীলাক্রমে। হাতুর প্রতি সুদৃঢ় বিশ্বাসে তিনি ছিলেন অটল হিমাদ্রি পরিমাণ। নিজ প্রতিবেশীর হাতে পেয়েছেন অশেষ যন্ত্রণা। হয়েছেন লাঞ্ছিত, রক্তাক্ত, দেশত্যাগী। প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়েছে প্রতিনিয়ত। কোনও লোভ প্রলোভন তাকে প্রভুর পাদপীঠ থেকে চুল পরিমাণ নড়াতে পারেনি। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন তারা যদি আমার ডান হাতে সূর্য এবং বাম হাতে চাঁদ এনে দেয় তথাপি আমি মহাসত্য ও স্বীয় কর্তব্য হতে বিচ্যুত হব না। ঐতিহাসিক লিওনার্ড বলতে বাধ্য হয়েছিলেন—পৃথিবীর কোনও মানুষ যদি আল্লাহকে প্রত্যক্ষ করে থাকেন, বুঝে থাকেন এবং প্রকৃত পক্ষে পৃথিবীর কোনও উপকার ক'রে থাকেন তবে সুনিশ্চিতভাবে তিনি আরবের ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক (শেষ নবী) হজরত মুহাম্মদ স. বালক বয়স থেকেই তিনি ছিলেন মিথ্যা, প্রবঞ্চনা, নোংরামি, ভণ্ডামির বিরুদ্ধে। তাই তো যারা তাঁর চিরশত্রু, বারবার তাঁকে ও তাঁর ধর্মকে শেষ করতে চেয়েছে, তারাই তাঁকে আল আমিন (বিশ্বাসী) ও আস সাদিক (সত্যবাদী) উপাধিতে ভূষিত করেছেন।
আরব-ভূমি যখন দলাদলি, মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানিতে ব্যস্ত সে সময় তিনি শাস্তির জন্য হিল-ফুল ফজুল নামে সেবা সংঘ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই সেবা সংঘ ২০ বছর ধরে মক্কায় অত্যাচারিত মানুষের সেবা করেছে।
১২ বছর ধরে অত্যাচার সহ্য করে, স্বদেশ ভূমি ত্যাগ করে, হিজরত করে নিজ সততা, ত্যাগ, পরিচ্ছন্নতা, নিয়মানুবর্তীতার দ্বারা আরব জাতিকে এক বন্ধনে বাঁধতে পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান রচনা করেন (মদিনার সনদ 22 ) । যিনি দেশত্যাগী, ভণ্ড, যাদুকর খ্যাতি স্বদেশবাসীর থেকে পেলেন, তিনি বিদেশে হলেন মাথার মুকুটবং রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারক, প্রধান সেনাপতি, ইমাম, পথ প্রদর্শক, নয়নের মণি। যে আরবে কোনও কেন্দ্রীয় সরকার ও শাসন ছিল না সেখানে আনলেন সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা ও পরিচ্ছন্ন সরকার। সেখানে একই ছত্রছায়ায় আনলেন দোস্ত-দুশমনকে। আওস মাজরাজকে। খ্রিস্টান ইহুদিকে। মুসলিম-অমুসলিমকে। ধনী- নির্ধনকে। সমমর্যাদা দিলেন নারী ও পুরষকে। তিনি ধনী, রইস, আমিরের সঙ্গে বসালেন দরিদ্র, অসহায়, দূর্বল মজলুমদের। তিনি বাস্তবিকই বলেছেন, তিনি শাস্তি দেওয়ার জন্য আসেননি, এসেছেন শান্তির জন্য। আমীর আলি সাহেব বলেন- এত নির্মল, এত কোমল অথচ বিরোচিত স্বভাব শ্রদ্ধায় নয়, বরং ভালবাসতেই অনুপ্রাণিত করে।
বিপুল অস্ত্রশস্ত্র, সেনাবাহিনী, বালাখানা, বিপুল রাজস্ব-কিছুরই অধিকারী যিনি ছিলেন না কিন্তু ছিলেন রাষ্ট্রপতি ও রাজকীয় সম্মানের অধিকারী। সাধারণ কাজকেও তিনি যথাযথ সম্মান দিতেন। নিজ স্ত্রীসের সাংসারিক কাজে সাহায্য করতেন। পশু হজরত মুহাম্মদ স. চরাতেন। কাপড় সেলাই করতেন। দুধ দোহন করতেন। নিজ পাদুকা সেলাই করতেন। এ সম্বন্ধে ইমাম গাজ্জালী র. বলেন, মুহাম্মদ স. স্বয়ং পশুপক্ষীদের আহার্য দান করতেন। বকরি দোহন করতেন। ঘর মুছতেন। খাদেমের সঙ্গে একত্রে খেতেন। ভৃত্যের কাজে সাহায্য করতেন এবং বাজার থেকে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় ক'রে আনতেন। আমরা জানি মদিনায় যখন মসজিদ তৈরি হয়েছে তখন রাষ্ট্রপতি হয়েও নিজ কাঁধে খেজুর ডাল ও মাথায় করে পাথর বহন করেছেন। যুদ্ধক্ষেত্রে স্বয়ং উপস্থিত হয়েছেন। যদিও তাঁর তরবারির আঘাতে কোনও দিন কেউ প্রাণ দেননি। তিনি শান্তি-প্রেমিক হয়ে সেনাবাহিনীকে হুকুম দিয়েছেন— 'আগে না মুসলমানের তরবারি আঘাত করে।
নারীকে তিনি দিয়েছেন পিতার ও স্বামীর সম্পত্তির অধিকার। তিনি বলেছেন, মায়ের পদপ্রান্তে সন্তানের স্বর্গ। আরও বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করে। তিনি দাস প্রথার মূলে আঘাত হানেন। মদপান, জুয়াখেলা, পরদ্রব্য অপহরণ, রাহাজানি, নারী ধর্ষণ, বহু স্বামী গ্রহণ, পুরুষের সংখ্যাতীত স্ত্রী অবৈধ বলে ঘোষণা করেন। অর্থনৈতিক সাম্য আনতে জাকাত, ফিতরা, উত্সর, খারাজ, ফে-র ব্যবস্থা করেন। প্রতিষ্ঠা করেন বায়তুল মাল। ধর্মীয় চিন্তায় অপর ধর্মকে ঘৃণা না-করে তিনি বলেছেন— 'লা ইকরাহা ফিদদ্বিন'—ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি কোরো না। 'লাকুম দিনুকুম অলিয়া দ্বিন'–তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য, আমার ধর্ম আমার জন্য।
মাইকেল হার্ট বিশ্বের ১০০ শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ বাছতে রসুল মুহাম্মদ স.-কে প্রথম স্থান দিয়েছেন। বলেছেন, মানব জাতির ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ উভয়ক্ষেত্রে বিপুল ভাবে সফলকাম।
বি. স্মিথ বলেন হজরত মুহাম্মদ স. হলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সংস্কারক। মহাত্মা গান্ধী বলেন—ইসলাম একটা মিথ্যা ধর্ম নয়। শ্রদ্ধার সঙ্গে হিন্দুরা তা অধ্যয়ন করুক, তা হলে আমার মতোই তারা একে ভালবাসবে।
গুরু নানক বলেন—এখন দুনিয়াকে পরিচালিত করার জন্য কুরআনই
টলস্টয় বলেন-আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য যে মুহাম্মদ স.-এর প্রচার এবং হেদায়াত (সঠিক ও নির্দিষ্ট পথপ্রদর্শন) ছিল যথার্থ।
জর্জ বার্নাড শ' বলেন—মধ্যযুগীয় পাদ্রিগণ হয় অজ্ঞতাবশত, আর না হয় গোঁড়ামির কারণে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধাচারণ করতেন।
উইলিয়াম মুর বলেন হজরতের বিরাট ব্যক্তিত্ব ও অপূর্ব মননশীলতা শুধু তৎকালীন যুগেই নয়, বরং সর্বযুগের ও সর্বকালের মহামানবের জন্য শ্রেষ্ঠত্বের পরিচায়ক।
ফিলিপ কে. হিট্টি বলেন-ইসলামের পবিত্র নবী নির্দেশ দিয়েছিলেন দেশ ও জাতি নির্বিশেষে সকল মুসলমান ভাই ভাই।
টমাস কার্লাইল বলেন—আমি মুহাম্মদকে পছন্দ করি এই জন্য যে, তিনি ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী এক দরিদ্র ব্যক্তি। তিন নিজের জুতো নিজে মেরামত করতেন, বস্ত্রে তালি লাগাতেন। কিন্তু মুকুট পরিহিত কোনও সম্রাটকেই স্বহস্তে প্রস্তুত জামা পরিহিত এই লোকটির মতো মান্য করা হয়নি।
মানবতার উৎকর্ষ সাধনে, মানুষের নৈতিক, বৌদ্ধিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি বিধানে এবং সর্বোপরি বিশ্বমানবের সামগ্রিক কল্যাণ সাধনে মহানবীর অবদান তুলনাতীত। মাত্র ২৩ বছরের (৬১০-৬৩২ খ্রিস্টাব্দ) স্বল্প পরিসর সময়ে তিন এক ধর্মের মাধ্যমে এক নতুন সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করেন। পারিবারিক তথা ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক জীবন অতিক্রম ক'রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য তিনি যে আদর্শ ও বিধান রেখে গেছেন তা অনুসরণ করা হলে এই হানাহানির পৃথিবী থেকে অশান্তি দূর হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা পেত। আদর্শ আইন প্রণেতা, প্রথম সংবিধান রচয়িতা, আদর্শ শাসক, আদর্শ ন্যায়বিচারক হিসাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি যে নজির স্থাপন ক'রে গেছেন তা যে কোনও রাষ্ট্রের পক্ষে অনুসরণযোগ্য। হজরত মুহাম্মদ স. শুধু ধর্ম প্রচার ক'রে ক্ষান্ত হননি, ধর্মের বিধি ব্যবস্থার মধ্যে থেকে এক কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ক’রে রাজনৈতিক ইতিহাসের পাতায় কালজয়ী প্রতিভার সঙ্গে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব-অনেকের মতে মহামানবের — স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।
বাল্য কৈশোরে সাধুতা আর সততার জন্য পেয়েছেন 'আল আমিন' (বিশ্বাসী) উপাধি। পরে উপাধি হিসাবে পেয়েছেন 'আস্ সাদিক' (সত্যবাদী)। পূর্ব পুরুষের পালনীয় ধর্মের বিরোধিতা করার পরও আত্মীয়-অনাত্মীয়, স্বগোত্রীয় ও অন্যান্য গোত্রীয় মানুষ নির্বিবাদে স্বীকার করেছেন, 'মুহাম্মদ, তুমি কখনও মিথ্যা বল না'। তাঁকে পাহাড় পরিমাণ সোনা ও সর্বাধিক সুন্দরী নারী এবং দেশের শাসনভার দিতে চাইলেও স্ববাক্য, নীতি ও বিশ্বাস থেকে দূরে সরে যাননি। যুবক কালে মানুষের প্রতি মানুষের অন্যায় অত্যাচার, রক্তপাত, হানাহানি, কাড়াকাড়ি, মারামারি, যুদ্ধ বিগ্রহ দেখে স্থানীয় মানুষদের নিয়ে তৈরি করেন সেবা সংঘ 'হিল-ফুল ফজুল। যে প্রতিষ্ঠান একটানা ২০ বছর ধরে মানব কল্যাণে নিজেকে নিযুক্ত রাখে। মানসিক তেজস্বীতায় যেমন কখনও মিথ্যা বলেননি, তেমনই কখনও ওয়াদা খেলাপ করেননি
ও বিশ্বাস ভঙ্গ করেননি। করেননি আমানত খেয়ানত। ছিলেন সর্বপ্রকার প্রলোভনের ঊর্ধ্বে । অর্থ, সম্পদ, বিলাস, বৈভব কিছুই তাঁকে সত্য ও বিশ্বাস থেকে দূরে সরাতে পারেনি। জীবনে কাউকে কোনওদিন কটুকথা বলেননি। দেননি কারও মনে কষ্ট। সবার সঙ্গে ছিল নম্র ব্যবহার। সেনাপতি হিসাবে ছিলেন অতি বিচক্ষণ। বাদশাহ হিসাবে ছিলেন ন্যায়পরায়ণ। রাজনীতিবিদ, সমাজপতি, আইনপ্রণেতা, আইনের অনুগত হিসাবে ছিলেন আপন মহিমায় উজ্জ্বল। আধ্যাত্ম সাধনায় ছিলেন পরম তাপস। একই চরিত্রে সর্বগুণের সমাবেশের একমাত্র উদাহরণ তিনিই। এ জন্য ১৪ শত বছর পরেও সমগ্র মানব জাতির জন্য তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
এই মহান পুরুষকে স্মরণ ক'রে বিশ্বের মুসলমান নানাভাবে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর জন্ম তথা মৃত্যুদিন পালন করেন। যদিও অনেকে এ দিনটি পালন করা নিয়ে নানা প্রশ্নও তোলেন। প্রশ্নের ও তার জবাবের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা বলতে পারি আমরা তাঁর জন্ম-মৃত্যু দিন যেভাবেই পালন করি না কেন, যতক্ষণ না তাঁর আদর্শ, চিন্তা, লক্ষ্য, বাসনা, কামনা, সাধনা, শয়ন, স্বপন, হাসি, কান্না, ওঠা, বসা, খাওয়া, পরা, ত্যাগ, নিষ্ঠা, তিতিক্ষা, ক্ষমা, প্রেম, প্রীতি, ভালবাসা, দয়া মায়া, স্নেহ, সহযোগিতা, ব্যবহারকে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে অনুসরণ অনুকরণযোগ্য ক'রে তুলতে পারব, ততক্ষণ সবই হবে ব্যর্থ! হবে ভস্মে ঘি ঢালা। যিনি কোনওদিন মিথ্যা কথা বললেন না। কারও মনে আঘাত দিলেন না। অন্যায়ের পথকে অনুসরণ করলেন না। কোনও সময় অন্যায় ভাবে কাউকে বাড়তি সুযোগ দিলেন না। রাষ্ট্রের প্রধান হয়েও আরাম আয়েসকে যিনি করলেন হারাম। রাজা হয়েও যিনি রাজর্ষীর মতো জীবন যাপন করলেন পর্ণ কুটিরে। উপাসনার মসজিদকে করলেন রাজ প্রাসাদ। ছিন্ন বস্ত্রই যাঁর রাজপোশাক। পোকায় কাটা খেজুর যাঁর সুখাদ্য। অঢেল সম্পদ যাঁর পদতলকে ভারী ক'রে তুলেছে কিন্তু সে সম্পদ ব্যয় হয়েছে দুস্থ, অনাথ, অভাবীদের সেবার্থে। ডজনাধিক যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে যোগদান করেও কাউকে তরবারি বা বল্লমের আঘাতে করলেন না হত্যা। নিজে রণক্ষেত্রে আহত হয়ে সর্বশক্তিমানের কাছে দু'হাত তুলে আবেদন রেখেছেন, হে আমার প্রভু, এরা অবুঝ, অজ্ঞ এদের ক্ষমা করো, এদের সুপথ দেখাও।
নিজের ক্ষুধার জ্বালা চেপে রেখে ক্ষুধার্তকে দিয়েছেন খাদ্য। ক্ষুধার জ্বালায় নিজের পেটে পাথর বেঁধে রেখে নিজেকে মানব-সেবায় ব্রত রেখেছেন। সবার সঙ্গে জাতি ধর্মের বাধা না মেনে হাসিমুখে আর্ত পীড়িতের সেবা করেছেন। একদিনের তরেও কথা ও কাজের মধ্যে ফারাক করেননি। এ সব গুণই তাঁকে শত্রুমিত্রের তথা সকলের আপন জন ক'রে তোলে। পরম শত্রুকে পরম বন্ধু হিসাবে দেখে বিশ্বকে হতবাক ক'রে দিয়েছেন। যে আবু সুফিয়ান ইসলাম ও মুহাম্মদ স.- কে শেষ করতে অস্ত্র ধরেছে, সেই আবু সুফিয়ানকে একাকী পেয়েও ক্ষমা করেছেন। পরে এই আবু সুফিয়ান হয়েছেন তাঁর শ্বশুর। যে হিন্দা ওহুদ যুদ্ধে তাঁর চাচা হামজা রা.-এর কাঁচা কলিজা চিবিয়ে খেয়েছে—মক্কা বিজয়ের দিন তাকে হাতের কাছে পেয়েও কিছু বলেননি। যে ইহুদিনী জয়নব খায়বার যুদ্ধের পর নিমন্ত্রণ ক'রে বিষ খাইয়ে মারতে চেয়েছে তাকেও ক্ষমা করেছেন। যে সুরাকা ঘোড়ায় চেপে এসে তীর দ্বারা মুহাম্মদ স.-কে হত্যা করতে চেয়েছিল তাকেও ক্ষমা করেছেন। বাড়িতে সকলে অভুক্ত থেকে অতিথিকে খাইয়েছেন। যে মক্কাবাসী, আত্মীয়-পরিজন, জমি-জায়গা, স্বদেশ ভূমি, স্রষ্টার ঘর কা'বা থেকে সরে যেতে তথা অপর দেশে হিজরত (স্থানান্তরিত) করতে বাধ্য করেছে, সেই মক্কাবাসীকে মক্কা বিজয়ের 'দিন, ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে, প্রায় নিরস্ত্র অবস্থায় পেয়েও সার্বিকভাবে ক্ষমা করেছেন। যে ক্ষমার উদাহরণ এ ধরিত্রীতে নেই। শত্রুর প্রচণ্ড আক্রমণের পর যখন তাঁর সাথীরা তাঁকে বলেছেন ওদের অভিশাপ দিন, ওরা ধ্বংস হোক। কেননা তাঁরা জানতেন পূর্বাপর বহু নবীর অভিশাপে তাঁদের বিরোধীরা সমূলে ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু মুহাম্মদ স. এ সব কথায় কর্ণপাত না ক'রে বলেছেন—'আমি অভিশাপ দেওয়ার জন্য আসিনি'। তিনি এসেছিলেন 'রাহমাতুল লিল আলামিন' হিসাবে অর্থাৎ মানবের সার্বিক কল্যাণের জন্য। পূর্বাপর নবীরা এসেছিলেন এক একটা গোষ্ঠী তথা কওমের জন্য কিন্তু মুহাম্মদ স. এসেছিলেন সমগ্র মানব মণ্ডলীর জন্য। তাঁর ধর্মমতানুযায়ী 'কুল্লু ইনসানুন ইখওয়াতুন’—সমস্ত মানুষ ভাই। ইসলাম বিশ্বাস করে আমরা সবাই আদমের সন্তান। বিশ্বাসের অভাবে পথভ্রান্ত হয়ে আল্লাহ্র স্থলে অপরকে উপাস্য করেছে ও করছে।
আল্লাহ প্রায় সাড়ে ন'হাজার বছর পূর্বে আদম আ.-কে প্রথম মানব তথা প্রথম নবী করে পৃথিবীতে ইসলামের ভিত দিলেন। সেই ইসলাম ধর্মের নবী রসুল হিসাবে হাজার হাজার প্রতিনিধি পাঠিয়ে সর্বশেষে শেষ নবী হিসাবে মুহাম্মদ স.কে আরবের বুকে পাঠিয়ে ইসলামের পূর্ণাংগতা আনলেন। আজ প্রায় ১২০ কোটি মুসলমান (২০০৭ খৃষ্টাব্দে) তাঁর নামে পড়ে চলেছেন দরুদ ও সালাম। আমিও জানাই লক্ষ লক্ষ তথা হিসাবহীন সালাম। ইয়া নবী সালাম আলায়কা, ইয়া রসুল সালাম আলায়কা ...।
N:B:- লিঙ্কে স্পর্শ করে লেখাগুলো পড়ুন। যারা পড়তে ভালোবাসেন আমার প্রোফাইল লাইক শেয়ার করুন। আমার পরিশ্রম সার্থক হবে।।লেখায় কমেন্ট -লাইক শেয়ার করে পরিশ্রমে উৎসাহী করুন 🚶🚶🏃🏃
✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍
আব্দুল মুসরেফ খাঁন// পাঁশকুড়া
🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎
পর্ব-01 পড়ুন👉✍
https://www.facebook.com/share/p/1ZmvN6RSva/
পর্ব-02 পড়ুন👉✍
https://www.facebook.com/share/p/1CkXLWWJKm/
পর্ব-03 পড়ুন👉✍
https://www.facebook.com/share/p/1EqZWNPDqV/
পর্ব-04 পড়ুন👉✍
https://www.facebook.com/share/p/XyG8w5JCf8sxdJKR/
পর্ব-05 পড়ুন👉✍
https://www.facebook.com/share/p/BTyfwTh7vq5uLy69/
পর্ব-06 পড়ুন👉✍
https://www.facebook.com/share/p/SDS5WTVCWMvhGTXv/
পর্ব-07 পড়ুন👉✍
https://www.facebook.com/share/p/CV1uzrpEouykxr2j/
ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যা হজরত মহম্মদ (স:) কেন্দ্রীক : পড়ুন👉👉👉👉✍
https://www.facebook.com/share/p/NpkYrgpzzX6PdZpB/
#ইসলাম #হজরতমহম্মদ #trend #color #cherry #اكسبلور #فلو #اصدقاء #أصدقاء #فيديوهات #ريلاكس #تصوير #ريلز #كومنت #explore #photoofthed
0 Comments