সাঁওতালী চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে

সাঁওতালী চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে



ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট বিশাল। এখানে হিন্দি ও বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষায় প্রতিবছর অসংখ্য চলচ্চিত্র তৈরী হয়। সুতরাং এর মাপকাঠিতে এ প্রসঙ্গের আলোচনা সহজ নয়। তবে একথা বলা যায় যে, বাণিজ্যিক ভারতীয় ছবির ক্ষেত্রে আদিবাসী বা হরিজনদের নিয়ে বোধহয় কোন ছবি তৈরী হয় নি হয়তো মুনাফার কথা ভেবে। পাশাপাশি কিন্তু তথাকথিত আর্ট ছবি প্যারালাল সিনেমার ক্ষেত্রে হিন্দি ও বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষায় আদিবাসীদের নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত কিছু ছবির কথা জানা যায়। সত্তর দশকে এরকম দুটি ছবির কথা জানা যায়। সত্তর দশকের শেষ পাদে এবং আশির দশকে এরকম দুটি ছবির কথা আমরা জানতে পারি। মৃণাল সেন পরিচালিত ‘মৃগয়া’ এবং গোবিন্দ নিহালনি পরিচালিত 'আক্রোশ'। প্রথমটি আদিবাসীদের নিয়ে এবং দ্বিতীয়টি হরিজন সম্প্রদায়ের উপর অমানবিক অত্যাচারকে কেন্দ্র করে তৈরী। কিন্তু শুধুমাত্র সাঁওতাল সম্প্রদায়কে নিয়ে তেমনভাবে ছবির কথা জানা যায় না। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য উড়িয়া ভাষায় একটা ছবির কথা জানা যায় যা সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ‘বিটলাহা' (সমাজচ্যুত) প্রথাকে নিয়ে তৈরী। ছবিটি জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত এবং দূরদর্শনের জাতীয় কার্যক্রমে দেখানো হয়। প্যারালাল সিনেমার ক্ষেত্রেও সাঁওতালদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়কে নিয়ে আর কোন ছবির কথা এই লেখকের জানা নেই। তবে একথা ঠিক, সামগ্রিক ভাবে না হলেও বিভিন্ন ছবিতে টুকরোভাবে সাঁওতালদের প্রসঙ্গ ও সাঁওতাল চরিত্র এসে থাকতে পারে। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের অরণ্যের দিনরাত্রি' ও 'আগন্তুক' ছবির কথা। ‘অরণ্যের দিনরাত্রি' ছবিতে একটি সাঁওতাল রমণীকে আমরা দেখেছি, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে যে ছিল হাসিখুশি, সহজ সরল। দারিদ্রের সঙ্গে বসবাসে অভ্যস্ত এই রমণীটি কখনই একসাথে অনেকগুলি টাকা দেখে নি। স্বভাবতই টাকার প্রতি তার একটা আকর্ষণীয় মোহ লক্ষ্য করা গেছে। শুধু তাই নয়, টাকার মোহে শহুরে বাবুর কাছে নিজের দেহকে বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যেও তার সঙ্কোচ বা দ্বিধা নেই। হয়তো সামাজিক ভব্যতা বা মান-সম্মান রক্ষার্থে শহুরে বাবু সাঁওতাল সম্প্রদায় লোকের কাছে আক্রান্ত হয়। নিঃসন্দেহে সত্যজিৎবাবু এখানে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নিজস্ব শৈল্পিক মহিমায় ফুটিয়ে তুলেছেন। সাঁওতাল রমণীর ঐ চরিত্রটিতে অসাধারণ অভিনয় করেছেন বোম্বাই এর প্রথিতযশা অভিনেত্রী সিম্মি গেরাওয়াল। সত্যজিৎ রায়ের অপর ছবি 'আগন্তুক' যা তাঁর জীবনের শেষ ছবি। এই ছবিতে উৎপল দত্তের মুখ দিয়ে সত্যজিৎ বাবু সাঁওতালদের সম্পর্কে 

মূল্যবান মন্তব্য করেছেন। মন্তব্যটি এইরকম—ভারতের আদিম অধিবাসীরা হচ্ছে কোল সম্প্রদায়ের মানুষ। সাঁওতালরা তাদেরই সমগোত্রিয়। এদেরও নিজস্ব সামাজিক কাঠামো, সংস্কৃতি ও ভাষা রয়েছে। এরাও ইংরাজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিল। সত্যজিৎ বাবুর এহেন ধন্যাত্মক মন্তব্য থেকে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বেঁচে থাকলে পরবর্তী সময়ে সত্যজিৎবাবু সাঁওতালদের নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবির কথা ভাবতেন। হতে পারত তা সাঁওতালী ভাষায়। যাইহোক, যা হয়নি তা নিয়ে আলোচনা নিষ্প্রয়োজন। আশির দশকে সাঁওতালদের নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি তৈরীর উদ্যোগ লক্ষ্য করা গেছে। যদিও বাস্তবায়িত হয় নি। সাঁওতাল পটভূমিকায় একটি ছবি তৈরীর কথা তৎকালীন সংবাদপত্র থেকে পাওয়া গেছে। যাতে সিধুর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত যশস্বী অভিনেতা ওম পুরীকে নির্বাচন করা হয়েছিল। প্রসঙ্গতঃ, আরেকটি প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। শৈবাল মিত্রের কাহিনী অবলম্বনে সমরেশ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত তরণী পাহাড়ে বসন্ত' ছবির কথা। ছবিটিতে গ্রামীণ আদিবাসীদের বিশেষ করে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের উপর অবিচার ও তার প্রতি জেহাদ ঘোষণার কথা বলা হয়েছিল। মমতাশঙ্কর, রাজেন তরফদার, জোছন দস্তিদার, অতনু রায় প্রমুখদের পাশাপাশি একটি দুধর্ষ সাঁওতাল যুবকের চরিত্রে পরিমল হেমব্রমকে পাওয়া যেত। দুঃখের বিষয়, উপরোক্ত দুটি ছবিই দর্শকের দরবারে পৌঁছাতে পারেনি। এছাড়াও সাঁওতালদের জীবনালেখ্য নিয়ে ছবি তৈরীর জন্য বহু প্রচেষ্টা হয়ে থাকতে পারে। যা এই লেখকের জানা নেই।

এবার আসা যাক, টেলিফিল্ম এবং টেলি সিরিয়াল প্রসঙ্গে। এ ক্ষেত্রেও টুকরো টুকরো ভাবে আদিবাসীদের আমরা পেয়েছি। হরিজন সম্প্রদায়কে নিয়ে সত্যজিৎ রায়ের টেলিফিল্ম ‘সদ্‌গতি’–র কথা তো আমরা অনেকেই জানি। মুন্ডা আদিবাসীদের নিয়ে ‘সুমী' নামে একটি টেলিফিল্মের কথা জানা যায় যা দূরদর্শনের জাতীয় কার্যক্রমে টেলিকাস্ট করা হয়। এও জানা যায় ছবিটির সঙ্গে রাঁচী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য্য ও প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ রামদয়াল মুন্ডা জড়িত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে আর একটি টেলিফিল্মের নাম পাওয়া যায়। সত্তর দশকের গোড়ার দিকে মুন্ডারী ভাষায় তৈরী এই ছবির নাম 'বিরসা মুন্ডা'। স্বাধীনতা সংগ্রামী বিরসা মুন্ডার জীবন কাহিনী নিয়ে তৈরী এই টেলিফিল্মের প্রস্তুত কর্তা মিস্টার হেমব্রম রিচার্ড। ইনি রাঁচীর লোক এবং মুন্ডা সম্প্রদায় ভুক্ত আদিবাসী। জানা যায়, ১৯৭৩ সালে সাঁওতাল পরগণার পাকুড়ে অনুষ্ঠিত ইতিহাস বিষয়ক এক সেমিনারে এই ছবিটি প্রদর্শিত হয়। উচ্চ প্রশংসিতও হয়। অনেকে বলেন, খেরওয়াল গ্রুপ অফ ল্যাঙ্গুয়েজ-এর এটিই প্রথম ছবি।

টেলি সিরিয়াল-এর ক্ষেত্রে উৎপলেন্দুর চক্রবর্তীর পরিচালনায় একটি সিরিয়াল (নাম মনে নেই) আমরা পেয়েছি যা কোলকাতা দুরদর্শন থেকে প্রচারিত হয়। এছাড়া, টেলিফিল্মে বা টেলিসিরিয়াল-এর ক্ষেত্রে আদিবাসীদের নিয়ে আর কোন প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয় নি। এক্ষেত্রে সাঁওতালরাও এগিয়ে আসেন নি। বর্তমান লেখক ব্যক্তি গত ভাবে সাঁওতালী ছবি নির্মানের ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন কিন্তু সর্বত্রই প্রযোজকরা বিমুখ হয়েছেন। কেননা, সাঁওতালী ছবি করলে মুনাফার অঙ্কে ব্যর্থতার চিত্র অনেকে দেখতে পেয়েছেন। পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবির ক্ষেত্রে অবশ্য সরকারীভাবে তেমন উদ্যোগ দেখা যায় নি। যাই হোক, এবার আসা যাক, ডকুমেন্টারি ফিল্মের প্রসঙ্গে। ভারতীয় তথ্যচিত্রের প্রেক্ষাপটে আদিবাসী প্রসঙ্গের উল্লেখ আশাব্যঞ্জক। তবে এক্ষেত্রও শুধুমাত্র সাঁওতালদের নিয়ে অর্থাৎ তাদের সামাজিক সাংস্কৃতিক বিষয় নিয়ে উল্লেখযোগ্য তথ্যচিত্র আমরা পাই না। এ প্রসঙ্গে প্রথমে উল্লেখ্য সত্তর দশকের দ্বিতীয়ার্ধে সাঁওতাল বিদ্রোহের পটভূমিকায় একটি ডকুমেন্টারী ফিল্ম পাওয়া গিয়েছিল। সম্ভবতঃ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তত্ত্বাবধানে তৈরী হওয়া এই তথ্য চিত্রটি নির্মাণ করেন মৃণাল গুপ্ত। এটি তৎকালীন বিদগ্ধ মহলে প্রচণ্ড রকম আলোড়ন তুলেছিল। তথ্যচিত্রে ব্যবহৃত সংলাপ 'বিশ বোল বাবু, বিশ বোল.....' তৎকালীন বিভিন্ন সংবাদপত্রের পাতায় বড় বড় অক্ষরে ছাপা হয়েছিল। সাঁওতাল বিদ্রোহের পটভূমিকা প্রসঙ্গে এই তথ্যচিত্রে বলা হয়েছে মহাজনের কাছে ধার নিলে তা আর কখনই শোধ হত না। চাষী পরিশোধের উদ্দেশ্যে ধান নিয়ে এলে তাকে বলা হত ধার শোধের জন্য বিশ সের' ধান দিতে হবে। নিরক্ষর চাষী (সাঁওতাল) মহাজনের প্যাঁচ বুঝতে পারত না। ধান মাপা শুরু হত। মহাজন চেয়ারে বসে ধান মাপার হিসেব করতো এভাবে—'এক সে.... দু সের..... পাঁচ সের..... বারো সে...... আঠারো সের... পনের সে..... সাত সের......।' অশিক্ষিত চাষী কান পেতে শুনত কখন মহাজন “বিশ” শব্দটি বলবে। কেননা, তাহলেই তার 'বিশ সের' ধান দেওয়া হয়ে যাবে। কিন্তু মহাজন কখনই 'বিশ' শব্দটি উচ্চারণ করত না। ফলে 'বিশ' না হতেই ধান শেষ হয়ে যেত। তখন চাষী নিরুপায় হয়ে মহাজনের পায়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলত, “বিশ বোল বাবু, একবার বিশ বোল......।” এই তথ্যচিত্রে মৃণালবাবুর মুন্সিয়ানার পরিচয় আমরা পরিচয় পেয়েছি।আশির দশকে টুকরো ভাবে সাঁওতালদের সাংস্কৃতিক বিষয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণের প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেলেও সাড়া জাগানো তথ্যচিত্র আমরা পাইনি। নব্বই-এর দশকের শেষ দিকে আরো একটি তথ্য চিত্র আমরা পেলাম। শঙ্কর রক্ষিতের ‘খেরওয়াল পারাব’(পরব!)। সাঁওতালদের ধর্মীয় আচারানুষ্ঠান সম্পর্কিত এই তথ্যচিত্রটি ১৯৯৯ সালে জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। এই ছবির বিশেষতঃ হল এর ধারাভাষ্য ছিল 

সাঁওতালিতে। আশির দশকে সম্ভবতঃ ১৯৮৬ সালে ফিল্ম ডিভিশনের প্রযোজনায় প্রথম একটি এক ঘন্টার ডকুফিচার তৈরী হয় যেটাতে ছবির ৮০ ভাগ সংলাপ ছিল সাঁওতালীতে বাকী ২০ ভাগ বাংলায়। তাও প্রয়োজনের তাগিদে। যেমন, ডাক্তার বা বি.ডি.ও.-এর কথোপকথনে। 'মোহমুক্তি' নামের এই ছবিটি সাঁওতালীতে অনুবাদ করেন হরপ্রসাদ মুরমু। এতে অভিনয় করেন রত্না সরকার, পরিবল হেমব্রম, শিলাবতী মুরমু, অনিল দে, হরপ্রসাদ মুরমু, অঞ্জলি হাঁসদা প্রমুখ।

সাঁওতালী পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের চিন্তাভাবনা মূলতঃ শুরু হয় আশির দশকে। বেশ কিছু উদ্যমী সাঁওতাল যুবক নিজস্ব ভাষায় ফিচার ফিল্ম তৈরীর ভাবনা নিয়ে এগিয়ে এলেও প্রযোজকের অভাবে তা বাস্তবায়িত করতে পারে নি। আগেই বলেছি অসাঁওতাল প্রযোজকগণ লাভক্ষতির হিসেব যতটা বোঝেন, উন্নয়নমুখী একটা ভাষায় (সাঁওতালী) ফিল্ম তৈরীর গুরুত্ব ততটা বোঝেন না। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মধ্যে এত টাকা ইনভেস্ট করার মত লোকের অভাব এখনও রয়েছে। সরকারের তরফ থেকেও ধন্যাত্মক পদক্ষেপ পাওয়া যায় নি। ফলে যে সমস্ত উদ্যমী সাঁওতাল ফিচার ফিল্মের স্বপ্ন দেখতেন তাঁরা হতাশ হয়ে শেষ পর্যন্ত ভিডিও ফিল্মের দিকে ঝুঁকে পড়েন। বলা যেতে পারে, আশির দশক হল সাঁওতালী ভিডিও ফিল্মের (ফিচার) উল্লেখযোগ্য সময়। সারা বাংলা, বিহার (বর্তমানে ঝাড়খন্ড) উড়িষ্যা জুড়ে সাঁওতালী ভিডিও ফিল্ম তৈরীর উন্মাদনা দেখা যায়। অনেক সাঁওতাল যুবক নিজেদের খরচে এই সমস্ত ফিল্ম তৈরী করেন। কয়েকটি ভিডিও ফিল্মের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে-

১। 'বাপ্পা' পরিচালনায় পীরীউ হেমব্রাম।

2  বয়হামায়া’— পরিচালনায় দশরথ হাঁসদা।

এঁরা দুজনেই বর্তমান ঝাড়খন্ডের বাসিন্দা। পশ্চিমবঙ্গের সাঁওতালরাও পিছিয়ে থাকে নি। যেমন -‘মায়া সুতীম’ এবং ‘সুমী (রূপচাঁদ হেমব্রম-এর কাহিনী অবলম্বনে) পরিচালনা করেন গৌরচন্দ্র মুরমু। 'পারসি খাতির' পরিচালনা করেন রবিলাল টুডু। ভি.ডি.ও. ফিল্ম নির্মাণের ক্ষেত্রে ঈশ্বর সরেনকেও পাওয়া গেছে। এছাড়াও উড়িষ্যার কিছু উদ্যোগী যুবক সাঁওতালী ভি.ডি.ও ফিল্মের ক্ষেত্রে সফল অবতরণ করেন।

ভিডিও ফিল্ম প্রসঙ্গের আলোচনায় প্রেম মান্ডীর নামও উল্লেখনীয়। তাঁর পরিচালনায় দু'খানি ভিডিও ফিল্মের কথা জানা যায়। এগুলি হল –অনলিয়ী হারকেত ও খান্ডা মিরু। কাহিনীকার হলেন প্রখ্যাত সাঁওতালী যাত্রাভিনেতা ও নাট্যকার ঈশ্বর সবেন।

নববই-এর দশকে তেমন উল্লেখযোগ্য ভিডিও ফিল্ম নজরে আসে নি।

অর্থের অভাব সত্ত্বেও এরই মাঝে ফিচার ফিল্ম নির্মাণের প্রচেষ্টা যে হয় নি তা নয়, তবে কোথাও সাফল্য অর্জন করতে পারে নি। তবু কিছু পরিশ্রমী, উদ্যোমী সাঁওতাল যুবক ফিচার ফিল্ম নির্মাণের জন্য অক্লান্ত প্রয়াস করেন। আর এভাবেই তাঁদের সাহসী পদক্ষেপের বিনিময়ে আমরা পেলাম প্রথম সাঁওতালী বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র। সত্যই ভাবা যায় না এই প্রচন্ড অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নানান সংকটপূর্ণ পরিবেশের মধ্যেও সাঁওতালী বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের জন্ম হল বা মুক্তি পেল ২০ মে ২০০১ সালে। 'চাদো লিখন' নামে এই বাণিজ্যি ছবিটি আদিবাসী তথা সাঁওতাল সম্প্রদায়ের কাছে এক বিরাট নজির সৃষ্টি করল। প্রচারিত হ্যান্ডবিল অনুযায়ী এই “চাঁদো লিখন” বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের প্রযোজক ও নায়ক হলেন প্রেম মার্ডি। নায়িকা হলেন মালহো মার্ডি। কাহিনীকার সনৎ শানু মুরমু। পরিচালক দশরথ হাঁসদা। সঙ্গীত পরিচালক পি. এন. কালুনডিয়া । ছবিটির ক্যামেরাম্যান হলেন বৈদ্যনাথ বসাক। সম্পাদনা করেছেন রতন সরদার। চাঁদো লিখন ছবির জন্য গান লিখেছেন দাশমত হেমব্রম এবং নেপথ্য সঙ্গীত শিল্পীরা হলেন সমায় হাঁসদা ও সন্ধ্যা কুমারী। রূপসজ্জায় ছিলেন আকতার খান। নৃত্য পরিচালক হলেন বাবলু মুখী।

‘চাঁদো লিখন' ছবিটি দেখার সৌভাগ্য না হওয়ায় ছবি প্রসঙ্গে কিছু বলা বাতুলতা মাত্র। ধন্যাত্মক মনোভাব নিয়ে যদি বলা হয়, এ ছবিতে সাঁওতালী পরিচিতির অভাব রয়েছে, সাঁওতাল সংস্কৃতির সঠিক চিত্রায়ণ সম্ভব হয় নি। ভাষাটুকু বাদ দিলে সম্পূর্ণ ছবি বোম্বাই মার্কা বাণিজ্যিক ছবি। ছবিটির সঙ্গে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ধন্যাত্মক মনোভাব, আবেগ, নিজস্বতা বোধ ইত্যাদি জড়িয়ে রয়েছে। সুতরাং ভালোমন্দের বিচার আপাততঃ তোলা থাক পরবর্তী চলচ্চিত্রের জন্য। সাঁওতাল সম্প্রদায় অপেক্ষায় রইল। পরিশেষে, একথা বলো হয়, প্রথম সাঁওতালী ভাষার ছবি হিসেবে 'চাঁদো লিখন' কতটা যুক্তিযুক্ত তা বিদগ্ধমহল বিচার করুন। কেননা 'মোহমুক্তি' ছবিটিতে প্রথম সাঁওতালী সংলাপ ব্যবহার করা হয়। ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপটে সাঁওতালী চলচ্চিত্র নিজস্ব স্থান করে নেবে এ আশা রাখা যেতে পারে।



Post a Comment

0 Comments